ডলারের দাম বৃদ্ধিতে এমআরটি-১ প্রকল্পে বিদেশি ঋণের ব্যয় বাড়ছে ৩৬,১৯৯ কোটি টাকা

বাংলাদেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-১-এর ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ছে। ২০১৯ সালের পর থেকে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের উল্লেখযোগ্য দরপতনের কারণে প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণের অংশ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে ঢাকা র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক ঋণের অংশে ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা বা প্রায় ৯২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। অনুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাবে বৈদেশিক ঋণ ধরা আছে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। তা বেড়ে এখন দাঁড়াতে পারে ৭৫ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকায়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে মুদ্রা বিনিময় হার ৪২ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে এক ডলার ছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা, তা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নির্মাণসামগ্রীর দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম মজুরি, পরিবহন ও লজিস্টিক খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে এমআরটি-১ প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তারা বলেন, "এরসঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও আয়কর যোগ হবে, যা সরকারি তহবিল থেকেই দিতে হবে।"
এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ৫৩ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জাইকা) থেকে ঋণ রয়েছে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের অনুমোদিত বাস্তবায়ন মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত।
ডিএমটিসিএল আরও জানায়, শুধু মুদ্রার দরপতন নয়, করোনাভাইরাস মহামারি, নকশা পরিবর্তন এবং ঠিকাদারদের উচ্চদরও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ। ইতোমধ্যে টেন্ডার হওয়া ১২টি নির্মাণ প্যাকেজের মধ্যে ৮টির জন্য ঠিকাদারদের প্রস্তাব প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূঁইয়া ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "সব টেন্ডার সম্পন্ন হলে খরচ কিছুটা সমন্বয় হতে পারে। অবশিষ্ট ৪টি দরপত্র এখনো উন্মুক্ত হয়নি। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে ব্যয় কমেও যেতে পারে। তবে বর্তমানে প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় ১,৫৫৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ২,৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।"
তিনি আরও জানান, ভূমি অধিগ্রহণ—যা ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ—এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এছাড়া একটি সিভিল ওয়ার্কস প্যাকেজ দর না পাওয়ায় পুনরায় টেন্ডার করতে হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এখনই সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া হলে তা চূড়ান্ত ব্যয়কে প্রতিফলিত করবে না। পরবর্তীতে আবারও সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, যা প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন সংক্রান্ত নির্দেশিকা (জুন ২০২২) অনুযায়ী, বারবার প্রকল্প সংশোধনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি সংশোধন করা যাবে না বলে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনকে জানানো হয়েছে, এ পর্যায়ে সংশোধিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) জমা দেওয়া ঠিক সিদ্ধান্ত হবে না, কারণ প্রকল্প ব্যয় এখনও পরিবর্তন হতে পারে।
তাই ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, এখনই সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে না। বরং সব প্যাকেজের চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত হওয়ার পর একটি পূর্ণাঙ্গ সংশোধিত ডিপিপি জমা দেওয়া হবে।