সাংবাদিক সোহেলকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় ফয়েজ তৈয়্যবকে জড়ানো ভিত্তিহীন: তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল ভোরের কাগজের অনলাইন সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সই করা এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়েছে, 'এ ঘটনার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে একটি ভিত্তিহীন প্রচারণা চালানো হয়েছে; যা সকালে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।'
'সেখানে এনইআইআর বাস্তবায়নের সঙ্গে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্যের অপলাপ করা হয়েছে।'
গুজবে দাবি করা হয়, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় তিনি সাংবাদিক সোহেলকে আটকের ঘটনায় জড়িত। তবে এ ধরনের দাবি উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ও তথ্য বিকৃতির চেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, "রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এনইআইআর বাস্তবায়ন করছি। অবৈধ হ্যান্ডসেটের লাগাম টানতে সংক্ষুব্ধ পক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠকও করেছে। এতো কিছুর পরও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো অনলাইন নিউজ পোর্টাল আমার ওপর দায় চাপিয়েছে। তাদের উদ্দেশেই আমার বক্তব্য- এটা অনভিপ্রেত।"
তিনি আরও বলেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকার অবকাশই নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা তার পরিবারের পক্ষ থেকেও আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।"
এর আগে, মঙ্গলবার রাতে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি ও দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কার্যালয়ে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমার জিম্মায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক সোহেল।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, 'আলহামদুলিল্লাহ। বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর তারা আমাকে সসম্মানে মাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। গত রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে ৫/৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সাথে আমাকে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি।'
এদিকে, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বার্তায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, "সাংবিদক মিজানুর রহামানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও এমন 'প্রোপাগাণ্ডা' মুক্তমত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ভুলুণ্ঠিত করছে।"
"আমরা মনে করি, এ ধরনের অসত্য তথ্য প্রচার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই আশা করি, এরপর আর কেউ এ ধরনের লেখায় বিভ্রান্ত হবেন না," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, শুধু সাংবাদিক হোহেল নয়, গতকাল রাতে সুমাশটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ী আবু সাঈদ পিয়াসকেও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পিয়াসের পরিবারের একজন সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তাসলিমুর রহমান মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আবু সাঈদ পিয়াসের স্ত্রী সুমাইয়া চৌধুরী দাবি করেন, গতরাত ৩টার দিকে মিরপুর–১ এলাকার বাসা থেকে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ডিবি সদস্যরা পিয়াসের মোবাইল ফোনটিও জব্দ করে বলে জানান তিনি।
