শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চক্রান্তের অংশ: ৩৫ উপাচার্য

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে চক্রান্ত বলে মনে করছেন ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
তাদের বক্তব্য, এই আন্দোলন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার একটি চক্রান্তের অংশ।
শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিকে 'নীতিবহির্ভূত' বলেও দাবি করেছেন তারা।
শাবিপ্রবিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি ভার্চুয়াল সভায় এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন পাবলিক ৩৫ জন উপাচার্য। রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এ অবস্থান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'নীতিবহির্ভূতভাবে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ক্রমশ যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে তা সমগ্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিষদ মনে করে আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের কোষাধ্যক্ষ শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহীদুর রহমান ভুঁইয়া।
এর আগে শনিবার রাজধানীতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে মন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করেন শাবিপ্রবির শিক্ষক প্রতিনিধিরা।
বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে এবং অচলাবস্থার অবসানের জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে অনশন করছেন ২৪ শিক্ষার্থী।
এর আগে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা এক ছাত্রীর সঙ্গে 'দুর্ব্যবহার' করেছেন, এই অভিযোগে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
জাফরিন আহমেদ পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ব্যবহার করে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য বৈঠকে অংশ নেননি।
৩৫ উপাচার্যের এ বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, 'উপচার্যদের এই বিবৃতি প্রমাণ করে তারা মোটেই শিক্ষার্থী বান্ধব না, বরং শিক্ষার্থীবিরোধী।'
তিনি বলনে, 'তাদের এই বিবৃতিতে আমরা বিস্মিত নই, তবে ক্ষুব্ধ।'
আরেক শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার বলেন, 'যে ভিসি শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ছোড়েন, প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করেন, তার পক্ষে উপাচার্যদের এই বিবৃতিতে তাদের নৈতিক অবস্থান নিয়েই আমি সন্দিহান। উপাচার্যরা সিন্ডিকেট করে আমাদের জিম্মি করতে চাচ্ছেন। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না।'
এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল বলেন, 'উপাচার্যদের বিবৃতি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। তবে শিক্ষার্থীদেরও কিছুটা নমনীয় হওয়া দরকার। তাদের আলোচনার দ্বার খোলা রাখতে হবে। তারা যদি যৌক্তিক আলোচনায় না গিয়ে একদফা দাবিতে অনড় থাকে তাহলে আলোচনা ফরপ্রসু হওয়ার সুযোগ থাকে না।'
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আন্দোলনের সাথে সংহতি জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এর পরেরদিন থেকে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে শিক্ষার্থীদের আলোচনার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।