প্রস্তাবিত বাজেট প্রাক্কলনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে কম: সিপিডি’র মোস্তাফিজুর

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রাক্কলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যাশা পূরণ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
আজ (৩ জুন) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। বাজেট প্রাক্কালন অনুযায়ী হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়।'
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল (২ জুন) ঘোষিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটের বিশ্লেষণ তুলে ধরে সিপিডি।
বিশ্লেষণে বলা হয়, বাজেটে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের (এলজিআরসি) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে 'ইনোভেশন ল্যাব' স্থাপন, ডিজিটাল জনসেবা বৃদ্ধি, সক্ষমতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
এছাড়া শ্রম সংস্কার কমিশনের (এলআরসি) প্রস্তাবিত দুইটি বাজেট সংক্রান্ত এবং ৭৮টি রাজস্ব সংক্রান্ত সুপারিশের অনেকগুলোই বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ দীর্ঘমেয়াদি হলেও কিছু অদূর ভবিষ্যতেই বাস্তবায়নযোগ্য ছিল।
যেমন, শ্রম অধিকার মেনে চলার ভিত্তিতে কর প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বাজেটে আসেনি। তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী কর্মসংস্থানে বিদ্যমান কর অব্যাহতি ছাড়া নতুন কোনো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
শ্রম অধিকার মনিটরিং সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতেও বাজেটে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর এবং মজুরি বোর্ডের বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও প্রকৃত অর্থে তা উল্লেখযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে সিপিডি।
রাজস্ব আয়ের বিষয়ে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু এটি আগের বাজেটের ভিত্তিতে নির্ধারিত, বাস্তব আয় বিবেচনায় নয়। ফলে প্রকৃত রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে ১৭–১৮ শতাংশ হারে।'
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ৮.৯ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ। মোট ব্যয় জিডিপির ১২.৭ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা সংশোধিত ২০২৪-২৫ বাজেটে ছিল ১৩.৪ শতাংশ। অন্যদিকে রাজস্ব আয় জিডিপির ৯.০ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা আগের ৯.৩ শতাংশ এর চেয়ে কম।
মোস্তাফিজুর বলেন, 'ভারত ও ভুটানের মতো দেশ যেখানে বেশি রাজস্ব আয় করে, সেখানে আমাদের লক্ষ্য আরও বড় হওয়া উচিত। রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করতে হবে। তবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।'
ভ্যাট অব্যাহতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এলএনজি আমদানি করে সরকার ও বেসরকারি খাত। সরকার নিজের ওপর ভ্যাট চাপায় না। তাই বেসরকারি খাত ভ্যাট কমানোর দাবি করেছে।'
তবে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি এবং ভর্তুকি বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিডি। সংস্থাটি জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এলএনজির ভর্তুকি ৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা হওয়ায় স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ব্যাহত হতে পারে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.০ শতাংশ, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ছিল ২০.০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ২৮.৭ শতাংশ।
সিপিডির এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তার সঙ্গে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ জ্যেষ্ঠ গবেষকরা যুক্ত ছিলেন।