এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে ১.৩২ বিলিয়ন পরিশোধ করা হবে সোমবার

আমদানি ব্যয় কমার পরও রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না। ডলার বিক্রির চাপে কমেই চলেছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। আগামী ৭ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)-র পেমেন্ট পরিশোধ করলে দেশের রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়নের কিছুটা বেশি থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের আমদানির বিল এসেছে ১.৩২ বিলিয়ন ডলার। যা আগামী ৭ নভেম্বর সোমবার পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার বিক্রির পর রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭২ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ এর আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আমদানিতে নানা শর্ত আনার পর দেশেও ওভারঅল আমদানি ও এশিয়ান দেশগুলো থেকে আমদানির পরিমাণ কমছে। গত জুলাই-আগস্ট মেয়াদে আকুর আমদানির বিল এসেছে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার। যার আগের মে-জুন মেয়াদে ছিল ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "আমরা মনে করছি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়বে। গত দুই মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় যেভাবে কমছে যে খুবই শংকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
তিনি বলেন, "গত চার মাসে পাঁচ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এভাবে আর কত বিক্রি করবে? রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে রেট ছেড়ে দিতে হবে। কঠোরভাবে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে।"
"সরকারের যেভাবে হোক আইএমএফএর সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণটা নেওয়া উচিত। তা নাহলে আগামী কমেকমাস এভাবে ডলার বিক্রি করতে করতে রিজার্ভ দাঁড়াবে ২২ বিলিয়ন ডলারে। যা দিয়ে একটি দেশ কোনভাবেই চলতে পারেনা।"
দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতির মধ্যে চলতি অর্থবছরের শুরুতে কিছুটা স্বস্তি এনেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্টে) রেটিম্যান্সের পরিমাণ ঊর্ধ্বমূখী ছিল। এই দুই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ বিলিয়নের বেশি।
তবে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) কর্তৃক রেমিট্যান্সের একক রেট আসার পর রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমতির দিকে আছে। সেপ্টেম্বরে রেটিম্যান্স এসেছে ১.৫৩ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে না। সরকারি আমদানি বাবদ যেগুলো খুবই প্রয়োজন সে দায় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করবে।"
এদিক চলমান ডলার সংকটের মধ্যে গত দুই মাস দেশের রপ্তানির পরিমাণও কমছে। অক্টোবরে গত বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৮৫%। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের অক্টোবরে দেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার।
ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রিজার্ভ থেকে ৫.১৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭.৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।
কমেছে আমদানি
দেশের ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর আমদানি এলসি খোলা নিষ্পত্তি কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়িদের এলসি ওপেনিং কমেছে ৩১.১৬%। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলেছে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৮.২৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি কম খুলেছে ২.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
জুনে ব্যবসায়িরা আমদানির জন্য এলসি খুলেছে ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৭০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে বলছে, চলতি বছরের জুন থেকে টানা এলসি ওপেনিং ও এলসি সেটেলমেন্ট কমছে।
এছাড়া চলতি বছরের জুনে এলসি সেটেলমেন্টের পরিমাণ ছিল ৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার। টানা তিন মাস কমতির ধারা সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত রয়েছে।
সেপ্টেম্বরে এসে এলসি সেটেলমেন্ট দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়ন ডলারে। আগস্টের তুলনায় সেটেলমেন্ট কমেছে ১.৩১ বিলিয়ন বা ১৮%।