চীনা সরকারের নতুন নিশানা বিলিওনিয়ার উদ্যোক্তা সান দাওয়ু

জ্যাক মা'র পর এবার চীনে সরকারি আক্রোশের শিকার হতে যাচ্ছেন আরেক স্পষ্টভাষী বিলিওনিয়ার ও উদ্যোক্তা সান দাওয়ু। বেইজিং এর ঠিক বাইরেই রয়েছে তার কৃষিভিত্তিক ব্যবসার সাম্রাজ্য যেখানে কাজ করেন প্রায় ৯০০০ কর্মী। শুধু তাই নয়, কর্মীদের পরিবারের থাকার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে রীতিমতো একটি কোম্পানি শহর তৈরি করে ফেলেছেন সান। বিনামূল্যে হাসপাতাল সেবা, বিদ্যালয়, খেলার স্টেডিয়াম পর্যন্ত রয়েছে সেখানে এবং বলাই বাহুল্য যে এর সবই সান দাওয়ু-এর নিজের নামে।
কিন্তু এই মুহুর্তে 'দাওয়ু এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড এনিমেল হাজবেন্ডারি গ্রুপ' সান এর হাত থেকে ছিটকে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই তাকে আদালতে হাজির হতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সান এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
গত এপ্রিলেই সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ মারামারিতে রূপ নিলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সান দাওয়ুর ২০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এদের অধিকাংশই ছিলেন সানের স্বজন এবং তারা প্রায় ছয় মাস ধরে ডিটেনশনে ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই অবৈধ খনন কাজ ও 'ঝগড়া উস্কে দেয়া'র অভিযোগ তুলে সানের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা আনা হয়েছে। কিন্তু সান সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বেশ কিছু বছর ধরেই ৬৭ বছর বয়সী বিত্তশালী সান দাওয়ু চীনের রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের সাহায্য ও সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে যে এখন তিনিই সেই তালিকার একজনে পরিণত হয়েছেন। কারণ তার সম্পত্তি আপাতত সরকারের হাতে। দাওয়ু প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর মুখ থেকেই শোনা যায়, দাওয়ুর প্রতিটি সম্পূরক প্রতিষ্ঠানই এখন স্থানীয় একেকটি সরকারের পরিচালনার অধীনে।
সানের গ্রেপ্তার হওয়াই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চীনা সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় সর্বশেষ সংযোজন। সানের মামলাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চীনের বাণিজ্যিক ও আইনি চক্র। এর থেকে বোঝা যাবে যে বাণিজ্যিক বিবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষত জমির মালিকানায় ঠিক কি পরিমাণ আইনি সুবিধা পাওয়া যায়।
তবে বেইজিংভিত্তিক কর্পোরেট আইনজীবি উ ড্যানহং এর মতে, সানের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। কারণ শুধুমাত্র এই একটি উপায়েই সরকার তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। পরিকল্পিত অপরাধ দমনের নামে তিন বছর মেয়াদী একটি ক্যাম্পেইনের আওতায় চীনা সরকার ইতিমধ্যেই হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের জেলে পুরেছে।
বিগত চার বছর ধরেই বেইজিং দেশের বড় বড় বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা কমাতে তাদের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এ যাবত তারা প্রধান একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তাকে জেলে দিয়েছে, একটি ক্ষমতাধর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ফাঁসি দিয়েছে এবং বহু রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে তাদের বৈদেশিক সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেছে।
চীনের শীর্ষ কম্যুনিস্ট পার্টি একাডেমির সাবেক অধ্যাপক চাই শিয়া বলেন, 'রাজনৈতিক ক্ষমতাই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। চীনা উদ্যোক্তাদের যদি সফল হতে হয়, তাদেরকে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে।'
ইউটোপিয়ান ভূস্বামী সান দাওয়ু প্লেটোর 'দার্শনিক রাজা' তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি নিজের মত করে চলতে ভালোবাসেন। হেবেই প্রদেশে নিজের জন্মস্থানে ১৯৮৪ সালে তিনি দাওয়ু গ্রুপের গোড়াপত্তন করেন। পশুখাদ্য ও সারের ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত রাজস্ব দিয়ে মূলত গ্রামোন্নয়ন করা তার একটি লক্ষ্য। সান সবসময় সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে জোর গলায় কথা বলতেন এবং মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবিদের বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সহায়তা ও আশ্রয় দিয়েছেন। এইসব কারণেই তিনি চীনা সরকারের একটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সানের ভাগ্য এখন স্থানীয় সরকারের হাতের মুঠোয়।
গত মাসে নিজের কর্মচারীকে লেখা এক চিঠিতে সান লিখেছেন, 'এখন আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত...আমাকে এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে আর লড়াই করতে হবে নিজের ও পরিবারের জন্য।'
- সূত্র- এনপিআর