কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দাম কমলো ৫-৬ টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনস অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)-এর সদস্য ব্যাংকগুলোর সভার একদিনের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ৫-৬ টাকা কমে ১১৮-১১৯ টাকায় নেমে এসেছে।
ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো রোববার সকাল থেকে রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় কম দামে ডলার বিক্রির অফার দিচ্ছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা রেটে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার এবিবি এবং বাফেদার সদস্য ২১ ব্যাংকের এমডিদের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সঙ্গে সভায় সরকারি ও ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ফান্ড থেকে প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা রেটে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি রেমিট্যান্স নিয়ে আসা ব্যাংকগুলো গত বৃহস্পতিবার কী দামে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করেছে, তা জানতে চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের ডলারের কেনা দাম এবং ইমপোর্ট সেটেলমেন্টে ডলার বিক্রির দাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করছে। তবে অনেক ব্যাংকই এসব ডলারের দাম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ভুল তথ্য দিচ্ছে। তাই, কোন কোন ব্যাংক বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই ব্যাংকগুলো থেকে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেশ কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউজের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে ডলার বিক্রির জন্য অফার করছে। তবে এই অফারগুলো আসছে দুটি ভাগে; প্রথমত, অনেক রেমিটার আছেন, যারা এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে সরাসরি আমাদের ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠান। এসব রেমিট্যান্সের ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে আমাদের কাছে ১১৭ টাকা করে রেট চাওয়া হচ্ছে।"
"দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যাংকের রেমিট্যান্সের ডলার বেশি প্রয়োজন হলে অন্য ব্যাংকের রেমিট্যান্স তাদের কাছে বিক্রি করছে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। এক্ষেত্রে ১১৮-১১৯ টাকা পর্যন্ত রেট চাচ্ছে তারা। এ প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্স কিনলে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) লেনদেনের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকের রেমিটারদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে," বলেন তিনি।
রেমিট্যান্সের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা না গেলে সেটি মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিতে পারে মন্তব্য করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি টিবিএসকে বলেন, "বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো এক ব্যাংকে আসা রেমিট্যান্স অন্য ব্যাংকে বেশি দামে বিক্রি করছে। চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলোও এসব রেমিট্যান্স কিনছে। এরকম চলতে থাকলে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম আবার বেড়ে যেতে পারে।"
"কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে, একজন গ্রাহক যে ব্যাংকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যেন ওই ব্যাংকেই সে রেমিট্যান্স বিক্রি করে, সেটি নিশ্চিত করা। তাহলে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো রেমিট্যান্সের ডলারের বেশি রেট চার্জ করতে পারবে না," যোগ করেন তিনি।
রেমিট্যান্সের দাম কিছুটা কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করছে ব্যাংকগুলো। তারা বলছে, দেশের ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের সংকট কাটেনি। তবে কিছু ব্যাংকের অস্বাভাবিক আচরণ এবং এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর বেশি লাভ করার প্রবণতা থাকায় রেমিট্যান্সের ডলারের দাম গত সপ্তাহের শেষ দুইদিন অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল।
এবিবি, বাফেদার সিদ্ধান্ত
এবিবি ও বাফেদার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহে সর্বোচ্চ ১১০.৫০ টাকা রেট দিতে পারে।
বাফেদার নির্দেশনা অনুসরণ করলে, ব্যাংকগুলো নিজেদের তহবিল থেকে দেওয়া সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে সর্বোচ্চ ১১৩.২৬ টাকা রেটে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে পারবে। গ্রাহকেরা এরসঙ্গে সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ ১১৬ টাকা রেট পাবেন।
অবশ্য এসব ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিজেদের তহবিল থেকে দেওয়া প্রণোদনার খরচ নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। ইমপোর্ট সেটেলমেন্টে ডলারের রেট হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা।
এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছিলেন, "ব্যাংকগুলো আমাদের নিশ্চিত করেছে, বাফেদা নির্ধারিত রেটের বাইরে তারা ডলার কিনবে না।"
ব্যাংকগুলোকে নিজেদের তহবিল থেকে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণার পর ডলার মার্কেট অস্থিতিশীল হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "গত ছয় মাসে কিন্তু রেমিট্যান্সের ডলারের রেট খুব বেশি বাড়েনি। একেক ব্যাংক একেক রকম প্রণোদনা দেওয়ায় মার্কেট ডিস্টর্ট হচ্ছে, ডিসিপ্লিনটা নষ্ট হয়েছে।"
"এবিবি বা বাফেদা ডলারের যে রেটটি ঠিক করে দিয়েছে, সেটির বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো আমাদের সহায়তা চেয়েছে। কারণ এবিবি বা বাফেদা কেউই ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাই ডিসিপ্লিন এনশিওর করতে তাদের সহযোগিতা দরকার।"
"আমরা বলেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ সহায়তা করবে। কারণ, আমরা জানি খুব বেশি ব্যাংক বেশি রেটে ডলার কিনছে না," যোগ করেন তিনি।
কোনো ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনলেও ১১১ টাকা রেটের বেশি দাম নিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।