পহেলা বৈশাখের উৎসব ভণ্ডুলে ‘সাম্প্রদায়িক অপচেষ্টা’— বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদ

পহেলা বৈশাখের মতো অসাম্প্রদায়িক উৎসবকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে 'সাম্প্রদায়িক উগ্র গোষ্ঠীর অপচেষ্টা ও বিতর্ক সৃষ্টির' তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, পহেলা বৈশাখের উৎসব, পোশাক বা মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যানার নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রশ্ন তুলে সমাজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, "এই ধরনের বক্তব্য ও হুমকি ৫০ ও ৬০ এর দশকের সাম্প্রদায়িক উগ্রতার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।"
তারা উল্লেখ করেন, পহেলা বৈশাখ বহুকাল ধরে পালিত হয়ে আসা ধর্মনিরপেক্ষ একটি সাংস্কৃতিক উৎসব, যা সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে। এর সঙ্গে ধর্মীয় কোনো বিরোধ নেই।
বিবৃতিতে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের— বিশেষ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের— ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের মতে, এসব প্রতিষ্ঠান পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িক বক্তব্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
বিশিষ্ট নাগরিকরা আরও বলেন, পহেলা বৈশাখের সময় দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোও নিজেদের উৎসব পালন করে থাকে। এই সকল উৎসব একসাথে আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এসব উৎসবে ব্যাঘাত ঘটানোর যেকোনো চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে তারা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যারা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার বা উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।
একইসঙ্গে জাতীয় কবিতা পরিষদ কর্তৃক সাম্প্রদায়িক উস্কানির প্রতিবাদে গৃহীত কর্মসূচি ও পাঁচ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানান তারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন— মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল; 'নিজেরা করি'র সমন্বয়ক খুশী কবির; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান; ভূমি সংস্কার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা; সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব; আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না; সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন; লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ; কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী; বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ; সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী; মানবাধিকারকর্মী সাঈদ আহমেদ এবং আদিবাসী অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ।