জর্ডানে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুড; সম্পদ ও কার্যালয় বাজেয়াপ্ত

সবচেয়ে সরব বিরোধী দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে জর্ডান। জর্ডানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিন ফ্রায়া জানান, দলটির কয়েকজন সদস্য নাশকতার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার পুলিশ দলটির প্রধান কার্যালয় ঘিরে ফেলে ও সেখানে তল্লাশি চালায়।
ফ্রায়া বলেন, দলটির সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে এবং যারা এর মতাদর্শ প্রচার করবে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও জানান, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় দলটির প্রকাশনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের সব কার্যালয় বন্ধ ও সম্পত্তি জব্দ করা হবে।
তবে দলটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, মুসলিম ব্রাদারহুড বহু দশক ধরে জর্ডানে বৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং দেশের প্রধান শহরগুলোতে এর শক্তিশালী জন সমর্থন রয়েছে। এছাড়া, সারা দেশে তাদের ডজনেরও বেশি কার্যালয় রয়েছে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত আরেক রাজনৈতিক দল ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট (আইএএফ) গত বছর সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছিল। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার ওই ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে আইএএফ জানায়, তারা মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে নিজেদের আলাদা রাখতে চায়। দলটি বলছে, তারা একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন জর্ডানীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবে এবং কোনো বাহ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই। তারা আরও জানায়, আইনের সীমার মধ্যেই তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আইএএফ-এর মহাসচিব ওয়েল আল-সাক্কা আম্মানে দলের প্রধান কার্যালয়ে এক বক্তব্যে বলেন, দলটি জাতি ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা, জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে গঠনমূলকভাবে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।
প্রায় এক দশক আগে জর্ডানে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ছোট ছোট দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয় ও ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্টের কার্যক্রম সীমিত করে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক এই কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর এর সুদূর প্রসারী প্রভাব কেমন হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "এটা প্রমাণিত যে দলটির সদস্যরা গোপনে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এমন কার্যকলাপ দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।"
আরও বলা হয়েছে, "বিভক্ত মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যরা নিরাপত্তা এবং জাতীয় ঐক্যে ক্ষতি সাধন করেছে এবং নিরাপত্তা ও জনগণের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে।"
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দলের এক নেতার ছেলেসহ কিছু সদস্য নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য বিস্ফোরক তৈরি এবং পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। তবে বিবৃতিতে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গত সপ্তাহে জর্ডানে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি, বিস্ফোরক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রাখা, ক্ষেপণাস্ত্র গোপন করা এবং অবৈধভাবে মানুষ নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সরকার বলেছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা 'অনুমোদিত নয় এমন গোষ্ঠী'-এর সদস্য। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ব্রাদারহুড। তারা জানায়, তারা জর্ডানের নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়াও ২০২৪ সালে একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যদের দায়ী করেছে জর্ডান সরকার।
দলটির সদস্যরা গাজা নিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের কিছু বৃহত্তম বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছে। দলটির বিরোধীরা বলেন, এই বিক্ষোভগুলো তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করেছে। গত দুই বছরে, জর্ডান দলটির উপর বিধিনিষেধ আরো কঠোর করেছে, তাদের কিছু কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং সরকারবিরোধী প্রতিবাদী নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গত চার বছরে জর্ডান সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নাগরিকদের ওপর নির্যাতন ও হয়রানি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরকারের সমালোচনাকারীদের মুখ বন্ধ করার জন্য একাধিক আইন ব্যবহার করছে।
মুসলিম ব্রাদারহুড প্রায় এক শতাব্দী আগে মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সারা বিশ্বে এর শাখা রয়েছে। দলের নেতারা বলেন, তারা কয়েক দশক আগে সহিংসতা পরিত্যাগ করেছে এবং নির্বাচন ও অন্যান্য শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে সমালোচকরা তাদেরকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে।