ট্রাম্পের শুল্কারোপ: গত ১০০ বছরে বিশ্ববাণিজ্যে ‘সবচেয়ে বড় পরিবর্তন’

বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের প্রভাব হবে বিপুল।
একটি গ্রাফে মার্কিন শুল্ক রাজস্বের উল্লম্ফন দেখে এই প্রভাবের মাত্রা উপলব্ধি করা যায়। শুল্ক রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ ১৯৩০-এর দশকের চরম রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়াও রাতারাতি শেয়ারবাজারে ধস—বিশেষত এশিয়ায়—থেকেও এই শুল্ক আরোপের প্রভাব বোঝা যায়।
তবে এসব পরিবর্তনের প্রকৃত গভীরতা বোঝা যাবে দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপথে বড় ধরনের পরিবর্তন থেকে।
মূলত এটি একটি সর্বজনীন শুল্কনীতি—শুক্রবার রাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে, যার আওতায় পড়বে সব দেশ। এর বাইরে 'সবচেয়ে বেশি অপরাধী' কয়েক ডজন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোর ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এতে হাজার হাজার কোম্পানি, কারখানা, এমনকি গোটা দেশের ব্যবসার মডেলও ভেঙে পড়তে পারে।
বিশ্বের বৃহত্তম বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেসব সরবরাহ চেইন গড়ে তুলেছিল, তা হঠাৎ করেই ভেঙে পড়তে পারে। এই ভাঙনের পরিণতিতে কোম্পানিগুলো প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছুটে যাবে চীনের দিকে।
এটা কি স্রেফ একধরনের বড় দরকষাকষি? মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য অবশ্য ভিন্ন। তারা এই শুল্ক রাজস্বকে ভবিষ্যতের করছাড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দাবি করছে। ফলে সমন্বয়ের সুযোগ কম বলেই মনে হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সরাসরিই বলে ফেলেছেন: 'এটা কোনো দরকষাকষি নয়, এটা জাতীয় জরুরি অবস্থা।'
এই নীতির উদ্দেশ্য মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি 'শূন্যে নামিয়ে আনা'। এই কাজ মূলত গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো।
কিন্তু কারখানা স্থানান্তর করতে অনেক বছর সময় লাগে। এশিয়ার ওপর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ মানে কাপড়, খেলনা, ইলেকট্রনিকস—এসব পণ্যের দাম মুহূর্তেই চড়ে যাবে।
প্রশ্ন হলো এখন—বিশ্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে?
ইউরোপের কিছু ভোক্তা হয়তো সস্তায় সরিয়ে আনা কাপড় বা ইলেকট্রনিকসের সুবিধা পাবে। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে অন্য বড় অর্থনীতিগুলো পারস্পরিক বাণিজ্য আরও নিবিড় করার পথে হাঁটতে পারে।
টেসলার বিক্রিতে ধস নামা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, বিষয়টা কেবল সরকারের প্রতিক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই যুগে ভোক্তারাও প্রতিশোধ নিতে পারে। এটা হতে পারে নতুন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া বাণিজ্যযুদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য আর না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইউরোপ।
সোশ্যাল মিডিয়া পরিষেবায় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়াত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
আর মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে সুদহার বাড়াতে হতে পারে।
সব মিলিয়ে এক বিশৃঙ্খল বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ এখন প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
- ফয়সাল ইসলাম: বিবিসি-র ইকোনমিকস এডিটর