টানা ঈদের ছুটিতে জমজমাট চট্টগ্রামের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো

সাধারণ সময়ে চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় দর্শানার্থীর সংখ্যা থাকে দুই থেকে আড়াই হাজারের মতো। এবারের টানা ছুটিতে ঈদের প্রথম তিন দিনে এই চিড়িয়াখানায় ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী পরিদর্শন করেছেন। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত সাত গুণ বেশি। সাদা বাঘ, ক্যাঙ্গারু, জেব্রা, জলহস্তিসহ নানান প্রাণি নজর কারছে এবারও। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব প্রাণি দেখতে ছুটে আসছেন ছোট, বড় নানান বয়সের মানুষ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'ঈদের প্রথম তিন দিনে ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী এসেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে চাপ কিছুটা কমবে হয়তো। তবে একেবারে শনিবার পর্যন্ত চাপ থাকবে। দর্শনার্থীদের কাছে পাঁচটি সাদা বাঘসহ মোট ১৮টি বাঘ, এক জোড়া জলহস্তি, ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন জাতের প্রাণি, পাখি আকর্ষণ।'
শুধু চিড়িয়াখানা নয়, চট্টগ্রাম নগরীর ও এর আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। এবারের ঈদকে কেন্দ্র ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন কেন্দ্র, দর্শনীয় স্থান, নামি-দামি রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় করছেন মানুষ।

নগরীর ফয়েস লেক, সি ওয়াল্ড (ওয়াটার পার্ক), ডিসি পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, স্বাধীনতা পার্ক, প্রজাপতি পার্ক, ফৌজদারহাট থেকে একেবারে পতেঙ্গা পর্যন্ত টোল সড়কের পাশের সৈকত পাড়, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেরা এলাকা, বোট ক্লাব, নেভাল এরিয়া, কর্ণফুলী টানেল, আনোয়ার পারকি সমুদ্র সৈকত, ওয়েল এগ্রো পার্ক, মাটিটা, ক্যাফে ২৪, ভাটিয়ারির সানসেট পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠছে এসব দর্শনীয় স্থানগুলো।
ফয়েস লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ ঘোষ টিবিএসকে বলেন, 'ঈদের দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই হাজার দর্শনার্থী, ঈদের দ্বিতীয় দিন ছয় হাজার ও তৃতীয় দিন ছয় হাজার দর্শনার্থী এসেছেন ফয়েস লেক, সি ওয়াল্ড, ফয়েস লেক বেইজ ক্যাম্পে। দর্শণার্থীদের চাপ শনিবার পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করছি। রিসোর্টের ৪০টি কক্ষের ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বুকিং আছে আগামী ১০-১২ এপ্রিল পর্যন্ত। বিশেষ করে প্রবাসীরা দেশে এসে একটি ভালো ও উন্নত পরিবেশ চান। তাদের বুকিং বেশি এবার।'
শহরের বাইরে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান, খৈয়াছরা ঝর্ণা, নাপিত্তা ছড়া ঝর্ণা, মহামায়া ইকো পার্ক, আরশি নগর ফিউচার পার্ক, হিলস ডেল মাল্টি ফার্ম, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পাশ্ববর্তী সমুদ্র সৈকতে ঈদের দিন থেকেই দর্শনাথীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে। এছাড়া সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী, সহস্রধারা ঝর্ণা, ফটিকছড়ির বিভিন্ন চা বাগান, রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল এ্যভিয়ারি পার্কসহ বিভিন্ন পার্ক ভ্রমন করছেন ঈদের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থীরা।

সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন টিবিএসকে বলেন, 'সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি, ডিসি পার্ক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্থানগুলো প্রচুর মানুষ আসছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'
ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম রিজিয়নের পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক টিবিএসকে বলেন, 'টানা ঈদের বন্ধে দর্শনার্থীদের চাপ আছে। বিশেষ করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সমুদ্র সৈকতসহ চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ সৈকত পাড়, পাশপাশের বিভিন্ন পর্যটক স্থানে মানুষজন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করছেন। দর্শনীয় স্থানগুলো ওয়াচ-টাওয়ার, হেল্প ডেস্কের পাশাপাশি সাদা পোশাকে টুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।'