সাদাপাথর লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর এলাকা থেকে পাথর লুটের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে মোহাম্মদ কামাল মিয়া (পিচ্চি কামাল, ৪৫), মো. আবু সাঈদ (২১) এবং মো. আবুল কালাম (৩২) কোম্পানীগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে আটক হন। অপরদিকে, ক্রাশ করা সাদা পাথর ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় চেকপোস্টে ইমান আলী (২৮) ও জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৫) ডাম্প ট্রাক ভর্তি পাথরসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, "তাদের বিরুদ্ধে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় আজ শনিবার আদালতে প্রেরণ করা হবে।"
এর আগে, শুক্রবার অজ্ঞাতনামা ২,০০০ জনকে আসামি করে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় মামলা করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে কোটি টাকার পাথর লুট করছে। সরকারি কোয়ারি থেকে এই লুটপাট 'খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২'-এর ধারা ৪(২)(ঞ) এবং 'খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২'-এর বিধি ৯৩(১) লঙ্ঘন, পাশাপাশি দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৯ ও ৪৩১ ধারার অপরাধ।
এতে লুটে জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
গত তিনদিনে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া প্রায় এক লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করেছে। তবে মোট কত পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাদাপাথর এলাকায় ব্যাপক লুটপাট শুরু হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে জড়িত। ধলাই নদীর উৎসমুখে জমে থাকা বিপুল পাথর দিনের বেলা প্রকাশ্যে নৌকায় সরিয়ে নেওয়া হয়; শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়, এমনকি নদীতীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির ১৬ জন নেতার নেতৃত্বে সাদাপাথর লুট হয়েছে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও একাধিক নেতা জড়িত। ইতোমধ্যে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ৭ দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে লুটপাটে জড়িতদের তালিকা আদালতে দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ'-এর (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট করেন সরওয়ার আহাদ এবং শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।