দ্বিতীয় প্রান্তে উৎপাদনে গতি ফেরায় চীনের প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বেড়েছে

উৎপাদন ও ভোক্তা চাহিদার ইতিবাচক প্রভাবে এপ্রিল-জুন প্রান্তে চীনের অর্থনীতি ১ দশমিক ১ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তের ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সংকোচনকে কাটিয়ে উঠেই এ গতি ফিরেছে- বলে অনুমান করছেন, জাপানের নিক্কেই এবং নিক্কেই কুইক নিউজের পরিচালিত জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দ্বিতীয় প্রান্তের ফলাফলে চীনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ সংকোচন বা সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রসারণ অর্জন করতে পারে। জরিপে অংশ নেওয়া ২৬ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ২২ জনই নানা মাত্রার প্রবৃদ্ধির পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন।
চীনের সিটিক ব্যাংক ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা কুন লিয়াও ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা অনুমান করছেন। তার মতে, ''আলোচিত সময়ে ভোক্তা চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে উৎপাদন কার্যক্রম। অন্যদিকে, সরকারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং মুদ্রানীতি অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি সঞ্চার করতেও সমর্থ হয়।''
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের মুখ্য অর্থনীতিবিদ টমি উ' অবশ্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারণা করছেন। খবর নিক্কেই এশিয়ান রিভ্যিউয়ের।
''দ্বিতীয় প্রান্ত থেকে চীনের অর্থনীতি উত্তরণ শুরু করবে বলে আমরা আশা করছি। মূলত শিল্পোৎপাদন এবং বিনিয়োগের ইতিবাচক অবস্থানের কারণেই এ সাফল্য আসবে।''
ইতোপূর্বে, দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চালুর মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্ফোরক পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অনেক দেশের আগেই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় চীন। যার ফলে সবার আগে উন্মুক্ত করা সম্ভব হয় দেশটির অর্থনীতিকে। মূলত, লকডাউনের কারণেই চলতি বছরের প্রথম প্রান্তে চীনা অর্থনীতি সংকোচনের মুখে পড়েছিল।
এএক্সএ ইনভেস্ট ম্যানেজার্স-এর এশিয়ার উদীয়মান বাজার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক কর্মকর্তা এইডান ইয়াও মনে করেন, ''শিল্পোৎপাদন, স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ এবং সেবা খাতের বিকাশ- এই তিনটি খাতেই গত মে থেকে প্রবৃদ্ধি অর্জন শুরু হয়।''
''কাঁচামালের দর বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির বিক্রয় আগের অবস্থানে ফিরে আসার প্রবণতা- আলোচিত সময়ে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিকে নির্দেশ করে'' বলছিলেন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অর্থনীতিবিদ- চেং শি।
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, এখন থেকে প্রতিটি প্রান্তেই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
তবে খাড়া পতনের পর এখনই রেখাচিত্রে চীনের অর্থনীতি 'ভি' আকৃতির উত্থানের পথে নেই। দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সময়ে চলতি বছরের গড় প্রবৃদ্ধি অনুমান করা হচ্ছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত মার্চে করা এক জরিপে যা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন।
এবিএন আমরো ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আর্জেন ভ্যান ডিজুইজেন বলেন, ''২০২০ সালে আমাদের চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক শূন্য শতাংশ করা হবে।'' চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিকুল হাওয়া বইতে শুরু করায় পূর্বাভাস কমানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে অনেকাংশে একমত পোষণ করা জুলিয়াস বায়ারের অর্থনীতিবিদ সোফি আলটারম্যাট বৈশ্বিক মন্দাভাবকে এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
'আগামীদিনে রপ্তানিখাতে চীন ব্যাপক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে বলেই আমরা ধারণা করছি' বলেন আলটারম্যাট।
অর্থনীতি রাতারাতি উত্তরণের পথে আরেকটি বিষয় ভীতি সম্পর্কিত। যার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী আস্থা পাচ্ছেন না।
হংকংভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা- মিতশুবিশি ইউএফযে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের পরিচালক ফান জিয়াওচেন এমন কথাই জানিয়েছেন।
তার মতে, এখনও চীনে দ্বিতীয় দফার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্যোগ রয়েছে। ব্যাপকহারে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ ফিরে আসলে, অর্থনৈতিক উত্তরণের পথ তখন সত্যিকার অর্থেই অনেক বন্ধুর হয়ে পড়বে।
বহুজাতিক ব্রিটিশ বিনিয়োগ ব্যাংক- বার্কলেস এশিয়া প্যাসিফিক শাখার প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা জিয়ান চ্যাং বলেন, ২০২০ সালে চীনের সার্বিক অর্থনীতিতে প্রতিকূল অবস্থায় ১ দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের হুমকিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিরোধ তীব্র রূপ ধারণ করলে- এ নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হবে, বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া- ৩২ শতাংশ বিশেষজ্ঞ আগামী জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার অনুমান করছেন। অন্যদিনে ৪১ শতাংশ অক্টোবর-ডিসেম্বর মেয়াদের শেষ প্রান্তিকে এমনটা আশা করছেন। এপ্রিল-জুন প্রান্তেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে এমন অভিমত দিয়েছেন ১৪ শতাংশ।