খাগড়াছড়িতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ

খাগড়াছড়িতে এক স্কুল শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে পরিকল্পিত হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র-জনতা।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজিত হয়।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈসানু মারমার সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
এতে বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহ সভাপতি টনি চিরান, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি নুমংপ্রু মারমা, পিসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী লিটন ত্রিপুরা।
সমাবেশে দীপায়ন খীসা বলেন, 'আপনারা এত তালবাহানা না করে পাহাড়ের জন্য আইন করে দেন যে যারা জাতে সেটেলার বাঙালি, ধর্মে মুসলিম তাদের জন্য ধর্ষণ বৈধ। আইন করে দেন পাহাড়ে ধর্ষণ হলে কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করা যাবে না।'
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার বানিয়ে দিয়ে যাওয়া ন্যারেটিভ, পাহাড়ীরা প্রতিবাদ করলেই সন্ত্রাসী; সেই ন্যারেটিভ প্র্যাকটিস করা বন্ধ করেন। ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যদি পাহাড়ীদের অপরাধ হয়, তাহলে আমরা এরকম হাজারটা অপরাধ করতে রাজি।'
এহসান মাহমুদ বলেন, 'আদিবাসীদের প্রতিবাদের ভাষাকে দাবিয়ে রেখে রাষ্ট্র নিজেকে নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে। পাহাড়ে রাষ্টে্র পক্ষ থেকে বৈষম্য বিলোপের ব্যবস্থা না করে উল্টো বৈষম্য, নিপীড়নের চাকা অব্যাহত রেখেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আদিবাসীদের বিষয়ে রাষ্ট্র নির্বাক। ক্ষমতার মসনদে বসে আদিবাসীদের হাহাকার এই সরকার দেখতে পাচ্ছে না।'
অ্যাডভোকেট নিকোলাস চাকমা বলেন, 'ধর্ষকের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে, ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে রাষ্ট্র আদিবাসীদের বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়। সংবিধানের দোহাই দিয়ে এই রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নের মাধ্যমে আদিবাসীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে চলেছে।'
অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, 'খাগড়াছড়িতে আমাদের ভাই-বোনদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডগুলো এই সরকারের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এই হচ্ছে এনজিওবাদী ফ্যাসিস্ট সরকারের নমুনা।'
তিনি আরও বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিতে না থাকলে, বাংলাদেশও শান্তিতে থাকবে না। আদিবাসীরা সবকিছু প্রতিহত করে সামনের দিকে আগাবে।'
মুক্তা বাড়ৈ বলেন, 'খাগড়াছড়িতে আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে হওয়া হামলার বিচার করতে রাষ্ট্র আজ ব্যর্থ। রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ষকদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের ওপর হওয়া নিপীড়ন ও নির্যাতনকে ছাত্র যুব সমাজ আর মেনে নিবে না।'
বিক্ষোভ সমাবেশের পরে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
এই সমাবেশে সংহতি জানিয়েছে আদিবাসী ও প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসমূহ।