জুলাই আন্দোলনে সেনাবাহিনী জড়ালে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দেওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিল জাতিসংঘ: তুর্ক

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ। বলা হয়েছিল, যদি সেনাবাহিনী আন্দোলনের সংহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে, তবে তাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির 'হার্ডটক' অনুষ্ঠানে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
উপস্থাপক উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সরে যায়। এরপর নিকারাগুয়াও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। তিনি প্রশ্ন করেন, 'বড় দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্ত ছোট দেশগুলোকেও প্রভাবিত করছে—আপনি এটি কীভাবে দেখেন?'
উত্তরে তুর্ক বলেন, 'আমি আপনাকে বাংলাদেশের উদাহরণ দিতে চাই। আপনি জানেন, সেখানে জুলাই-আগস্টে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আগের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিল। তখন দমন-পীড়ন চলছিল। সেসময় তাদের জন্য বড় আশার জায়গা ছিল আসলে আমরা কী বলি, আমি কী বলি, আমরা কী করতে পারি এবং আমরা ওই পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করি'।
তুর্ক আরও বলেন, আমরা সেনাবিহিনীকে সতর্ক করেছিলাম, যদি তারা জড়িয়ে পড়ে তাহলে আর শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে থাকতে পারবে না। ফলে আমরা পরিবর্তনটা দেখতে পেলাম।
৫ মার্চ প্রচারিত এ সাক্ষাৎকারে তুর্ক বলেন, 'অধ্যাপক ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, তখনই তিনি আমাকে বলেছিলেন, "আপনি কি একটি তথ্যানুসন্ধানী দল পাঠাতে পারেন? পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করতে পারেন এবং সেখানে যা ঘটছে তা তদন্ত করতে পারেন?" আমরা তা-ই করেছিলাম এবং এটি বাস্তবিকভাবে সহায়ক হয়েছিল'।
তিনি বলেন, 'এটি বাস্তবিকই কাজে লেগেছে। আমি গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলাম, তখন শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল—আমাদের অবস্থান নেওয়ার জন্য, কথা বলার জন্য এবং তাদের পাশে থাকার জন্য।'
বুধবার (৫ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের আন্দোলন চলাকালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সদস্য রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপে তুর্ক বলেন, এই ঘটনায় দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, যা ১২ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের সরকারের কর্মকর্তারা, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠরা পরিকল্পিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধি এবং দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।