৬ দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-রেলপথ অবরোধ পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের

ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় বাতিল ও চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলামসহ ছয় দফা দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, রাজশাহীতে রেলপথ ও সড়ক অবরোধ ও খুলনায় ট্রেন আটকে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তারা।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকা দখলে নেয় কুমিল্লার পলিটেকনিক ও কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সিসিএন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে দুপুর ১২টায় রাজশাহী নগরীর ভদ্রা মোড় এলাকায় রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যোগ দিয়েছেন রাজশাহী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া সকাল ৯টার দিকে খুলনা রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন নগরীর বয়রা জংশন এলাকায় ট্রেন আটকে দেয় পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। তবে পরে প্রশাসনের অনুরোধে ১২ টা ১০ মিনিটে তারা ট্রেনটি ছেড়ে দেন।

সিলেটেও ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সেনাবাহিনী-পুলিশের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
এছাড়া কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে সকাল সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের মজমপুর ট্র্যাফিক অফিসের সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে চলে যায়।

চট্টগ্রামেও ছয় দফা দাবিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন তারা। তারা দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত কারিগরি শিক্ষার মর্যাদার জন্য হুমকি।
ছয় দফা দাবিগুলো কী?
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র 'কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা' মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও 'কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন' গঠন করতে হবে।
আর ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি সমূহ না মানা হবে ততক্ষণ তারা রাজপথ ছাড়বেন না।