Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
May 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, MAY 13, 2025
ঢাকার কফিশপের কফি আর্ট! চুমুকের আগে যা চোখে পড়ে

ফিচার

আসমা সুলতানা প্রভা
20 November, 2023, 11:05 am
Last modified: 02 October, 2024, 01:15 pm

Related News

  • কফির দাম ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তবে হাসি নেই উৎপাদকদের মুখে
  • সকালে কফি পান করলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে: গবেষণা
  • খারাপ আবহাওয়ার কারণে কফির দামের রেকর্ড
  • চট্টগ্রামের পাহাড়ে পরীক্ষামূলক কফি চাষে সাফল্য, রপ্তানি সম্ভাবনার দিকে নজর
  • কতটুকু কফি পান করলে তা আপনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত?

ঢাকার কফিশপের কফি আর্ট! চুমুকের আগে যা চোখে পড়ে

অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন লাতে আর্টের কাজ করা হয় মেশিনের মাধ্যমে। প্রায় সবার মধ্যেই আছে এমন ভুল ধারণা। তবে নজরকাড়া, ভিন্নধর্মী এই লাতে আর্টের পুরো কাজ করতে হয় হাত দিয়েই। এতে বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হয় বারিস্তাদের। হাতের গতি নিয়ন্ত্রণের কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে না পারলে অনেকদিন সময় লাগে পরিপক্ক হয়ে উঠতে। কে কত বেশি দক্ষ তার উপরেই নির্ভর করে আর্ট কত ভালো হবে এবং বৈচিত্র্যময় হবে।
আসমা সুলতানা প্রভা
20 November, 2023, 11:05 am
Last modified: 02 October, 2024, 01:15 pm

মিল্ক ফোম ব্যবহার করে করা হয় লাতে আর্ট/ ছবি- সংগৃহীত

১৯৮০ সাল। ইতালির অধিবাসী লুইগি লুপি এবং আমেরিকার অধিবাসী ডেভিড স্কোমার নামের দুইজন ব্যক্তি সৃষ্টি করেন ভিন্নধর্মী এক শিল্প। কফির ওপর নান্দনিকভাবে তৈরি করা এই শিল্প কফিতে যোগ করে ভিন্নরকম এক সৌন্দর্য। এর শুরুটা হয় ইতালিতে। বছরের পর বছর ইতালির কফিশপগুলোতে একমাত্র ক্লাসিক ক্যাপুচিনোই পরিবেশন করা হতো। সাধারণ এই ক্যাপুচিনো কফিকেই ভিন্নভাবে সাজানোর চিন্তা মাথায় ভর করে তাদের। শুরু হয় ছবি এঁকে সজ্জিত ক্যাপুচিনো পরিবেশন করার ধারা। এরপর তা আমেরিকায় আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই পুরো পৃথিবীতে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে দেয় ক্যাপুচিনো কফির ওপর মিল্ক ফোম দিয়ে তৈরি সেই আর্ট। নাম 'লাতে আর্ট'।

বাংলাদেশে এই আর্টের সূচনালগ্ন থেকে জড়িত বিশেষ একজন ব্যক্তি। যার হাত ধরে আরও প্রসারিত হতে থাকে নান্দনিক, রুচিশীল, নজরকাড়া এই কফিচিত্র। নাম পিয়ার-ই-আশিক ইলাহি। বাংলাদেশে লাতে আর্টের আদ্যোপান্ত নিয়ে সেই গল্প জানতে দীর্ঘ সময় ধরে কফি নিয়ে কর্মরত, অভিজ্ঞ বারিস্তা, কফি রোস্টার, কফি গার্ডেনার পিয়ার-ই-আশিক ইলাহির সাথে কথা বলেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

বাংলাদেশে যেভাবে শুরু লাতে আর্ট

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে কাজ করছেন চল্লিশোর্ধ্ব আশিক ইলাহি। বর্তমানে যুক্ত আছেন কফি গার্ডেনিং এবং কফি রোস্টিং এর কাজে। কাজ করছেন ক্যাফে সাও পাওলোতে।

আশিক ইলাহির করা লাতে আর্ট/ ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

বাংলাদেশে লাতে আর্টের শুরু থেকেই এর সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। থাইল্যান্ড ভিত্তিক কফি চেইন 'কফি ওয়ার্ল্ডের' সাথে কফি নিয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৬ সালে কফি ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমেই লাতে আর্টের আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশে। তখন থেকেই কফি ওয়ার্ল্ডের সাথে কাজ করা শুরু করেন আশিক ইলাহি। সেখানে কয়েক বছর কাজ করার পর অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক কোম্পানি গ্লোরিয়া জিনসে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তার হাত ধরেই গ্লোরিয়া জিন্সে শুরু হয় লাতে আর্ট।

তিনি বলেন, "শুরু থেকেই এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারাটা আমার জন্য বড় সৌভাগ্যের। এই কাজের সাথে যুক্ত হয়ে অনেকজনকে কাজ শেখাতে পারাটাও বড় পাওয়া। আমি সেটা করতে পেরেছি বলে খুব গর্ববোধ করি।"

লাতে আর্টের কাজ বাংলাদেশে প্রথম কফি ওয়ার্ল্ড এবং গ্লোরিয়া জিন্স শুরু করলেও গ্লোরিয়া জিন্স বাংলাদেশে লাতে আর্ট নিয়ে সৃষ্টি করে অন্যরকম বিপ্লব। গ্লোরিয়া জিন'স কফিস (Gloria Jean's Coffees) একটি কফিশপ ফ্র্যাঞ্চাইজি। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এই কোম্পানিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কফিশপের ব্যবসা পরিচালনা করে।

কফির মধ্যে যে বিভিন্ন ধরনের আর্ট, ডিজাইন, নকশা করা যায় এই বিষয়টি মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায় গ্লোরিয়া জিন্স আসার পরে। এক্ষেত্রে অবশ্য নর্থ এন্ড- এর নামও আসবে। নর্থ অ্যান্ড, ক্রিমসন কাপ, গ্লোরিয়া জিনস এর মতো বড় পরিসরের কফিশপের পাশাপাশি গলির মুখে, মহল্লার কফি শপেও কপির কাপে ঝড় তুলেছে এই লাতে আর্ট।

বারিস্তা কারা?

কয়েক বছর আগেও বারিস্তা শব্দটার সাথে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না বেশিরভাগ মানুষ। মূলত, কফিশপে কফি সরঞ্জাম সহ কফি প্রস্তুত এবং পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা পেশাদার ব্যক্তিদের বলা হয় বারিস্তা।

অভিজ্ঞ বারিস্তা, কফি রোস্টার, কফি গার্ডেনার আশিক ইলাহি/ ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

বারটেন্ডার শব্দ থেকেই বারিস্তা শব্দের উৎপত্তি। ইতালীয় ভাষায়, বারিস্তা মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি অ্যালকোহলযুক্ত এবং নন-অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পরিবেশন করেন। কিন্তু বর্তমানে এই বারিস্তা শব্দটি এসপ্রেসো-ভিত্তিক কফি তৈরি এবং বিক্রির কাজে সংযুক্ত ব্যক্তিদের বোঝাতেই বিশ্বব্যাপী প্রচলিত।

একজন বারিস্তাকে কফি সম্পর্কিত যত কাজ, যেমন, কফি তৈরি করা, কফি সার্ভ করা- এর সবটাই করতে হয়। কফি সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান তার মধ্যে থাকা যেন অত্যাবশ্যক। এক কাপ কফি বানানোর ক্ষেত্রে যত ধাপ পার হতে হয় তার সবকিছুতেই দক্ষতা থাকতে হয় একজন বারিস্তার।

হাত দিয়ে করা হয় লাতে আর্ট

অনেক ক্রেতা প্রিয় মানুষের জন্য এভাবে কফি অর্ডার করে থাকেন/ ছবি - বারিস্তা রাসেলের সৌজন্যে প্রাপ্ত

