যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে: উপদেষ্টা আসিফ—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি লেখেন, 'নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।'
আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী বলে আখ্যায়িত করে তিনি আরও লেখেন, 'গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।'
এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির বিচারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমর্থকেরা।
হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে রাত ১০টার দিকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় সেখানে পুলিশ ও র্যাবের ভারী উপস্থিতি দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে এ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত।
তিনি লেখেন, 'গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত দশটা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।'
তিনি আরও লেখেন, 'যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।'
এদিকে উপদেষ্টা আসিফের যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ বিষয়ক পোস্টের পরপরই পালটা একটি পোস্ট করেছেন সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি তার ফেসবুক পেজের পোস্টে আওয়ামী লীগের এ দুটি অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধকরণের পদক্ষেপকে 'প্রহসন' বলে উল্লেখ করেন।
তিনি লেখেন, 'যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ করার প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।'
তিনি আরও দাবি করেন, 'আইসিটিতে [আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল] দল হিসেবে বিচার করার বিধান যুক্ত করতে হবে।'
প্রায় একই সময়ে হুবহু একই লেখা নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন হাসনাত আবদুল্লাহও।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে থাকা শীর্ষ ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও হাসনাত আবদুল্লাহ।
এর ঘণ্টাখানেক আগের এক পোস্টে নাহিদ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন।
তিনি লেখেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।'
সবশেষে তিনি সবাইকে এনসিপি নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, 'বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।'
এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযুক্তের সংখ্যা, দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির প্রয়োজন এবং কাজের চাপ বিবেচনায় দ্বিতীয় এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে।
ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এর আগে এদিন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন।
তিনি লেখেন, 'দল হিসাবে [আওয়ামী] লীগের বিচারের প্রভিশন যুক্ত করা হবে। ফ্যাসিস্ট লীগের বিচার হবেই। বিচারকাজ তরান্বিত করতে ট্রাইবুনাল-২ গঠিত হচ্ছে।'
ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) এটির অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন।