রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের সুপারিশে 'বিএনপির না'!

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আজ রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত মতামত জমা দেয়।
রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখা, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনা, সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছে বিএনপি।
জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্র না বলে জনগণতন্ত্র বা নাগরিকতন্ত্র, বা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাংলায় বলছেন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। রিপাবলিক শব্দ ইংরেজিতে কী থাকবে, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইংরেজিতে কী থাকবে; কিন্তু বাংলার মধ্যে উনারা নাগরিকতন্ত্র এবং জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ লিখতে চান। সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না'।
'দীর্ঘদিনের প্র্যাক্টিসের (চর্চা) মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নিয়েছে রাষ্ট্রের নাম, এখন এই বিষয়টা দিয়ে যে আসলে কতটুকু কী অর্জন হবে, সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে, সেজন্য আমরা একমত নই', যোগ করেন তিনি।
বিএনপি জানিয়েছে, সংবিধানের প্রস্তাবনা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি, যেটা এক নম্বরে থাকা উচিত ছিল। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রস্তাবনা, অথচ সেটিকে পুরোপুরি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনেকটা পুনর্লিখনের মতো। যেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ-অভুত্থানকে এক কাতারে নিয়ে আসা হয়েছে, যেটা সমুচিত বলে আমরা মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, 'এটাকে অন্য জায়গায় রাখার বা তফশিল অংশে রাখার বা স্বীকৃতি দেয়ার বিভিন্ন রকম সুযোগ আছে, সেটা আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমরা পরে প্রকাশ করব। কিন্তু প্রস্তাবনা অংশে আমরা চাই, যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থা—ফিফথ এমেন্ডমেন্টের পরে গৃহীত হয়েছিল বাংলাদেশের সকল জনগণের অভিপ্রায় মোতাবেক, সে জায়গায় বহাল থাকা উচিত'।
জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন বলেন, 'জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যদি আলাদা কোনো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে বারবার এনআইডি বিষয়ক সমস্ত সহযোগিতার জন্য অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হবে।'।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হয়, তবে সেই আইন এখনো বাতিল করা হয়নি। এ আইন বাতিল করা উচিত এবং এনআইডি ইসির অধীনেই থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করা ইসির সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। এ সংক্রান্ত আইনে একটি মুদ্রণত্রুটি রয়েছে, যা ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও এখনো সংশোধন করা হয়নি। 'এই ভুলের কারণে ইসি এ বিষয়ে শুনানি করতে পারছে না, যা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারে,' যোগ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জন্য সংসদীয় কমিটির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিএনপি সেটির সঙ্গেও একমত নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তন ক্ষেত্রেও বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থা বহাল রাখতে চায় বলে জানিয়েছে। এনিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, 'বর্তমানে সংবিধানে যে ধারাগুলো আছে, অনুচ্ছেদগুলো আছে, তার মধ্যে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজন) প্রস্তাব অনুসারে, মূলনীতির যে প্রস্তাবগুলো আছে সেগুলোর হয়ত সংশোধনী আনা যায়। তবে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থায় বহাল রাখার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।'
উল্লেখ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশন ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হলেও এখনও অনেক দলের মতামত জমা দেয়া বাকি।
এখন পর্যন্ত যেসব দল মতামত জমা দিয়েছে, দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও 'আম জনতার দল', রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও নাগরিক ঐক্য।