হান্টাভাইরাসে স্ত্রীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর মারা যান অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান

অস্কারজয়ী অভিনেতা জিন হ্যাকম্যানের মৃত্যুর কারণে সম্পর্কে শুক্রবার (৭ মার্চ) এক হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, হৃদরোগ এবং আলঝেইমার জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পেটে খাবার না থাকায় মৃত্যুবরণ করেছেন হ্যাকম্যান। তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে বিরল হান্টাভাইরাস রোগ আক্রান্ত হয়ে তার স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়া সান্তা ফে-তে তাদের বাড়িতে মারা যান।
২৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে নিজেদের বাড়ি থেকে জিন হ্যাকম্যান ও বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ এবং তাদের একটি কুকুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত এক কর্মী জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করলে এই ঘটনা সামনে আসে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক পরিস্থিতি উদঘাটন করে এবং জানায়, আরাকাওয়া সম্ভবত ১১ ফেব্রুয়ারি বাসায় হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। এটি একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক রোগ, যা সংক্রমিত ইঁদুরের মল থেকে ছড়ায়।
এডভান্সড স্টেজের আলঝেইমারে আক্রান্ত হ্যাকম্যান সম্ভবত জানতেন না, তার স্ত্রী মারা গেছেন।
প্রধান মেডিক্যাল তদন্তকারী ড. হিথার জ্যারেল বলেন, 'তার (হ্যাকম্যান) শারীরিক অবস্থা খুবই বাজে ছিল। তার হৃদরোগ বেশ গুরুতর ছিল এবং আমি মনে করি, অবশেষে সেটাই তার মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সম্ভবত, তিনি জানতেন না যে তিনি (বেটসি) মারা গেছেন।'
সান্তা ফে কাউন্টি শেরিফ আদান মেনডোজা বলেছেন, আরাকাওয়া বাসা থেকে শেষবার ১১ ফেব্রুয়ারি কিছু কাজ ও কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছিলেন। তিনি একটি ফার্মেসি, পোষা প্রাণীর দোকান এবং মুদির দোকানে গিয়েছিলেন। তারপর সেদিন সন্ধ্যায় তিনি বাসায় ফিরে আসেন।
সেদিন আরাকাওয়া ইমেইলের উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দেন। দম্পতির মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড এখনও বিশ্লেষণ করা হয়নি।
ড. জ্যারেল বলেছেন, হ্যাকম্যানের পেসমেকারের শেষ সংকেত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেখাচ্ছিল। সেটি একটি অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন নির্দেশ করে, সেদিন তিনি সম্ভবত মারা গিয়েছিলেন।
হ্যাকম্যানের মরদেহ বাড়ির প্রবেশপথে পাওয়া যায় এবং আরাকাওয়াকে একটি বাথরুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের দেহে কিছুটা মমিকরণের লক্ষণ ছিল, যা তাদের শরীরের ধরন এবং সান্তা ফের বিশেষভাবে শুষ্ক বায়ু ও প্রায় ৭ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় থাকার কারণে ঘটেছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হ্যাকম্যান আলঝেইমারের কারণে মারাত্মকভাবে অক্ষম ছিলেন এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরবর্তী সপ্তাহে তা মোকাবেলা করতে পারেননি বা সাহায্যও চাইতে পারেননি।
ভার্জিনিয়ার ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ড. ভিক্টর উইডন বলেন, 'তাদের ব্যাখ্যা পরিষ্কার এবং যুক্তিযুক্ত। আমি বিশ্বাস করি, তারা আসল ঘটনা আবিষ্কার করেছে।'
বেশিরভাগ বয়স্ক মার্কিন আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি বাসায় অবস্থান করেন এবং পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে সেবা পান।
হ্যান্টাভাইরাস সাধারণত বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ছড়ায়, বিশেষ করে বাসায় বা ছাউনিতে ইঁদুরের মলের সংস্পর্শে আসার কারণে। এটি নিউ মেক্সিকোতে এ বছর প্রথম হান্টাভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা।