জনকণ্ঠ দখলের অভিযোগ, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র জনকণ্ঠের সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নিজেরাই একটি সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন করেছে পত্রিকাটির একদল কর্মী, যারা গত বছর ৫ই অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে পত্রিকাটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
শনিবার তাদের কয়েকজনকে মালিকপক্ষ চাকুরিচ্যুত করার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সম্পাদককে অবাঞ্চিত ঘোষণা ছাড়াও তারা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।
জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক শামীমা এ খান শনিবার রাতে ষড়যন্ত্র করে জনকণ্ঠ ভবনে 'মব সৃষ্টি করে অবৈধভাবে দখলের' অভিযোগ করেছেন। তার এ অভিযোগ গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চিফ অপারেটিং অফিসার অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ও পত্রিকাটির প্লানিং অ্যাডভাইজর জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
আফিজুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন শিশির উভয়েই বিবিসি বাংলার কাছে জনকণ্ঠ দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জয়নাল আবেদীন শিশির বিবিসি বাংলাকে বলেন, 'দখলের অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্য। আমরা এখনো মালিকানা ও প্রকাশনায় নেই। পরিচালনার জন্য শুধু একটা বোর্ড করেছি। কর্মরত সব সাংবাদিকদের সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
এদিকে আজ রোববার সকাল থেকেই পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনের প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম দেখা যাচ্ছে না। এর বদলে লেখা হচ্ছে: 'সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের সদস্য প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোব প্রিন্টার্স লি: ও জনকণ্ঠ লি: থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত'।
এর আগে গতরাতে জনকণ্ঠ ভবনের সামনে এক সমাবেশে মীর জসিম নামে এক ব্যক্তি নিজেকে নতুন সম্পাদকীয় বোর্ডের একজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, 'জনকণ্ঠ ও সম্পাদক হিসেবে যিনি আছেন তাকে সম্পাদকের পদ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তবে তিনি প্রকাশক হিসেবে থাকবেন। তার দুই ছেলেকে জনকণ্ঠে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠার পর এটি এক সময় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর সদস্য ছিলেন, তাদের নিয়ে 'সেই রাজাকার' শিরোনামে সিরিজ প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছিল।
তবে পরবর্তী সময়ে এটি আওয়ামী লীগপন্থী পত্রিকা হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠে। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এর নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ বিরোধীদের বিশেষ করে জামায়াত ও এনসিপি-সমর্থিত ব্যক্তিদের হাতে চলে যায় বলে আলোচনা আছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার অনেক সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মালিকানা থেকে শুরু করে কর্মীপর্যায় পর্যন্ত পরিবর্তন হয়েছে। কোথাও কোথাও চাপ দিয়ে বা মব তৈরি করেও পরিবর্তন আনার অভিযোগ আছে।