আওয়ামী শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল: আদিলুর রহমান

বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, 'ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনে নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। শুধু তাই নয় র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা।'
রোববার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে 'প্রথম জুলাই বিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে' (আইসিজেআর-১)- প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড থট (আরআইটি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ১৩টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদিলুর রহমান আরও বলেন, কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে 'অপরাধী' হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাঁধা দেওয়া হতো।
জুলাই বিপ্লবের প্রথম আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনকে শুধু আলোচনা নয়, বরং একটি 'সাক্ষ্য প্রমাণে'র প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারদের কান্না, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গেঁথে থাকা গুলির চিহ্ন—এসবই একদিন ন্যায়বিচারের নির্মাণকাজে প্রমাণ হয়ে উঠবে।'

জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণীকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা বিপদজনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
এর আগে সম্মেলনের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় তারা সকল শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শহীদদের সনদ চান।
এছাড়া, উদ্বোধনী অংশে 'ইন্ডিয়ান হেজিমোনি অ্যান্ড জুলাই রেভুলিউশন ২০২৪'- শিরোনামে কি-নোট বক্তব্য প্রদান করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মেলনটির আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।
এদিকে সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মালয়েশিয়ার পার্টি কেডিলান রকইয়াট (পিকেআর)-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নুরুল ইজজাহ আনোয়ার, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস্ চৌধুরী।