ছয় মাসের মধ্যে দায়িত্ব শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চাই: সুশীলা কার্কি

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি জানিয়েছেন, তিনি ছয় মাসের মধ্যে দায়িত্ব শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চান। ছয় মাসের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন, 'জেন-জি আন্দোলন' চলাকালীন হত্যা ও সহিংসতার তদন্ত এবং আগের সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তসহ নানা বিষয়ে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'আমি তো বলেছি যে আমি দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করব। আপনি জানেন যে সাধারণ মানুষের দিক থেকে কতটা চাপের মুখে এই সরকার গঠিত হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে পদ থেকে সরে যেতে চাই। আগামী কয়েক দিনে নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় করে তুলব আমরা। প্রথমত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে তাদের। একটা পুরোনো ভোটার তালিকা আছে তাদের, কিন্তু সেটা হালনাগাদ করতে হবে। যদি দিনরাত কাজ করতে পারি তাহলে ছয় মাসে সেটা করা সম্ভব। যেদিন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেব, সেদিন থেকে আমি মুক্ত।'
দুর্নীতির অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত করার জন্য কোনও কমিশন গঠনেরও পরিকল্পনা আছে কি-না— এমন প্রশ্নের জবাবে শুশিলা কার্কি বলেন, 'প্রথমে আমরা ১০-১১ জন সদস্যের একটা মন্ত্রীসভা গড়ব। কয়েকদিনের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। কী আকারে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা আগে জানা প্রয়োজন। আমরা যদি তদন্ত শুরু করতে পারি, পরবর্তী সরকারও সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আমাদের মনে হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে যতক্ষণ না তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত এই জাতি শান্তি পাবে না। আমরা নিশ্চিতভাবেই এটা (দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত) করব।'
আন্দোলন চলাকালীন নেপালে যেসব সম্পত্তি ও জীবনহানির ঘটনা হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখার জন্য একটা উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করেছে নেপাল সরকার। সেই প্রসঙ্গে বিবিসি তার কাছে জানতে চায়, সম্পত্তি ও জীবনহানির ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখার জন্য গঠিত কমিশন কেমন হবে এবং তদন্তের জন্য কতদিন সময় দেওয়া হবে?
জবাবে সুশীলা বলেন, 'বর্তমান মন্ত্রীসভায় আমরা মাত্র চারজন সদস্য আছি। আমাদের হাতে সময় রয়েছে ছয় মাস। এই ছয়টি মাসকে আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই। আমাদের পরিকল্পনা হল ওই তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার, বা বড়জোর দেড় মাস। বিভিন্ন ক্ষেত্রের তিনজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এই তদন্ত চালানো হবে।'
মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ নিয়ে শুশীলা কার্কির সামগ্রিক পরিকল্পনা, কতজন মন্ত্রী থাকতে পারেন, কাদের মন্ত্রী করার কথা ভাবা আহচ্ছে এবং মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট (রামচন্দ্র পোড়েল) বলেছিলেন যে প্রতিটা রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করতে। আমি বলি যে এটা অনুচিত হবে। (আমি বলি যে মন্ত্রীসভা) অরাজনৈতিক হওয়া উচিত এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিদেরই রাখা উচিত।'
তিনি বলেন, 'আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণীর সদস্যদের যাতে যতটা সম্ভব রাখা যায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অনেক নাম এসেছে। কিন্তু আমরা এটা যাচাই করে দেখছি যে তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি-না। যদি তা হয়, তাহলে আমরা তাদের বদলে অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আনার চেষ্টা করব, অথবা প্রাক্তন সচিবদের, আদিবাসী গোষ্ঠী, দলিত, নারী ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে আসা যেতে পারে।'
মন্ত্রীসভায় শুধুই অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে শুশীলা কার্কি বলেন, 'আমার মনে হয়েছিল যে যদি রাজনৈতিক সদস্যদের বেছে নিই, নির্বাচনের সময়ে তার অপব্যবহার হতে পারে। কারণ নির্বাচনের সময়েও মন্ত্রীসভার হাতে তো কিছু ক্ষমতা থাকবে, যেমন হেলিকপ্টার ব্যবহার ইত্যাদির মতো সুবিধা। আর আমি সেরকম ব্যক্তিই বেছে নিতে চেয়েছিলাম যারা নির্বাচনে লড়াই করবেন না। নাহলে তো (মন্ত্রীসভার) সেই সব সদস্য নির্বাচনে লড়াই করবেন।'
মন্ত্রীদের কীভাবে বাছাই করা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের কিছু বন্ধু আছেন, যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা তাদের পরামর্শ নিচ্ছি আর মাঠ পর্যায়তেও কাজ করছি আমরা। আবার ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে যে (মন্ত্রীসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে) তার সদিচ্ছা আছে কী না। তিনজন সদস্যকে আমরা ইতোমধ্যে নিযুক্ত করেছি। বাকিদের আমরা মঙ্গলবারের মধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলব। এটা একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া।'
সুশীলা আরও বলেন, 'ভারতে টিএন সেশান (ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার) যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতেন, সেভাবেই ভোট হওয়া উচিত। প্রতিটা বিষয় আইন আর নিয়ম অনুযায়ী হবে। কোনও ত্রুটি যাতে না থাকে। একটা সুষ্ঠু সরকার গঠিত হোক। আমরা সবাই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি যাতে একটা সুষ্ঠু সংসদ গঠন করা যায় (ভোটের পরে)।'
যে জেন-জি আন্দোলনকারীরা নতুন একটি সরকারের ও প্রশাসনের দাবি তুলেছিল, তাদের একাংশের মধ্যে থেকেই সুশীলা কার্কির বিরোধিতা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, সেই গোষ্ঠীটিই তো সরকার গড়ার জন্য আমাদের নাম প্রস্তাব করেছিল। আমরা তো পদ চাই নি। এটা আমাদের সিদ্ধান্তও ছিল না। যখন আটই সেপ্টেম্বর ছাত্রদের হত্যা করা হল, আমরা এতটাই মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলাম যে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অনিয়ম আর সুশাসনের অভাব নিয়ে ওরা যে দাবিগুলো তুলছিল, তা পূরণ করতে চেয়েছিলাম আমরা।'
তিনি আরও বলেন, 'কোনও কিছুতেই তো ১০০ শতাংশ সাফল্য বলে কিছু হয় নি। হয়ত আমরা সবগুলো দাবি পূরণ করতে পারব না, কিন্তু আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব। আমরা সব দায়িত্ব পালন করতে চেষ্টা করব। কিন্তু যদি কিছু অপূর্ণ থেকে যায়, তাহলে পরবর্তী সরকার আর সংসদ (নির্বাচনের পরে) সেগুলোর দায়িত্ব নেবে।'