এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা দিতে যাত্রা শুরু ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’-এর

'এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা' স্লোগানকে সামনে রেখে সরকারি সেবাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ 'নাগরিক সেবা বাংলাদেশ'-এর পাইলট প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৬ মে) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তারা রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকার নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, কর ফাইলিংসহ বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা সরবরাহ করবেন। এর মধ্যে গুলশান ও উত্তরার কেন্দ্র ইতোমধ্যে চালু হয়েছে এবং শিগগিরই নীলক্ষেত কেন্দ্র চালু হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বলেন, 'দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমাতে, হয়রানি রোধে ও ভোগান্তিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।'

তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য একই মডেলে 'প্রবাসী সেবা কেন্দ্র' গঠনের বিষয়ে আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সেবার মান ও সমন্বয় ধরে রাখতে নিয়মিত আপডেট নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
'আমাদের লক্ষ্য, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সেবা প্রদানে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করা এবং যত দ্রুত সম্ভব সব সেবা এই উদ্যোগের আওতায় আনা,' বলেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, 'শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই যেন তারা জন্ম নিবন্ধন সনদ পায়, সেটি নিশ্চিত করাও নাগরিক স্বীকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।'
সেবা কেন্দ্রগুলোর মালিকানা ও পরিচালনা বিষয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা জায়গার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে ভাড়া পরিশোধ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ভাড়া হ্রাসকৃত হারে নির্ধারিত হবে। উদ্যোক্তারাই সেবা কেন্দ্রের নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইউটিলিটির দায়িত্ব নেবেন। সেবার মান বজায় না রাখলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'নাগরিক সেবা বাংলাদেশ শুধুই একটি সেবা প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি সরকার ও জনগণের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর একটি সেতুবন্ধন। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে এই উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সারাদেশব্যাপী সম্প্রসারণযোগ্য এক রূপান্তরের সূচনা করবে।'
আইসিটি বিভাগের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, শূন্য বাজেটে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, দেশের বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করেই অগ্রগতি সম্ভব।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগের আওতায় পোস্ট অফিসসহ অব্যবহৃত সরকারি স্থাপনাগুলোকে আধুনিক কো-ওয়ার্কিং স্পেসে রূপান্তর করে সেগুলো স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলোকে নাগরিকদের হাঁটার দূরত্বের মধ্যে রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই কেন্দ্রগুলো থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা ডিজিটাল সেবা প্রদান করবেন, যা যেমন সাধারণ নাগরিকদের সেবাপ্রাপ্তি সহজ করবে, তেমনি যুবসমাজ ও নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।'
তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার নীতিমালায় অনুপ্রাণিত ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে পরিচালিত এই উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।
ফয়েজ তৈয়্যব জানান, একটি কার্যকর জাতীয় ডিজিটাল সেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। পাশাপাশি প্রথম ধাপে কঠোর বাছাইয়ের মাধ্যমে ২০০ নারী-পুরুষকে নির্বাচিত করে তাদের ডিজিটাল লিটারেসি, গ্রাহকসেবা ও ডিজিটাল সেবা প্রদানের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ জন (৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ) উদ্যোক্তাকে সনদ প্রদান করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।