চাকুরিচ্যুতদের হামলায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এইচআর হেডসহ আহত ১৫

চাকুরিচ্যুতদের হামলায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এইচআর হেডসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। আজ বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টায় দৈনিকবাংলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত সিকিউরিটি গার্ড শাহিনুরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর এইচ আর হেড আমির হোসেনকে ভর্তি করা হয়েছে স্কয়ার হাসপাতালে।
জানা যায়, হামলাকারীদের হাত থেকে ব্যাংকের তিনজন ডিএমডিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
টানা ৮ কার্যদিবস আন্দোলনকারীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। এ ব্যাপারে পল্টন থানায় মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আল-আরাফাহ টাওয়ারে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করার জন্য পার্শ্ববর্তী সুরমা টাওয়ারে বসার ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল ৪টায় ব্যাংকের তিনজন ডিএমডি ও এইচ আর হেড আমির হোসেনসহ কয়েকজন সুরমা টাওয়ার থেকে নেমে গাড়িতে উঠছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছুটে এসে তাদের গাড়ি ঘিরে ধরেন এবং এইচআর হেড আমির হোসেনকে বেধড়ক মারধর করেন।
তাদের উদ্ধার করতে ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডরা ছুটে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে যখম করা হয়। কয়েকশ' হামলাকারী লাঠিসোটা নিয়ে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে।
আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল স্কয়ার হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- এইচআর হেড আমির হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড শাহিনুর, লিটন (২৫), ইলিয়াস (৩৮), ফাহিম (১৯), রকি হোসেন (২৬), তোফায়েল ৩২, নুর আলম ৪২, আরিফ (২৫), জাকির হোসেন (২৫), সাগর (২৯), লুৎফর, ফারুক ও সোহেল।
ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়ম না মেনে নিয়োগ এবং চাহিদার তুলনায় বেশি নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটে অনেক। এমনকি ৬ শতাধিক কর্মকর্তার নিয়োগ দেওয়া হয় সরাসরি তৎকালীন চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে। যার অনুমোদন নেওয়া হয়নি ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকেও।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন তদারক সংস্থার তদন্তে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অসংগতি সামনে চলে আসে।
বিষয়টি নিয়মের মধ্যে আনার লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে চিহ্নিত ১ হাজার ৪১৪ কর্মকর্তার মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরমধ্যে অকৃতকার্য ৫৪৭ জনকে অব্যাহতি দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এই চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা গত ২৮ জুলাই সকালে আকস্মিক আল-আরাফাহ ইসলামী বাংকের হেড অফিসের প্রবেশমুখে জড়ো হয়ে মানবঢাল তৈরি করে। এরপর থেকে গত ৮ দিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা একইভাবে প্রধান গেটে অবস্থান করে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রতিদিন কিছু নতুন নতুন মুখ আসছে আল-আরাফাহ টাওয়ারের সামনে। এখনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে আন্দোলনকারীদের সরাতে পুলিশ কোনো শক্তি প্রয়োগ করেনি। তবে তাদের অবস্থান ও গতিবিধির উপর তীক্ষ্ণ নজরদারি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, 'চাকরিচ্যুতরা আমাদের কাউকে অফিস করতে দিচ্ছে না। তারা বলপ্রয়োগ করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। শতশত কর্মীর কর্মক্ষেত্রকে তারা ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন না করে গুরুতর অপরাধ করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাজার হাজর কর্মীর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।'
মতিঝিল জোনের একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, 'এর আগেও আরও চারটি ব্যাংকের কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কিন্তু চাকরিচ্যুতরা এভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারেনি। তাদের শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হয়েছে। তবে আল-আরাফাহ ইসলামী বাংকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মানবিকভাবে সামলানোর চেষ্টা করছেন। যাতে বাস্তবতা বুঝতে পেরে বিক্ষুব্ধরা ঘরে ফিরে যায়।'
তিনি বলেন, 'কিন্ত ঘটনার সঙ্গে এখন পিছন থেকে কিছু গ্রুপ কাজ করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।'
এদিকে চাকরিচ্যুতদের দাবি, তাদের কোনো নোটিশ না দিয়ে অন্যায়ভাবে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তাই চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
এ ব্যাপারে ব্যাংকের মানব সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, 'ঘোষণা দিয়ে তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যথাযথ বিধান মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো রকম বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই। এ সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি রাষ্ট্র সম্পৃক্ত। এখানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এককভাবে কিছু করার নেই।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, 'এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নজিরবিহীন দুর্নীতি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি এলাকার লোকজনকে যাচাই-বাছাই ছাড়া সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে সারা দেশের মেধাবীরা বঞ্চিত হন। দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এভাবে চাহিদার অতিরিক্ত ঝাঁকে ঝাঁকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি।'
তিনি বলেন, 'এখন এই চাকরিচ্যুতদের মানবিক দিক সামনে এনে গোটা ব্যাংকিং সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও যথাযথ পদক্ষেপ অব্যহত রয়েছে।'