একটা লাশ পড়লে আমরা কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, 'সামনে খুবই সংকটময় পরিস্থিতি। আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরা কিন্তু লাশ নেব। অত সুশীলতা করে লাভ নেই।'
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, 'আমরা যখন আমাদের হাতে এই দেশের ৫ই আগস্টের পরে মুজিববাদীদের, আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রতিটি বাড়ি চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, সেদিন আমরা নিজেদের সংবরণ করেছিলাম বলে আজকে তারা এই সাহস করতে পারছে। আমরা ক্ষমা করে যদি ভুল করে থাকি, তাহলে আমরা প্রতিজ্ঞা নেব যে আমরা আর ক্ষমা করব না।'
তিনি বলেন, 'আমরা দয়া দেখিয়ে মনে করেছিলাম যে এই দেশের রাজনৈতিক লড়াই ও দ্বন্দ্ব দেশের ভেতরেই মোকাবিলা করব। কিন্তু যারা এই লড়াইকে দেশের বাইরে নিয়ে গেছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—এই দেশের লড়াই যদি দেশের বাইরে যায়, তবে এই দেশের মুক্তির লড়াইও দেশের বাইরে যাবে।'
'খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে। আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। আমরা কিন্তু একটা লাশ পড়লে আমরা কিন্তু লাশ নিব। অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ অনেক হয়েছে। অনেক ধৈর্য হয়েছে', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা রিকনসিলিয়েশন, ট্রুথ, আমরা বিভিন্ন কথা বলেছি। আমরা বলেছি যে আইসিটি ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতে আপনারা বিচার করুন। বিচার চলমান আছে। কিন্তু বিচারের বদলে আজকে বিচার চলমান আছে একদিকে, আরেক দিকে এই আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে এই দেশ থেকে বেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিবেন, ভারত থেকে আপনারা বাংলাদেশে সন্ত্রাস করার উস্কানি দিবেন এবং সন্ত্রাস চালাবেন, আমার ভাইয়ের ওপর গুলি চালাবেন, আমরা এটা বরদাশত করব না। এখানে বাংলাদেশে ভারতের এবং ভিনদেশীদের যারা স্বার্থ রক্ষা করবে তাদেরও নিরাপদ থাকতে দেওয়া যাবে না।'
বিরোধীশক্তির উদ্দেশে মাহফুজ আলম বলেন, 'আমরা যদি এই দেশে নিরাপদ না থাকি, তবে আমাদের শত্রুরাও নিরাপদ থাকতে পারবে না। এটা বেসিক কন্ডিশন।'
মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, জুলাই বিপ্লবের পর যে লড়াই করার কথা ছিল, তাতে পরাস্ত হওয়ার কারণেই শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই লড়াই অনেক দীর্ঘ। এই লড়াইয়ের জন্য আমরা প্রথম থেকে বলেছিলাম যে মুজিববাদ এর মূলোৎপাটন করতে হবে। কিন্তু মুজিববাদের শেকড় এমন গভীরে প্রোথিত বাংলাদেশে যে একে কালচারালি, ইন্টেলেকচুয়ালি, পলিটিক্যালি সকল অর্থেই মোকাবেলা করার যে শক্তি-সামর্থ্য, এই শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা অথবা লড়াইয়ের দিকে এগুনোর চেষ্টা আমরা খুব কমই দেখেছি।'
তিনি বলেন, 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও চার মূলনীতির ভিত্তিতে বাহাত্তরের সংবিধানের মাধ্যমে যে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলা হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও আইনজীবীদের কব্জা করা হয়েছে। এদের একটি অংশ সচেতনভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।'
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আপ বাংলাদেশ, লেবার পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন।
