আওয়ামী আমলে পুলিশে অনিয়ম, দুর্নীতির ফিরিস্তি দিলেন সাবেক আইজিপি মামুন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ ও প্রশাসনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাজসাক্ষী হিসেবে জেরায় তিনি এসব তথ্য দেন। মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে মামুনও আসামি ছিলেন। তবে পরে রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মামলার বিচারে সহায়তা করেন তিনি।
জেরায় মামুন জানান, পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকলেও তাকে সব বৈঠকের বিষয়ে জানানো হতো না। রাতে এসব বৈঠক হতো তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায়। বৈঠকের তথ্য জানতে তাকে সোর্সের ওপর নির্ভর করতে হতো।
তিনি আরও বলেন, 'আমার অধস্তন যেসব অফিসার ওইসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন, তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা শোনেনি। আমি কোনো ব্যবস্থা নিইনি কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এসব বৈঠক হতো। তবে অনিয়ম জানার পরও আমি পদত্যাগের চেষ্টা করিনি। এটা সত্য নয় যে, সুবিধাভোগী হওয়ার কারণে পদত্যাগ করিনি।'
মামুন বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় রাত্রীকালীন এসব বৈঠক তিনি আইজিপি থাকার সময় যেমন হতো, আগেও হতো। আইজিপি পদে থেকেও তাকে এ ব্যাপারে জানানো হতো না।'
জেরায় মামুন আরও জানান, র্যাবের উত্তরা ইউনিটের কম্পাউন্ডে টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেলের বন্দিশালা র্যাব কর্তৃক পরিচালিত হতো। তবে ওই বন্দিশালা তার নির্দেশে তৈরি বা পরিচালিত হয়নি এবং তার নির্দেশে কাউকে আটকও রাখা হয়নি। ব্যারিস্টার আরমানকে তার নির্দেশে বন্দি করা হয়েছিল বলেও তিনি অস্বীকার করেন।
পুলিশের সাবেক আইজিপি মামুন আরও বলেন, 'অন্যায়-অনিয়মের মাধ্যমে আমি সুবিধাভোগ করেছি—এ অভিযোগ সত্য নয়। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বিধিবিধান অনুযায়ী অধস্তন কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছি।' আইজিপির সঙ্গে ডিআইজিদের বৈঠকে মতামত দেওয়ার সুযোগও ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাইব্যুনালে মামুন আরও দাবি করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোটের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ব্যালট বাক্স ভরে রাখার পরামর্শ দেন। এ তথ্য তিনি সোর্স থেকে জানতে পেরেছিলেন। ওই নির্বাচনে অনিয়মের কথা জানার পর তিনি অধস্তন কর্মকর্তাদের বিরত থাকতে বলেছিলেন, তবে কেউ শুনেছে, কেউ শোনেনি।
এই মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে নিয়োগ পাওয়া স্টেট ডিফেন্স আমির হোসেন তাকে জেরা করেন। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর মামুন আদালতে তার জবানবন্দি দেন।