ডাচ এফএমও থেকে ৬০ কোটি টাকায় ওমেরা-র ১২.৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নিচ্ছে এমজেএল বাংলাদেশ

দেশের বৃহত্তম লুব্রিকেন্ট কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশ ডাচ উন্নয়ন ব্যাংক এফএমও থেকে ওমেরা পেট্রোলিয়ামের ১২.৫ শতাংশ শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটিতে তাদের মালিকানা আরও শক্তিশালী করতে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানটি এফএমও থেকে ওমেরা পেট্রোলিয়ামের ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৭টি শেয়ার কিনে নেবে। প্রতিটি শেয়ারের দর পড়বে ২১.৮০ টাকা। অর্থাৎ এফএমওর অংশীদারত্ব পেতে ৬০.৪৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমজেএল।
ডাচ ঋণদাতা ব্যাংকটি ২০১৫ সালে প্রথমে শেয়ারপ্রতি ১৮ টাকা দরে ওমেরায় বিনিয়োগ করেছিল।
বুধবার এমজেএল বাংলাদেশের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এই ঘোষণার পর ডিএসইতে এমজেএল বাংলাদেশের শেয়ারের দাম ১.৮১ শতাংশ বেড়ে ৯৫.৭০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এমজেএল বাংলাদেশের ৬২.৪৯ শতাংশ মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওমেরা পেট্রোলিয়াম। দেশের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য ২০১৫ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিবি এনার্জি (এশিয়া) প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এবং ডাচ এফএমও ছিল ওমেরা পেট্রোলিয়ামে প্রধান বিদেশি বিনিয়োগকারী। এমারায় প্রতিষ্ঠান দুটির যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১২.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ইস্ট কোস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গঠিত কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি। ১৯৯৮ সালে মোবিল কর্পোরেশন—যা পরবর্তীতে এক্সন মবিল কর্পোরেশন নাম নেয়—যমুনা অয়েল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে মোবিল যমুনা লুব্রিকেন্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়।
এমজেএল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজম জে চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এফএমও উন্নয়নশীল ও উদীয়মান বাজারে টেকসই বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা দেয়। আর সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা ওমেরায় বিনিয়োগ করেছিল।
তবে এফএমও দীর্ঘমেয়াদে এসব বাজারে থাকে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজম চৌধুরী আরও বলেন, 'এফএমও যখন দেখে কোনো কোম্পানি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে, তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য বাজারে পুনঃবিনিয়োগ করে।'
ওমেরা এলপিজি আমদানি, মজুত, বোতলজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত। এই কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানিটি একটি এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এতে সারা দেশে তাদের শক্তিশালী বিতরণ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
২০১৯ সালে ওমেরা পেট্রোলিয়াম তাদের এলপিজি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে ২৩৮.৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের আইপিও অনুমোদন করেনি।
ওমেরায় এফএমও-এর ভূমিকা
এফএমওর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০১৫ সালে, ব্যাংকটি বাংলাদেশে চারটি এলপিজি প্ল্যান্টের উন্নয়ন ও নির্মাণে অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ করেছে। প্ল্যান্টগুলোর মোট বার্ষিক সক্ষমতা ১ লাখ টন।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার। মূল টার্মিনাল, তিনটি স্যাটেলাইট প্ল্যান্ট ও বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণে এই অর্থ ব্যয় হয়।
মূল টার্মিনালটি মোংলায়, দেশের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দরের কাছে। ঢাকা, বগুড়া ও চট্টগ্রামের তিনটি স্যাটেলাইট বোতলজাতকরণ প্ল্যান্টে পুনঃবিতরণ করার আগে সেখানে এলপিজি সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে এলপিজি ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
২০১৮ সালে ওমেরার মূলধন বৃদ্ধিতে অংশ নেয় এফএমও। এ অর্থ ওমেরার আরও সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হয়েছিল।
এমজেএলের অর্ধ-বার্ষিক আয় ২৮ শতাংশ ও মুনাফা ৩০ শতাংশ বেড়েছে
আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এমজেএল বাংলাদেশের সম্মিলিত নিট আয় ২৮ শতাংশ এবং নিট মুনাফা ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে প্রতিষ্ঠানটির একীভূত নিট আয় বেড়ে ২ হাজার ২৮৯.৮৭ কোটি টাকা ও আর নিট মুনাফা বেড়ে ২১৭.৪৩ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে যথাক্রমে ১ হাজার ৭৮৭.০৬ কোটি টাকা ও ১৬৭.০৫ কোটি টাকা ছিল।
ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৬.৬৬ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫.০১ টাকা।
এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এমজেএল বাংলাদেশের নিট আয় ২০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১২২.৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং নিট মুনাফা ৩৬ শতাংশ বেড়ে পেয়ে ১০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে যথাক্রমে ৯৩৬.৬১ কোটি টাকা এবং ৭৬.৩৪ কোটি টাকা ছিল।
মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে এমজেএল বাংলাদেশ তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাদের সহায়ক এবং সহযোগী কোম্পানিগুলোর মুনাফার কারণে সম্মিলিত মুনাফা সামান্য বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ২৭১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ৫২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।