জাকসু নির্বাচন স্থগিত নয়, প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে রিট দায়ের করেছেন অমর্ত্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে প্রার্থিতা পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন অমর্ত্য রায় জন। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তার আইনজীবী মানজুর আল মতিন।
মানজুর আল মতিন বলেন, 'কিছু কিছু গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে অমর্ত্য রায় নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট করেছেন, যা একেবারেই সত্য নয়। সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর প্রার্থিতা হঠাৎ করে বাতিল করা হয়। প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই শেষে আপিল করার সুযোগ থাকলেও তাকে তা দেওয়া হয়নি। কোনো শুনানি বা চিঠি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে।'
অন্যদিকে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট করার খবরকে গুজব আখ্যা দিয়ে অমর্ত্য রায় নিজেই দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, 'জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট নামে যেসব সংবাদ হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি এখনও কোনো রিট করিনি। আর করলে তা কেবল প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে করবো। নির্বাচন স্থগিত বা বানচালের জন্য কোনো রিট করবো না।'
সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, অমর্ত্য রায় নির্বাচন স্থগিত চেয়ে কোনো রিট করেননি। প্যানেলের এক ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়, 'ভুল সংবাদ দেখে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।'
প্রার্থিতা বাতিলের কারণ
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর শনিবার নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র অমর্ত্য জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য। এজন্য তার নাম তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম, সদস্য অধ্যাপক এম মাফরুহী সাত্তার ও অধ্যাপক লুৎফুল এলাহীও স্বাক্ষর করেন।
গতকাল রোববার অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও জাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ব্যারিস্টার সারা হোসাইন তার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারী। এটি ন্যায়বিচারের নীতি এবং সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। নোটিশে আরও বলা হয়, '১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থিতা বহাল করতে হবে। অন্যথায়, এটি ধরে নেওয়া হবে যে ন্যায়বিচার প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে।'
নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের বক্তব্য
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, ১৭ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় অমর্ত্য রায়ের নাম থাকলেও সাত দিন পর তা বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম বলেন, 'সিন্ডিকেট থেকে জানানো হয়েছে অমর্ত্য নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। জাকসু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারেন না। তাই তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।'
রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, 'আমরা লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছি। সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে অমর্ত্য রায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তাই তার প্রার্থিতা পুনর্বহালের সুযোগ নেই। তিনি আদালতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইনজীবী শিশির মনিরকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে প্রশাসন।'