নানা অজুহাতে বাইরে মানুষ, হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন

চলমান লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে মহাসড়ক-সড়কগুলোর কিছু জায়গায় সকালে যানজট দেখা গেছে। চলছে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও রিক্সা। সকাল থেকে অনেক পথচারীকে পায়ে হেঁটেও গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। গত পাঁচ দিনের তুলনায় রাস্তায় আজ যানবাহন ও জনসমাগম বেশি।
ফলে মহামারি করোনাভাইরাসের ডেল্টা সংক্রমণ রোধে রাস্তায় মানুষের পদচারণা ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
সাভার-চন্দ্রা থেকে মগবাজারে বন্ধুসহ যাচ্ছিলেন সাব্বির হেলাল। আসাদ গেট চেকপোস্টে পুলিশ থামালে বলেন রোগী দেখতে যাবার কথা। কিন্তু কোন হাসপাতালে যাচ্ছেন তার যথাযথ উত্তর না দিতে পারায় আটক করা হয় তাদের।
রবিউল ইসলাম নিউমার্কেটের একটি কসমেটিক দোকানে চাকরি করেন। পুলিশ আটক করলে বলেন, তার দোকানে মুদি ও জরুরি খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়। পরে মোবাইল কোর্টে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান এই বিক্রেতা।

এ রকম হাজারো অজুহাত দেখিয়ে বের হচ্ছেন মানুষ। অনেকে রাস্তায় ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার, মটর সাইকেল নিয়ে অজুহাত আর নানা কৌশলে লকডাউনে চলাফেরা করছেন।
বাংলা মটর, কারওয়ান বাজার মোড়, ফার্মগেট, আসাদ গেট, শুক্রাবাদ, সায়েন্স ল্যাব, বাটা সিগন্যাল, কাঁটাবন ও শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একটু থামিয়ে চেক করলেই রাস্তায় বেঁধে যাচ্ছে গাড়ির জট।
এছাড়া অনেকের মাস্কই থুতনিতে ঝুলতে দেখা যায়; মাস্কবিহীনও দেখা যায় কাউকে।
পুলিশ আটকালেই তারা নানা অজুহাত দিতে শুরু করেন- 'মাস্ক পকেটে, ফোনে কথা বলছিলাম, মাস্ক মুখ থেকে একটু আগেই পড়ে গেছে' ইত্যাদি তাদের অজুহাতের নমুনা।
ট্র্যাফিক পুলিশ সার্জেন্ট লিমা আক্তার (মোহাম্মদপুর জোন) বলেন, 'জেল, জরিমানা দিয়ে সতর্ক করলেও মোবাইল কোর্ট বা পুলিশের টিম এড়িয়ে চলছেন চলাচলকারীরা। বিশেষ করে, বেশীরভাগ মানুষ হাতে ঔষধের প্রেসক্রিপশন, নানা টেস্ট রিপোর্ট, বাড়িতে বাবা-মা একা, শিশু বাচ্চা দেখার কেউ নেই এসব অজুহাত দিয়ে বের হচ্ছেন বাসা থেকে'।

এদিকে রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকিংয়ের জন্য ভোগান্তির অভিযোগও করেছেন অনেকে।
মশিউর রহমান উত্তরা থেকে বারডেম যাচ্ছিলেন বাবার ওপেন হার্ট সার্জারী করাতে। গাড়ি না পাওয়ায় এবং জায়গায় জায়গায় পুলিশ চেক করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টিবিএসকে বলেন, 'আমি উত্তরা থেকে কোন গাড়ি না পেয়ে সর্বশেষ আমার এক বন্ধুর মটর সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আসাদ গেট আসলে পুলিশ বলে দুইজন এক মটর সাইকেলে যাওয়া যাবে না। আমাকে অন্যভাবে চলে যেতে বলে, আমার বন্ধুর নামেও মামলা দেয়'।
তবে মূল রাস্তায় মানুষের স্রোত কিছুটা ঠেকানো গেলেও অলি-গলিতে মানুষ চলাচল করছে আগের মতোই। গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে হাট-বাজারগুলোতেও বেড়েছে চাপ।
হাতিরপুলে বাজার করতে আসেন আবু বকর, তিনি টিবিএসকে বলেন, 'যত লকডাউনই দেয়া হোক বাজার করতে তো যেতে হবে, এসে দেখি বাজারেও অনেক ভিড়'!
রমনা জোনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল রহমান টিবিএসকে বলেন, 'যারা মটর সাইকেলে দু'জন মিলে চলাচল করছে তাদেরকে মামলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিধি, সামাজিক দূরত্ব না মানা ও ঘর থেকে বের হওয়ার যথাযথ কারণ দেখাতে না পারলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা-গ্রেপ্তার পর্যন্ত করছি। তবে আমরা নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে শতভাগ জোর দিচ্ছি'।