যুদ্ধে শহীদ সেনা কর্মকর্তা, বিজ্ঞানীদের জানাজায় তেহরানে লাখো জনতার ঢল

ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকদের জানাজায় তেহরানে লাখো মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। আজ শনিবার (২৮ জুন) ইরানের রাজধানী তেহরানের আজাদি স্কয়ারে আয়োজিত এই জানাজায় কালো পোশাক পরিহিত শোকাহত মানুষের ঢল নামে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শহীদ এই ৬০ জনের মধ্যে ১৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ১০ জন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা। নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, রেভ্যুলুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং গার্ডস অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ।
তাদের কফিনগুলো জাতীয় পতাকা ও ছবি দিয়ে সাজানো অবস্থায় আজাদি স্কয়ারে আনা হলে হাজারো মানুষ সেগুলোর দিকে এগিয়ে যায়, অনেকে কফিন ছুঁয়ে দেখে বা তার ওপর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভিতে দেখানো হয়, জানাজার পাশে ক্ষেপণাস্ত্রও প্রদর্শন করা হয়েছে। পরে আজাদি স্কয়ারে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে গণজামাত অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, 'শক্তির শহীদদের মিছিল' শিরোনামে আয়োজিত এই জানাজায় চার নারী ও চার শিশুর মরদেহও ছিল, সাম্প্রতিক যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সর্বোচ্চ নেতার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী শামখানি, যিনি যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনিসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তারা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, "দুই পরমাণু শক্তিধর শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ইরানিরা নিজেদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করেছে। আজ তারা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।"
তবে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি। সাধারণত এই ধরনের জানাজায় তিনি নামাজ পড়ান। তবে এবারের যুদ্ধে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি শুধু দুটি রেকর্ড করা ভিডিওবার্তায় বক্তব্য দিয়েছেন।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে, যা ১৯৮০'র দশকের ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর তেহরানের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।
এর জবাবে ইরানও ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি, অবকাঠামো ও শহরগুলোর ওপর। পরে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে যোগ দেয় এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। তবে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দাবি, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ইরানের পক্ষের নিহতের সংখ্যা ৬১০ জন, আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৭০০ জনের বেশি। তবে মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএনএ জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৯৭৪ জন, যাদের মধ্যে ৩৮৭ জন বেসামরিক নাগরিক।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধে ইসরায়েলে ২৮ জন নিহত ও ৩ হাজার ২৩৮ জন আহত হয়েছে।
এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে তিনি আবারও ইরানের ওপর বোমা হামলার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
অন্যদিকে, খামেনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ওপর আরেকবার হামলা চালায়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে।