ঢাকার টেকনিক্যাল মোড়ে রোড ডিভাইডারের নির্মাণকাজ ফের শুরু, কাজে ধীরগতি-নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত গাবতলি এলাকার টেকনিক্যাল মোড়ের রোড ডিভাইডারের কাজ প্রায় দুই বছর ধরে ঝুলে আছে। এতে ওই এলাকায় রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
যদিও সম্প্রতি কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে, তবে অগ্রগতি ধীরগতির। এছাড়া, কর্মী ও পথচারীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারির দিকে গাবতলি এলাকায় রোড ডিভাইডারের কাজ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সেখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কাজও শুরু হয়। কিন্তু কাজ শুরুর কিছুদিন পরে মে মাসের দিকে রোড ডিভাইডারের কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কেঁটে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এম রহমান ইন্টারন্যাশনাল।
বিষয়টি নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদ পরিবেশন করলে এবং পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
অভিযোগের ভিত্তিতে তখন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করায় সংশ্লিষ্ট কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা উত্তরের দুজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কালো তালিকাভুক্ত হলেও পরবর্তীতে মাঝ পথে থেমে যাওয়া কাজ আর সম্পন্ন করেনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এমনকি, ওই এলাকার ফুটওভার ব্রিজের কাজও আর আগায়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এতদিন পড়ে আছে রোড ডিভাইডারের দুটি অংশ।
সম্প্রতি টেকনিক্যাল মোড় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েকদিন ধরে ওই অংশে আবার কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন, কিন্তু কাজে তেমন গতি নেই।
টেকনিক্যাল থেকে মিরপুরগামী রাস্তার রোড ডিভাইডারের বড় একটি অংশে অর্ধেক ঢালাই সম্পন্ন হওয়া রড উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। সেখানে নতুন করে আবার কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, টেকনিক্যাল থেকে কল্যাণপুরগামী রাস্তায় রোড ডিভাইডার অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
এছাড়া, টেকনিক্যাল মোড়ের কাছেই ফুটওভার ব্রিজের অসমাপ্ত কাজের অংশ দেখা যায়। ব্রিজের ভিত তৈরি হলেও এর ওপরে এখনও বসানো হয়নি ফুটওভার ব্রিজের লোহার কাঠামো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "'সমন্বয়ের অভাব' কথাটি প্রায়ই শোনা যায়, কিন্তু আরও বড় সমস্যা হলো মূলত ন্যাশনাল ফিজিকাল প্ল্যানের অনুপস্থিতি, যা সমন্বয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া কোনো জবাবদিহিতা থাকে না, ফলে কাজ দীর্ঘায়িত হয়।"
তিনি বলেন, এমন পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
"নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, এবং প্রতিটি প্রকল্পে নিরাপত্তার জন্য বাধ্যতামূলক বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে, এবং এর যথাযথভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, সংস্থাগুলোকে নিরাপত্তার মানদণ্ড কার্যকর করতে আরও দৃঢ় হতে হবে," যোগ করেন নুরুল্লাহ।
এখানে কর্মরত কর্মচারী ইয়াসিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা প্রায় ১০ দিন ধরে কাজ করছি। রাস্তাটি অনেক ব্যস্ত হওয়ায় কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা ১০-১২ জন এখন কর্মরত আছি। পুরো কাজ শেষ করতে হলে দুই মাসের বেশি সময় লাগবে।"
তবে এই ব্যস্ততম রাস্তায় কাজ করতে গেলে যতটুকু সেফটি এবং সিকিউরিটি থাকা প্রয়োজন, তা দেখা যায়নি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা বেষ্টনী না দিয়েই কাজ করতে দেখা যায়।
এই এলাকার বাসিন্দা হুমায়ূন মৃধা টিবিএসকে বলেন, "এখানে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়। রোড ডিভাইডার না থাকায় মানুষ ট্রাফিক পুলিশের সিগনাল অমান্য করেই বিভিন্ন দিক থেকে রাস্তা পার হয়। অনেক সময় রোড ডিভাইডারের ভাঙা অংশ দিয়ে বিভিন্ন গাড়ি ইউটার্ন নিতেও দেখা যায়।"
এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী একটি বাসের ড্রাইভার টিবিএসকে বলেন, "টেকনিক্যাল মোড় অতিক্রম করার সময় অতিরিক্ত সতর্ক হলেও দেখা যায়, হুটহাট করে রাস্তায় চলে আসে মানুষ। এতে অনেক সময় হার্ড ব্রেক করেও সামলানো সম্ভব হয় না। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে বিভিন্ন যানবাহন।"
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মিরপুরের টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে (প্রধান সড়ক) একটিসহ চারটি ফুটওভার ব্রিজের কাজ চলছে। একইসাথে চলছে টেকনিক্যাল এলাকার তিন দিকে সড়ক বিভাজকের নির্মাণকাজ।
এদিকে, ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল) নাইম রায়হান খান বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "আমরা আগের ঠিকাদারকে বাদ দেওয়ার কারণে বেশ অনেকদিন নতুন করে টেন্ডার করা সম্ভব হয়নি। এখন মাইশা কনস্ট্রাকশনকে নতুন ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে।"
তিনি আরও বলেন, "টেকনিক্যাল মোড়সহ মোট চারটি এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ বসানো হবে এই প্রকল্পের আওতায়। যেহেতু টেকনিক্যাল মোড়ে ফুটওভার ব্রিজের ভিতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তাই উপরের কাঠামো খুব দ্রুতই বসানো সম্ভব হবে। আমরা রোড ডিভাইডারের কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দিয়েছি।"