১০ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি
বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ২০১১ সালের ২৭.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩৮% বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৯১.৪৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
মঙ্গলবার প্রকাশিত 'ইন্টারন্যাশনাল ডেবট রিপোর্ট ২০২২' শিরোনামের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বৈদেশিক ঋণ এই একই সময়ে বেড়েছে ৮৩%, পাকিস্তানের বেড়েছে ১০১% এবং শ্রীলঙ্কার ১১৯%।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯৫.৮৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের মজুদ ছিল ৭৩.৫০ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২১ সালে দেশের দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ৭০.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগে ছিল ৬০.৪১ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের মধ্যে ৬২.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে পাবলিক সেক্টর।
এদিকে, ২০২০ সালে যেখানে আইএমএফ ক্রেডিট এবং এসডিআর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২.১১ বিলিয়ন ডলার; ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৩০ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে, স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ ২০২১ সালের শেষে ৬৫% বেড়ে হয়েছে ১৮.০৯ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগের বছর ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বিতরণের পরিমাণ ছিল ১০.২১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ১৩.৭৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়; এর মধ্যে ৯.৩৬ ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয় পাবলিক সেক্টরে।
আরো জানা গেছে, ২০২১ সালে দেশের লং-টার্ম প্রিন্সিপাল পেমেন্ট আগের বছরের তুলনায় ৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.২ বিলিয়ন ডলারে। এ বছর সুদের অর্থপ্রদান ২৬% বেড়ে হয়েছে ১.০৮ বিলিয়ন ডলার।
লং-টার্ম ইন্টারেস্ট পেমেন্টের ১.০৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে শুধুমাত্র পাবলিক সেক্টরই দিয়েছে ৯৮৫.৪ মিলিয়ন ডলার।
দেশের বৈদেশিক ঋণ থেকে রপ্তানির অনুপাত ২০২০ সালে ৫১.৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১৯০%; পরের বছর তা ১৮৩.৫% এ নেমে আসে। বৈদেশিক ঋণ থেকে রপ্তানি অনুপাত সাধারণত একটি নির্দিষ্ট দেশের ঋণের বোঝা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের সুদ প্রদানের হার বেড়েছে ৩৫ শতাংশ
কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে অতিরিক্ত ব্যয় এবং নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া খাদ্য আমদানির খরচ মেটাতে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলো বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর থেকে ঋণ নিয়েছে।
এ বছর দরিদ্র দেশগুলোর নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৬২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের উদ্বেগ, ঋণের সুদ মেটাতে গিয়ে ইতোমধ্যেই এই দেশগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সহায়তা, এবং অবকাঠামো বিনিয়োগ খাতে অর্থ টান পড়ছে।
সংস্থাটি বলছে, উচ্চ সুদহার, ম্যাচ্যুরিং ক্যাপিটাল এবং ঋণের চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের জন্য নির্ধারিত পেমেন্টগুলো আরও উচ্চতর হতে পারে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো যে ঋণ সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, তা ধীরে ধীরে তীব্রতর হচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, "ঋণ কমাতে, স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং পুনর্গঠন সহজতর করতে একটি বিস্তৃত পদ্ধতির প্রয়োজন; যাতে করে দেশগুলো আয়বর্ধক এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করে, এমন ব্যয়ের ওপর মনোযোগ দিতে পারে।"
"এ ধরনের উদ্যোগ ছাড়া অনেক দেশের সরকার আর্থিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হবে, এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের মুখে পড়বে," যোগ করেন তিনি।
২০২১ সালের শেষে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ঋণের স্টক ৫.৬ শতাংশ বেড়ে হয় ৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যারমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা- আইডিএ'র সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ ১ ট্রিলিয়ন ডলার।