সাড়ে ৩ টায় মুক্তি পেয়ে স্বজনদের সঙ্গে ফিরে গেলেন নুসরাত ফারিয়া

জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। মঙ্গলবার বেলা ৩টা ২৮ মিনিটের দিকে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কাওয়ালীন নাহার। তিনি বলেন, 'দুপুরে নুসরাত ফারিয়ার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌছালে তা যাচাই বাছাই শেষে তাকে ৩টা ২৮ মিনিটে মুক্তি দেয়া হয়।'
আজ (২০ মে) বিশেষ সাবমিশন শেষে তাকে জামিন দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ আমাদের সাবমিশনে সন্তুষ্ট হয়ে অবশেষে চলচ্চিত্র নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর করলেন।'
সোমবার (১৯ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে, তার জামিন শুনানির জন্য আগামী ২২ মে তারিখ ধার্য করা হয়েছিল।
গতকাল সকাল ৯টার দিকে নুসরাত ফারিয়াকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। তার ঘণ্টা খানেক বাদে তাকে এজলাসে নেওয়া হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই বিল্লাল ভূঁইয়া তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানি শেষে নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
পরবর্তীতে, দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে ঢাকা থেকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
এর আগে, ১৮ মে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকায় হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা ঘটনায় ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনা ও নুসরাত ফারিয়াসহ ২৮৩ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেছেন এনামুল হক। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে আসামি করা হয়েছে।
ফারিয়া ছাড়াও আসামি করা হয়েছে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, অভিনেত্রী আসনা হাবিব ভাবনা, সোহানা সাবা, মেহের আফরোজ শাওন, জ্যোতিকা জ্যোতি, চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, আজিজুল হাকিমসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীকে।
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে 'বিব্রতকর ঘটনা' উল্লেখ করে সোমবার (১৯ মে) সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি বলেন, 'ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাতো অনেকদিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না।'
'আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে।'
তিনি আরও লেখেন, 'এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরো সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো-এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।'
গণমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নুসরাতের গ্রেপ্তারকে যৌক্তিক বলার চেষ্টা করেন। সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'তার (নুসরাত) নামে কেস থাকলে, আপনি কী করবেন? ছেড়ে দিলে কিন্তু আপনারাই আবার বলবেন, স্যার ছেড়ে দিছেন।'
তিনি আরও জানান, নুসরাতের বিষয়ে তদন্ত এখনও চলমান।
অন্যদিকে, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নুসরাতের গ্রেপ্তার নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, 'এই গ্রেপ্তার শেখ হাসিনার সরকারের পুরোনো কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি—দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা।'
আরও পড়ুন: নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন: হাসনাত আবদুল্লাহ
দিনের শেষ দিকে এক বিবৃতিতে এনসিপি জানায়, নুসরাতকে কারাগারে পাঠানোয় বিচারব্যবস্থা রীতিমতো প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
এদিকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানও নুসরাতের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, 'নুসরাত, যিনি একটি চলচ্চিত্রে শেখ হাসিনার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তার গ্রেপ্তার একটি গভীর উদ্বেগজনক মুহূর্ত নির্দেশ করে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের পরিচিত সমর্থক হওয়া বা দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেই কাউকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, যেখানে এসব মানুষ বাংলাদেশে আর নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছেন না—যেখানে ভিত্তিহীন অভিযোগে যেকোনো সময় হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।'