লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

ফকির লালন শাহ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী এবং ১৩৪ বছর আগেই তিনি সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়াতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, "ফকির লালন সম্রাট ছিলেন না। তিনি ছিলেন সাধক। তার বাণী সমাজের সকল ক্ষেত্রে বিদ্যমান। আমরা যদি লালনকে ভালবাসি বলি, তাহলে নারীর উপর অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন করতে পারিনা। কৃষিকাজে বিষ দিয়ে, নদীতে বিষ দিয়ে মাছ মারতে পারিনা।"
সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে সেখানে অতিথিরা বক্তব্য দেন। আর আলোচনা সভা শেষে বাউল ও লালন একাডেমির শিল্পীরা সেখানে লালনের গান পরিবেশন করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউরিয়ার বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসেছে। গান শোনার ফাঁকে সেখানে মানুষ কেনাকাটা করছেন। প্রবেশপথ, আখড়াবাড়ি (বারামখানা) ও মেলার মাঠ চত্বর কোথাও যেন তিল পরিমাণ জায়াগা ফাঁকা নেই। লালন সাধু-ভক্তদের পদচারণায় মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
গুরু শিষ্যের ভাব বিনিময় ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবসের সাধুসঙ্গ। আজ (শুক্রবার) সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণ সভার মধ্যদিয়ে এ সাধুসঙ্গ শেষ হবে বলে জানান বয়োজ্যেষ্ঠ হৃদয় সাধু।
তার ভাষ্য, লালন শাহের প্রতি প্রেম-ভালবাসার টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ ছুটে এসেছেন। তাদের পদচারণায় মুখরিত আখবাড়ি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
সাধু-ভক্তরা বলছেন, এ বছর উৎসব শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে প্রচুর মানুষ আসছে। শুরুর দিনে পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই। মায়ার টানে, আত্মার টানে সাধু-ভক্তরা ছুটে আসছেন ধামে। আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ বাদ্যযন্ত্র ও গানে গানে মুখর হয়ে উঠছে।
লালন শাহের মাজারের সহকারী খাদেম রিপন শাহ বলেন, "মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার যে বাণী লালন সাঁইজি প্রচার করে গেছেন তার জীবদ্দশার তা আজও ফাল্গুন ধারার মত প্রবাহমান।"
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন সাঁই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তার ভক্ত-অনুসারীরা তাকে স্মরণ করে আসছেন। লালন একাডেমি প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় একাডেমি চত্বরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে।