নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

দেশে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে এমন মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, "যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পুরো সমাজের মধ্যে আবার একটা নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।"
আজ শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট আয়োজিত 'নাগরিক সংহতি সমাবেশ'-এ এসব কথা বলেন তিনি। 'যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেওয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে জামায়াত-শিবিরের হামলার প্রতিবাদে' এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের আশায় মানুষ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে সরকার নিষ্ক্রিয় থেকেছে, অনেক সময় তাদের অস্তিত্বই অনুপস্থিত মনে হয়েছে। "বরং হামলা-নির্যাতনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে," অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, "নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, শিক্ষকসহ যেকোনো স্তরের মানুষ যখন নিজেদের অধিকার আদায়ে কথা বলেন, তখনই তাঁদের ওপর হামলা হয়। আর যারা হামলা করে তারা রক্ষা পায়, কারণ সরকারের ভেতরেই তাদের মদদদাতা রয়েছে।"
গেল ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের এক শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা হয়। এর প্রতিবাদে ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশেও পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার অভিযোগ ওঠে। উভয় ক্ষেত্রেই 'শাহবাগবিরোধী ঐক্য' ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের হামলায় জড়িত থাকার দাবি করেন জোটের নেতারা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত এ টি এম আজহারুল ইসলামকে নির্দোষ ঘোষণার সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, "এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা দলিল-প্রমাণসহ ছিল। আদালত যদি কোনো ত্রুটির কারণে আগের রায় বাতিলও করে, তাহলেও যুদ্ধাপরাধের সত্যতা তো মুছে ফেলা যায় না।" তিনি বলেন, ইতিহাসে চিহ্নিত একজন যুদ্ধাপরাধীকে নির্দোষ ঘোষণা করা মানে ইতিহাস বিকৃতি, শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
তিনি আরও বলেন, "জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বর্তমান তরুণ কর্মীদের অনেকেই '৭১ সালে জন্মায়নি। তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি ঠিকই, কিন্তু তারা যদি সেই রাজনীতি ধারণ করে, তবে সেই অপরাধের দায় থেকেও তারা মুক্ত থাকতে পারে না।"
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে 'ইসলামবিরোধী' হিসেবে প্রচার করাকে ভয়াবহ মিথ্যাচার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, "১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং, তাঁদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলা মানে ইসলামেরই অবমাননা করা।"
ইতিহাস বিকৃতি ও বৈষম্যমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি যত দিন থাকবে, তত দিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই চলবে। এই লড়াইই হবে এক মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথচলার ভিত্তি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন। প্রবল বৃষ্টির কারণে আয়োজকেরা অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করেন। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক জাবির আহমেদ।