১৪ বছরে জাতীয় জলবায়ু তহবিল প্রকল্পে দুর্নীতিতে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি: টিআইবি
জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) ৫৪ শতাংশ বরাদ্দে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার; যার মূল্য প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে 'বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।
একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।'
তিনি আরও বলেন, 'দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।'
