কর্পোরেট ও টার্নওভার করে ছাড় চান পোল্ট্রি খাতের উদ্যোক্তারা

পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কর্পোরেট ও টার্নওভার কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এসব কর বৃদ্ধি উৎপাদন খরচ বাড়াবে এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
গতকাল (১৪ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় উদ্যোক্তারা এই দাবি জানান। তারা টার্নওভার কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে পোলট্রি খাতের কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, এই কর বৃদ্ধির ফলে শিল্পের ওপর চাপ বাড়বে এবং সাধারণ ভোক্তার জন্য ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যাবে।
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিয়াব) সভাপতি ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের আহ্বায়ক শামসুল আরেফিন খালেদ বলেছেন, টার্নওভার কর বাড়ানো হলে উৎপাদন খরচ সরাসরি বেড়ে যাবে এবং শিল্পে আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, 'এই খাত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে প্রোটিন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বাড়লে এর চাপ শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপরই পড়বে।'
তিনি আরও জানান, বর্তমানে এই খাতে উদ্যোক্তাদের মুনাফার হার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ হলেও, নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী মোট করের বোঝা দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, 'যে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ২০ শতাংশ এবং যে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ২–৩ শতাংশ, তাদের ওপর একই হারে কর আরোপ করা যুক্তিসংগত নয়।'
কর আদায়ের প্রক্রিয়া নিয়েও জটিলতার কথা উল্লেখ করেন শামসুল আরেফিন।
তিনি বলেন, 'কর্পোরেট কর প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা উচিত—সব ধরনের লাভ ও ক্ষতি হিসেব করে। কিন্তু আমাদের খাতে শুধু পণ্যের বিক্রি থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর আরোপ করা হয়, অন্য খাতে ক্ষতির কোনো সমন্বয় করা হয় না।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, রাজস্ব বাড়াতে পোলট্রি খাতকে টার্গেট করলে এটি একটি বড় সংকট তৈরি করবে।
তিনি বলেন, 'যদি কর অব্যাহতি পুনরায় চালু করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত কর্পোরেট কর ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।'
পোলট্রি খাদ্যের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
তাদের দাবি, ভুট্টা ও সয়াবিন মিল আমদানিতে অগ্রিম কর যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.১ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক, কারণ সরকারি আশ্বাস থাকলেও বাস্তবে কর রিফান্ড প্রায়ই হয় না।
ওয়ার্ল্ড'স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন – বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, 'আমরা মাংস ও ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছি, কিন্তু খাতটি আধুনিকায়নের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। এখন আবার কর্পোরেট কর প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এই অবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পোলট্রি খাতকে করমুক্ত ঘোষণা করা হোক।'
তিনি আরও বলেন, তাদের লক্ষ্য প্রতি বছর মাথাপিছু মাংস খাওয়ার পরিমাণ ২০ কেজি থেকে আরও বাড়ানো, আর ডিমের পরিমাণ ১২২টি থেকে ২০০টিতে উন্নীত করা।
বাংলাদেশ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, 'এরই মধ্যে ২০–২৫ শতাংশ লেয়ার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার সহায়তা না করে যদি চাপই দেয়, তাহলে উৎপাদন কমে যাবে এবং দাম বেড়ে যাবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা এমন ছাড় চাই, যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পোলট্রি খাতকে পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তাযর অবদানকে বিবেচনা না করে অন্যান্য খাতের সঙ্গে তুলনা করা অনুচিত।'
উপস্থিত উদ্যোক্তারা বলেন, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের জোগান কমে গেছে, ফলে প্রোটিনের উৎস হিসেবে পোলট্রির গুরুত্ব বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান-ও উপস্থিত ছিলেন।