ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মানি লন্ডারিং মামলা বাতিল

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মানিলন্ডারিং মামলাটি বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতের রায়ে ড. ইউনূসের দায়ের করা আপিল মঞ্জুর হওয়ায় মামলাটি আর চলবে না বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান। তিনি বলেন, 'এখানে টাকা আত্মসাৎ হয়নি। টাকা পুরোটাই দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে কেউ কম পেয়েছে বা বেশি পেয়েছে। তার সামান্য অংশ নিয়ে ডিসপিউট (বিরোধ)। সেটা সিভিল কোর্টে হয়। ফৌজদারি কোর্টে নয়। তাই এ মামলা চলতে পারে না।'
আসিফ হাসান বলেন, 'নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সারাবিশ্বে সম্মানিত। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী। শতবর্ষে আর কোনো বাংলাদেশি নোবেল পাবেন কি না, জানি না। আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না।'
এর আগে, হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আদেশ দিলে সেটির বিরুদ্ধে আপিল করেন ড. ইউনূস। গত ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার জন্য ২৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছিল।
এই মামলার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন আসিফ হাসান।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
২০২৪ সালের ১২ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন অধ্যাপক ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইউনূসসহ সাতজন হাইকোর্টে আবেদন করেন, যা গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়।
আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে গেলাম। হাইকোর্ট বাতিল আবেদন খারিজ করে দিলেন। পরে আপিল বিভাগে গেলাম। আপিল বিভাগ বললেন, এ মামলা চলে না। কারণ মামলাটি প্রত্যাহার (১১ আগস্ট দুদক মামলা প্রত্যাহারে আবেদন দেন) করা হয়েছে। আমরা বললাম, না, মামলা প্রত্যাহার হয়নি। কারণ এটি অবৈধ। তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসেন। ১১ আগস্ট কোনো নোটিশ ছাড়া, বিনা কারণে মামলা বাদ দিলেন।'
তিনি বলেন, 'এটি বাদ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, আমরা তা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হলাম। পরে আবেদনের শুনানিতে বললাম, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শ্রমিকের টাকা শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বিতরণ হয়েছে। এটি তো কোম্পানির টাকা নয়। এখানে তাকে মিথ্যাভাবে হয়রানির জন্য, অপমান করার জন্য মামলাটা করা হয়েছে।'
'আর অধ্যাপক ইউনূসও বলেছেন- প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পরপরই মামলাটা প্রত্যাহার হয়ে গেল! আমার আইনজীবীও জানে না, প্রতিষ্ঠানও জানে না। আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। যদি দোষী প্রমাণিত হই, তাহলে সাজা মেনে নেব। আইনের মাধ্যমে সমাধান করব', উল্লেখ করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।