অনেকেই হয়তো ভেবে থাকেন লাতে আর্টের কাজ করা হয় মেশিনের মাধ্যমে। কিন্তু নজরকাড়া, ভিন্নধর্মী এই লাতে আর্টের পুরো কাজ করতে হয় হাত দিয়েই। এতে বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হয় বারিস্তাদের। হাতের গতি নিয়ন্ত্রণের কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে না পারলে অনেকদিন সময় লাগে পরিপক্ক হয়ে উঠতে। কে কত বেশি দক্ষ তার উপরেই নির্ভর করে আর্ট কত ভালো হবে এবং বৈচিত্র্যময় হবে। সেজন্য দরকার হয় অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ট্রেইনার। কোনো ট্রেইনার কতৃক প্রশিক্ষিত না হয়ে কখনো তৈরি করা যাবেনা আর্টের বেসিক স্ট্রাকচার। এই কাজ করতে হলে প্রয়োজন হাত এবং মনের সংযোগ।

আশিক ইলাহি বলেন, "যদি কারো এই কাজের প্রতি মনোযোগ, একাগ্রতা এবং ধৈর্য না থাকে তবে এই কাজ করা কষ্টসাধ্য নয়, দুঃসাধ্যই বটে।"

তিনি লাতে আর্টের উপর দক্ষতা অর্জন করেন গ্লোরিয়া জিনসে থাকাকালীন। ভারত থেকে যেসব ট্রেইনার আনা হতো তারাই শেখাতেন এই কাজ। এই ট্রেইনাররা ৩-৪ জনকে ঠিক করে রাখেন কাজ শেখানোর উদ্দেশ্যে। আশিক ইলাহি ছিলেন তাদের একজন। নিজেরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে বাকিদের কাজ শেখাতে শুরু করেন তারা। এভাবেই পুরো বাংলাদেশে প্রসার লাভ করতে শুরু করে লাতে আর্ট।

ছবি- বারিস্তা রাসেলের সৌজন্যে প্রাপ্ত

তবে শুধু লাতে আর্ট এর কাজ পুরোপুরি আয়ত্ব করতে আশিক ইলাহির সময় লেগেছিলো ২০ দিনের মতো। এতে প্রথম দিকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হতো তাকে। হাতের গতির নিয়ন্ত্রণ ঠিকঠাক করতে পারতেন না বলে বারবার ভুল হতো আর্টের কাজ। এই কারণে বিভিন্ন কাপে পানি নিয়ে হাত ঘোরানোর পদ্ধতি অনুশীলন করতে থাকেন তিনি। এভাবে পুরোপুরি আয়ত্বে আনেন হাতের গতির নিয়ন্ত্রণ।

তরুণ বারিস্তা রাসেল এর করা লাতে আর্ট/ ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

তিনি উল্লেখ করেন, "হাত দিয়েই যেহেতু লাতে আর্ট করা হয়ে থাকে তাই এটা কতটুকু নিখুঁত হবে সেটাও নির্ভর করে হাতের নিয়ন্ত্রণের উপর। তরলের গতি বুঝতে পারা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রে।"

শুধু হার্ট-টিউলিপ-রাজহাস নয়, করা হয় বৈচিত্র্যময় আর্টও  

অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন এই কফিচিত্রের পরিধি কতটুকু। শুধু কি হার্ট, টিউলিপ, রাজহাঁস এর আর্টে সীমাবদ্ধ এই কফিচিত্রের জগত? মোটেও তা নয়। হার্ট, টিউলিপ, রাজহাঁস এবং রোসেটার শেপ হলো একেবারে মৌলিক লাতে আর্ট। সচরাচর এমন বেসিক আর্টই বেশি করা হয় কফির উপরে। তবে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বারিস্তারা বেসিক আর্টের চেয়েও ভিন্নধর্মী কাজের পাশাপাশি করেন থ্রিডি আর্টও। সেটিও তারা করে থাকেন হাত দিয়েই।

ভিন্ন ভিন্ন বারিস্তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী হাঁসের শেইপ দিয়ে থাকেন/ ছবি- বারিস্তা রাসেল

প্রায় সব কফিশপে দেখা যায় নির্দিষ্ট কিছু চিত্রই বারবার এঁকে পরিবেশন করা হয় কফি। এই বিষয়ের রহস্যও খোলাসা করেন আশিক ইলাহি। তিনি বলেন, "অর্গানাইজেশনের একটা রুলস থাকে, প্রতিটি কাপে যেন মিনিমাম লাতে আর্ট করে দেওয়া হয়। অনেক সময় বারিস্তারা ব্যস্ত থাকেন বলেই এমনটা নির্দেশ থাকে। সেই মিনিমাম বা বেসিক আর্ট হলো হার্ট শেইপ, টিউলিপ, রাজহাঁস বা রোসেটা। সব বারিস্তারা বেসিক এই আর্ট আয়ত্ব করতে পারেন বলে কফিশপে এটিই বেশি পরিবেশন করা হয়।"

যারা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ, তাদের হাত ধরে প্রতিদিন এই শিল্প আরও বেশি প্রসারিত হচ্ছে। ফলে আর্টের ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা। দক্ষ বারিস্তারা চেষ্টা করেন লাতে আর্ট আরও কত বৈচিত্র্যময় করা যায় । এমনকি মাঝেমধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ীও করে দেওয়া হয় কফিচিত্র। অনেকেই থ্রিডি আর্টের ভাল্লুক, পান্ডা, হার্ট সহ নানা ধরনের চিত্র চেয়ে বসেন কফির সাথে। যারা এই কাজে অনেক অভিজ্ঞ এবং দক্ষ তারা সেটা করে দেন অনায়াসেই। কিন্তু বারিস্তারা ব্যস্ত থাকেন বলে সবসময় পূরণ করতে পারেন না ক্রেতাদের চাহিদা। তখন বেসিক আর্টই করে দেন কফির কাপে। 

ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

লাতে আর্টের এই কাজে সুযোগ থাকে সৃজনশীলতা দেখানোরও। অনেকেই তাই নিজের মতো করে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেন। এমন একজন হলেন আরিফুল ইসলাম রাসেল। তরুণ এই বারিস্তা লাতে আর্ট নিয়ে কাজ করছেন ৮ বছর ধরে। কর্মরত আছেন 'কফি কনসেপ্ট' ক্যাফেতে।

রাসেল বলেন, "ভিন্নধর্মী কিছু সবসময় ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। প্রচলিত যে লাতে আর্টে কফি পরিবেশন করা হয় সেটা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন আর্টের মাধ্যমে কফি সজ্জিত করা যায়। এই শিল্পকে অনেকেই অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। তাই আমিও সে যাত্রায় কিছুটা ভাগ নেওয়ার চেষ্টায় আছি।"  

লাতে আর্টের কফির জনপ্রিয়তাই এখন বেশি

ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিমা সুলতানার দিনের শুরু এবং শেষটা হয়ে থাকে কফির মাধ্যমে। কফির মাতাল করা ঘ্রাণেই যেন তার সমস্ত ভালোলাগা। কিন্তু শুধু কফিতেই সন্তুষ্ট থাকেন না মাহিমা। কফিতে তার লাতে আর্ট থাকা চাই! তাই তো বিকেল হলেই প্রিয় মানুষটিকে সাথে নিয়ে ভীড় জমান পছন্দের কফি শপে। তার কাছে মনের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করার অন্যতম পন্থা হলো কফির উপরের নানন্দিক কফিচিত্র।

লাতে আর্টের মাধ্যমে একজন বারিস্তা যেমন নিজের দক্ষতা তুলে ধরতে পারেন, তেমনি লাতে আর্টে সজ্জিত এক কাপ কফির নান্দনিকতায় মুগ্ধ থাকেন কফির গ্রাহকরা।

এমন আরেকজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত ইমরোজ। কফি পান করেন না তেমন একটা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কফিতে লাতে আর্ট দেখে তার আগ্রহ জন্মে কফি খাওয়ার।

বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক আর্টি করেও কফি পরিবেশন করা হয় গ্রাহকদের/ ছবি- বারিস্তা রাসেলের সৌজন্য

শুধু ইমরোজ বা মাহিমাই নন, তরুণ প্রজন্মের প্রায় সবাই কফিশপ মুখী হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই লাতে আর্ট।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে কর্মরত তরুণ বারিস্তা মো. আশিকুর রহমান। কাজ করতেন 'সিক্রেট রেসিপি বাংলাদেশ' ক্যাফেতে। ছিলেন অভিজ্ঞ বারিস্তা আশিক ইলাহির শিষ্যও।

তিনি বলেন, "সাধারণ মানুষরা বর্তমানে লাতে আর্ট দেখেই কফি খেতে আসে। আকর্ষণীয় কিছু হলে সেখানে সবাই আগ্রহ দেখায়। লাতে আর্টের বেলায়ও তাই হয়েছে। এতে করে দিন দিন কফির জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।"

এখন ক্রেতাদের আসা-যাওয়া বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে কফি শপও। এর পেছনে কফিচিত্রের রয়েছে বড় ভুমিকা। মানুষের এমন উপস্থিতি বারিস্তাদের মধ্যে দ্বিগুণ উৎসাহ তৈরি করে বলেই মনে করেন অনেক বারিস্তা।

ছেলে-মেয়ে, তরুণ-মধ্যবয়সী, লাতে আর্ট শেখার নেই কোনো বয়স

নতুনদের কাজ শেখাচ্ছেন আশিক ইলাহি/ ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

সুনিপুণ হাতে কফি বানিয়ে তা পরিবেশন করাতেই যেন একজন বারিস্তার সাফল্য। এসপ্রেসো, আমেরিকানো বা ক্যাপুচিনো- কফির কাপে নিপুণ হাতে শৈল্পিক ভাবে গল্প বলেন তারা।

সবকিছুর পাশাপাশি এই লাতে আর্টের কাজও শেখান তারা। যারা কফি নিয়ে কাজ করতে চায়, কফির আর্ট শিখতে চায়, নিখুঁত কফি বানাতে চায় তাদের কাজ শেখার জন্য আছে সুব্যবস্থা। বাংলাদেশেই আছে বারিস্তাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ৬টি প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যেমন নর্থ এন্ড, বারিস্তা ট্রেনিং সেন্টার, আর এন হসপিটালিটি এন্ড ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং সেন্টার, কফি সল্যুশন কফি সেন্টার, বাংলাদেশ স্পেশালিটি কফি ট্রেনিং সেন্টার, এবং কফি গ্লোরি ট্রেনিং সেন্টার। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে এই ৬টি প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং নিতে পারেন যে কেউ।

অভিজ্ঞ কফি রোস্টার আশিক ইলাহি এই পর্যন্ত প্রায় ২০০-৩০০ জনকে কাজ শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রায় সব বয়সী মানুষই কাজ শিখতে আসে আমার কাছে। তরুণ ছেলে-মেয়ের পাশাপাশি মাঝবয়সীরাও আছেন এই তালিকায়।"

'যথাযথ দক্ষতা না থাকলে এই কাজ সম্ভব নয় কখনো'

করা হয় থ্রিডি আর্ট ও/ ছবি- বারিস্তা রাসেলের সৌজন্যে প্রাপ্ত

লাতে আর্টে সজ্জিত কফি দেখে হয়তো কেউ অনুমানই করতে পারে না এই কাজ আয়ত্বে আনতে ঠিক কতটুকু পরিশ্রম করতে হয় একজন বারিস্তাকে। যতটা সুন্দর, নান্দনিক এই কফিচিত্র ঠিক ততটাই কষ্টসাধ্য এই আর্ট আয়ত্ব করার পদ্ধতি। আশিক ইলাহি বলেন, "লাতে আর্ট এমন এক ধরনের শিল্পকর্ম, যেখানে যথাযথ দক্ষতা না থাকলে এই কাজ সম্ভব নয় কখনো।"

এসপ্রেসো স্ট্রাকচার, মিল্ক স্টিমিং, মিল্ক ফোমিং এইসব কাজে আলাদা করে দক্ষতা না থাকলে আর্টও ঠিকঠাক হয় না। আর্ট যদি নান্দনিক হয় তা অনেক সময় কফির গুণগত মানের ভুল-ত্রুটি ঢেকে দেয় বলেও জানান তিনি।

সেক্ষেত্রে প্রথমেই দরকার হয় ভালো মানের এসপ্রেসো স্ট্রাকচার তৈরি। কতটুকু কফির বীজ নেওয়া হয়েছে তার উপর নির্ভর করে এসপ্রেসো তৈরির পদ্ধতি। আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়, একটা এসপ্রেসো তৈরি করতে দরকার হয় ৭-৯ গ্রাম কফির বীজ। এই ৯ গ্রাম কফি থেকেই তৈরি করা হয় ২৭ মিলি এসপ্রেসো। এরপর কফি বীজ, এসপ্রেসোর উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় কতটুকু মিল্ক ফোম ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে কফির বীজটাকে খুব ভালভাবে ব্লেন্ড করা গেলেই কেবল ভালো মানের একটা এসপ্রেসো তৈরি হয়। আর একটি এসপ্রেসো শট বানাতে সময় লাগে ২৩-২৫ সেকেন্ড।

এরপরের ধাপ হলো মিল্ক ফোমিং। চিত্র আঁকার কাজে যে মিল্ক ফোম ব্যবহৃত হয় তা কতটুকু ঘন বা হালকা হবে তার উপর নির্ভর করে আর্টের নিপুণতা। এই কাজে দরকার হয় দীর্ঘ অনুশীলনের। বারিস্তারা বারবার চর্চা করেই আয়ত্বে আনেন এই কাজ। মিল্ক ফোমিং এর কাজ ঠিকঠাক না হলে আর্টের শেইপও যথাযথ হয় হয় না। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হয় মিল্ক যাতে ওভার স্টিমিং হয়ে না যায়। এতে মিল্ক ফোম ঠিকঠাক না হয়ে বুদবুদের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক সময় মিল্ক ফোম ক্রিমি না হয়ে পাতলা বা অধিক ঘন হয়ে যায়। সেজন্য নির্দিষ্ট সময় মেনেই করতে হয় এই কাজ। সময়ের হেরফের হলেই স্টিম আর নিখুঁত হয় না। মিল্ক যথাযথভাবে স্টিম করতে সময় লাগে ২৫-৩০ সেকেন্ড। মিল্ক স্টিম করার সময় যে ফোম তৈরি হয় সেটা দিয়েই আর্ট করা হয়। এতে মিল্ক যথাযথভাবে সিদ্ধ করে বাতাস ঢুকিয়ে ফোমিং করা, কতটুকু বাতাস প্রবেশ করাতে হবে সেদিকে রাখতে হয় নজর।

বারিস্তা রাসেল বলেন, "আমি অনেকবার মিল্ক ওভার স্টিমিং করেছি। শুধু মিল্ক ফোমিং যথাযথভাবে করতে আমার সময় লেগেছে ১৫-২০ দিন। মাঝেমধ্যে ফোম অধিক ঘন হয়ে যেতো, আবার কখনো কম।"

তরুণ বারিস্তা আশিকুর রহমানের করা লাতে আর্ট/ ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

আর্টের ক্ষেত্রেও একই ভোগান্তি পোহাতে হয় বারিস্তাদের। প্রথম দিকে কফির কাপে আর্ট করতে গেলে হাতে কাঁপুনি হওয়া, চিত্র বাঁকা হয়ে যাওয়া, তরলের মুভমেন্ট বুঝতে না পারা, কাঙ্খিত শেইপ ঠিকঠাক না হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় পড়েন তারা। যথাযথ একটি শেইপ আনতে কারও লাগে ১৫ দিন, কারও ২০ দিন বা আরও বেশি সময়। আর ভুল আর্ট করার সংখ্যাও অনেক। কেউ কেউ ২০-৪০ বার ভুল করেই নিখুঁত শেইপ বানাতে সক্ষম হয়েছেন আবার আবার কেউ ৪০ এর অধিক।

বারিস্তা আশিকুর রহমান বলেন, "একটি নিখুঁত লাতে আর্ট করতে গিয়ে আমার ৩০-৪০ বার ভুল হয়েছে। কখনো কখনো কোনো শেইপই পেতো না, কখনো বাঁকা হয়ে যেতো, কখনো হাতে কাঁপুনি হতো আবার কখনো কী করতে চাই সেটাই নির্ধারণ করতে পারতাম না।"

'সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে'

সারাবিশ্বেই ব্যাপকভাবে তৈরি হচ্ছে কফির চাহিদা। কফির এমন চাহিদা বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা বিস্তার করতে কফিচিত্রের ভূমিকাও লক্ষ্য করার মতো। প্রতিটি মানুষই চায় তার পছন্দের খাবারটিকে শৈল্পিকভাবে সজ্জিত করা হোক।

আন্তর্জাতিক বাজারে বারিস্তাদের চাহিদাও বাড়ছে। কফি রোস্টার আশিক ইলাহির মতে, যদি এই সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারা যায় তাহলে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করেও অনেকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করে যথাযথ ট্রেইনিং দিয়ে এই সেক্টরকে আরও প্রসারিত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।  

আশিক বলেন, "কফি কালচার সবদেশেই একরকম। এসপ্রেসো, লাতে, ক্যাপুচিনো এবং আমেরিকানো সব দেশেই একইভাবে একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। যদি দক্ষ ট্রেইনার নিয়ে আমাদের তরুণ বারিস্তাদের সঠিকভাবে এই কাজ শেখানো হয় তবে তা আমাদের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিতে পারে।"

থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল সহ আরও নানা দেশ কফি নিয়ে দক্ষ কারিগর তৈরি করার মাধ্যমে দখল করে রেখেছে আন্তর্জাতিক বাজার। বাংলাদেশেও অনেক সম্ভাবনাময় বারিস্তা আছেন যাদের মাধ্যমে এই বাজারে অনুপ্রবেশ করা কিছুটা সহজ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তাতে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাছাড়া দেশের দক্ষ, অভিজ্ঞ ট্রেইনারদের দিয়ে যদি কাজ শেখানো যায় তবে তা নিয়ে আসবে তা সুদূর প্রসারী ফলাফল।

তবে স্বস্তির বার্তা এই যে, কফিচিত্র শিল্পের প্রসারের ফলে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্য তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান। অনেকে কফির কাজ শিখে হচ্ছেন উদ্যোক্তা। বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের ব্যবস্থাও তৈরি হয়েছে।

আশিক ইলাহি বলেন, "লাতে আর্ট কফি পান করাকে বাংলাদেশে এতই জনপ্রিয় করে তুলেছে যে বর্তমানে আমাদের দেশেও হচ্ছে কফির চাষ। আমি ভাগ্যবান, কারণ কফি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। দেশে এমন একটি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো কিছুরই আভাস দেয়।"

 

Related Topics

টপ নিউজ

কফি / কফি পান / কফি বানিয়ে আয় / লাতে আর্ট / কফি আর্ট

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত: ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা
  • লোকসান কাটিয়ে উঠতে ৯০০ কোটি টাকার সরকারি সহায়তা চাইছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল
  • লোডশেডিং কমাতে আরও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে
  • হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় ১০ মাসেই ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড
  • পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না, পুনর্গঠিত হচ্ছে র‌্যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

Related News

  • কফির দাম ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, তবে হাসি নেই উৎপাদকদের মুখে
  • সকালে কফি পান করলে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে: গবেষণা
  • খারাপ আবহাওয়ার কারণে কফির দামের রেকর্ড
  • চট্টগ্রামের পাহাড়ে পরীক্ষামূলক কফি চাষে সাফল্য, রপ্তানি সম্ভাবনার দিকে নজর
  • কতটুকু কফি পান করলে তা আপনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত?

Most Read

1
মতামত

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত: ভারত চেয়েছিল শক্তি দেখাতে, কিন্তু প্রকাশ পেল দুর্বলতা

2
বাংলাদেশ

লোকসান কাটিয়ে উঠতে ৯০০ কোটি টাকার সরকারি সহায়তা চাইছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল

3
বাংলাদেশ

লোডশেডিং কমাতে আরও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করবে সরকার: জ্বালানি উপদেষ্টা

4
বাংলাদেশ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ আ.লীগের বিরুদ্ধে সরকার যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে

5
অর্থনীতি

হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় ১০ মাসেই ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড

6
বাংলাদেশ

পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র থাকবে না, পুনর্গঠিত হচ্ছে র‌্যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net