বাংলাদেশে প্রথম কারা পাবেন করোনাভাইরাসের টিকা?

ভারতের সিরাম ইনস্টিউট থেকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে ৩ কোটি ডোজ কোভিড টিকা সংগ্রহ করবে সরকার, প্রথম পর্যায়ে তা দশটি শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট টাস্কফোর্স টিকার জন্য পেশাভিত্তিক একটি তালিকাও তৈরি করেছে। তবে ব্যক্তির নামভিত্তিক কোনো তালিকা এখনো তৈরি করা হয়নি।
টাস্কফোর্স সূত্র জানিয়েছে, টিকা দেওয়ার জন্য জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। যারা ভ্যাকসিন পাবেন, অনলাইনে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
প্রত্যেককে টিকার দুটি করে ডোজ নিতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর নিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ।
টাস্কফোর্স সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে সাড়ে ৪ লাখ সরকারি এবং ৭ লাখ বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী টিকা পাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট ওয়ার্কাররা পাবেন দেড় লাখ টিকা।
সাড়ে ৫ লাখ টিকা পাবে পুলিশ। পুলিশের মধ্যে সবার আগে টিকা পাবে ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশের একটি তালিকাও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রথম পর্যায়ের টিকা থেকে ২ লাখ ১০ হাজার পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সেনাবাহিনীর ফ্রন্টলাইনার্সদের দেওয়া হবে ৩ লাখ টিকা। সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দ ৫০ হাজার। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৫ হাজার জন টিকা পাবে।
প্রথম পর্যায়ের টিকা পাবেন সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ ৭০ হাজার জনপ্রতিনিধি।
সবচেয়ে বেশি টিকা পাবেন ষাটোর্ধ্ব ১ কোটি ২০ লাখ। এরমধ্যে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা এবং ধর্মীয় নেতারাও আছেন। এছাড়াও ভ্যাকসিনের পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী এবং গণপরিবহনকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের মেম্বার সেক্রেটারি ড. শামসুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কারা কী পরিমাণ ভ্যাকসিন পাবেন তার খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে কোনো নামের তালিকা করা হয়নি। ভ্যাকসিন আসার পর তা কোথায় কীভাবে রাখা হবে, তাও ঠিক করা হয়েছে।
এর আগে, অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবনারত ভ্যাকসিন রপ্তানির জন্য ৫ নভেম্বর সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্বাক্ষর করে।
অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ভারতে অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করলে তা আমদানি করা হবে। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার অক্সফোর্ড ও গ্যাভির টিকার বাইরেও রাশিয়ার স্পুটনিক ও চীনের সিনোফার্মার টিকা কেনার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে।
এদিকে, ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে প্রথম ফাইজারের টিকা ভ্যাকসিন দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে মাইনাস ৬০-৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার কোল্ড চেইন মেইনটেইনের ব্যবস্থা নেই বলে ওই টিকা কেনার বিষয়ে আগ্রহী নয় সরকার।
এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম ফর ইমুনাইজেশনের (এপিআই) পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন ড. শামসুল হক। তিনি আরও জানান, সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম মাসে যে ৫০ হাজার ডোজ টিকা আসবে তা স্বাস্থ্য, পুলিশ ও প্রশাসনের ফ্রন্টলাইনারদের দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ইপিআইর ২৬ হাজার কর্মী ও অন্যান্য হেলথ ওয়ার্কাররা টিকা দেওয়ার কাজে যুক্ত থাকবেন। দেশের ৬৪ জেলায় ইপিআই-এর যে ভ্যাকসিন কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে, সেখানে কোভিডের টিকাগুলো রাখা হবে।
বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ঢাকায় পৌঁছার পর বিমানবন্দর থেকে টিকাগুলো বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসের ফুল কোল্ড চেইনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর তারা সেগুলো সরকারের কোল্ড চেইন মেইনটেইন ডেজিগনেটেট ওয়্যারহাউসগুলোতে পৌঁছে দেবে।