Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 23, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 23, 2025
ভিন্নধর্মী এক স্কুল: যেখানে পথশিশুরা শিক্ষার্থী, শিখতে শিখতে করে আয়

ফিচার

আসমা সুলতানা প্রভা
18 December, 2023, 01:05 pm
Last modified: 18 December, 2023, 01:06 pm

Related News

  • অস্ট্রিয়ায় স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে স্কুলশিক্ষার্থীসহ নিহত ১০
  • ২০২৪ সালে জলবায়ু সংকটে দেশের ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে: ইউনিসেফ
  • খুদে শিক্ষার্থীদের মানবিক উদ্যোগ: বিনামূল্যে সবজি বিতরণ
  • ইরানে উকুন আতঙ্ক: স্কুল বন্ধের গুজব!
  • অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েও পাস করেছিলেন স্কুল, এবার সেই স্কুলের বিরুদ্ধেই ঠুকে দিলেন মামলা

ভিন্নধর্মী এক স্কুল: যেখানে পথশিশুরা শিক্ষার্থী, শিখতে শিখতে করে আয়

সচরাচর স্কুল যেমন হয়ে থাকে, এটি তেমন নয়। স্কুলের বাইরে নেই কোনো খেলার মাঠ, নেই নিজস্ব কোনো ভবন। আধগড়া এক বিল্ডিংয়ের দুই ফ্লোর নিয়েই স্কুল। পরিসরেও তেমন একটা বড় নয়। বাইরে থেকে নেই কোনো চাকচিক্য। 
আসমা সুলতানা প্রভা
18 December, 2023, 01:05 pm
Last modified: 18 December, 2023, 01:06 pm
সবাইকে পেছনে ফেলে দাবায় হয় চ্যাম্পিয়ন। ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

নিউ মার্কেট থেকে বাসে করে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড; সেখান থেকে রিকশায় ঢাকা উদ্যান। তারপর অল্প হেঁটেই মনির মিয়ার বাগান বাড়ি। এর পরেই দেখা মিললো কাঙ্ক্ষিত সে স্কুলের। নাম 'সুইচ বিদ্যা নিকেতন'।

সচরাচর স্কুল যেমন হয়ে থাকে, এটি তেমন নয়। স্কুলের বাইরে নেই কোনো খেলার মাঠ, নেই নিজস্ব কোনো ভবন। আধগড়া এক বিল্ডিংয়ের দুই ফ্লোর নিয়েই স্কুল। পরিসরেও তেমন একটা বড় নয়। বাইরে থেকে নেই কোনো চাকচিক্যও। 

কিন্তু স্কুলের অন্দরে অন্য চিত্র। সাজানো গোছানো প্রতিটি রুম। দেওয়ালজুড়ে শৈল্পিকতার ছাপ। রঙ্গিন সব চিত্রকর্ম স্থান করে নিয়েছে সেখানে। যেন পারদর্শী কারো নিপূণ হাতের কাজ। প্রতিটি জায়গা জুড়ে শিক্ষার্থীদের কাজের সাক্ষর। শোকেস ভর্তি পুরস্কারের ঝুলি। কী নেই এখানে!

স্কুলের শিক্ষার্থীও সাধারণ নয়। পথ-ঘাট, বস্তিতেই তাদের বেড়ে ওঠা। এদের কারো পরিবার পরিজনও নেই, আবার কারো নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু তাদের দেখে সেটি বোঝার উপায় নেই! পরিচয় এখন অসাধারণ সব কাজকর্ম দিয়ে। যা অবাক করে দেবে যে কাউকে! 

নানান ধরনের যন্ত্র বানায় তারা। ছবি- আসমা সুলতানা প্রভা

যেভাবে শুরু 

ভিন্নধর্মী এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। ৩২ বছর বয়সী এক যুবকের হাত ধরেই এটির পথচলা। নাম মুঈনুল ফয়সাল। জন্ম বরিশালের ঝালকাঠিতে। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন থেকেই বিভিন্ন সেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন মুঈনুল। শীতবস্ত্র বিতরণ, পরিষ্কার পরিচ্ছনতা কর্মসূচি, বই মেলায় হুইল চেয়ার সেবা, নিরক্ষর মানুষদের সাক্ষরজ্ঞান করার কর্মসূচিসহ নানান কাজে ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে। পুরো ছাত্রজীবন পার করেছেন এমন সব কাজ করে। 

শীতের দিনে এমনই এক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে এসেছিলেন মোহাম্মদপুরে। সেখানে অনেক পথশিশুর সাথে পরিচয় হয় তার। তাদের কারোরই ছিল না অক্ষরজ্ঞান। শিক্ষা কেবল এক বিলাসী বিষয় তাদের কাছে। তাছাড়া, আশেপাশে কোনো স্কুলও ছিল না। বিষয়টি বেশ ভাবায় মুঈনুলকে। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেন তাদের নিয়ে কিছু করার। 

কীভাবে এই শিশুদের স্কুলে আনা যায়, তা নিয়ে করতে থাকেন বিভিন্ন পরিকল্পনা। কাজে নেমে পড়েন জোরেশোরে; সাথে এগিয়ে আসেন বন্ধুরাও।শুরুতে তার অনেক বন্ধু থাকলেও তারা বিভিন্ন পেশায় চলে যান। শেষ পর্যন্ত সহযোদ্ধা হিসেবে থেকে যান বাইজিদ ,মোস্তাফিজ, শাহ আলমরা। 

এতে মনোবল দৃঢ় হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থের সংকট। ফান্ডের জন্য শুরু করেন কলম বিক্রি; এ দিয়েই শুরু হয় শিক্ষাদান কার্যক্রম। এই উদ্যোগ দেখে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্র। নাম, ড. কামরুল আহসান। ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালের ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি পাঁচজন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি অর্থ সহায়তা দিয়েও পাশে থেকেছেন। বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রভাবশালী, বিত্তশালী, সমাজ কর্মীদের দ্বারে দ্বারে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করতে থাকেন মুঈনুল। কেউ কেউ প্রত্যাখ্যান করলেও এগিয়ে আসেন অনেকেই।

ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

২০১৫ সালে নিজেদের টাকায় ছোট্ট একটি বাসা ভাড়ায় নেন মুঈনুল এবং তার সহযোগীরা। সে বাসার জন্য অগ্রিম ২০ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে পাঁচ হাজার করে ভাড়া গুনতে হতো তাদের। সবকিছু গুছিয়ে উঠলে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়েই সকল কাজকর্ম শুরু হয় পুরোদমে। স্কুলের শিশুদের কাজকর্মে পারদর্শীতা দেখে ফান্ড আসতে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে। 

বর্তমানে স্কুলের দুটি শাখা। 'সুইচ বিদ্যানিকেতন' এবং 'সুইচ তাহমিনা বানু বিদ্যানিকেতন'। তাহমিনা বানু নামের এক ভদ্রমহিলা স্কুলের জন্য ৮ কাঠা জমি দান করে যান। সেখান থেকে এই নাম। বর্তমানে দুটি স্কুলে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪১৫ জন। 

'সুইচ' নাম কেন?

"আমরা সবাই চাই আমাদের নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে। আগের অবস্থান থেকে আরও ভালো অবস্থানে যেতে। এই যে কোনো একটি অবস্থান থেকে আরও ভালো অবস্থানে 'সুইচ' করার চিন্তা সেখান থেকেই সুইচ নামটা দেওয়া," বলছিলেন মুঈনুল। 

স্কুল প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক আগেই। এমন স্কুল বানাতে চেয়েছিলেন যা হবে আট-দশটি স্কুলের চেয়ে ভিন্ন। মৌখিক জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না তাদের জানার গণ্ডি। বইয়ে যা শিখবে তা বাস্তবেও করবে। একাডেমিকভাবে অর্জিত জ্ঞানে হবে ব্যবহারিক কাজ। তৈরি করবে নতুন নতুন সব জিনিসপত্র। করবে আবিষ্কার। খেলাধুলায় হবে পারদর্শী। প্রাযুক্তিক জ্ঞানে হবে দক্ষ। নিজেরাই হবে সম্পদ। 'সুইচ বিদ্যানিকেতন' কে ঠিক তেমন একটি স্কুল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেন মুঈনুল। 

ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

কিছু বছর আগেও এই শিশুরা পথে পথে সময় কাটিয়ে দেওয়া, দিনের পর দিন অনাহারে থাকাকেই জীবন ভেবেছে। হয়তো কখনো ভাবেনি একদিন স্কুলেও পড়বে তারা। একটি ইউনিফর্ম হবে তাদের। ব্যাগ বই গুছিয়ে স্কুলে যাবে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন জীবনে দুঃখ কষ্টই ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তিনবেলা ভাতের যোগাড়ই যেন দুঃসাধ্য এক ব্যাপার ছিল তাদের কাছে। 

কিন্তু এখনের চিত্র পুরো আলাদা। এই শিশুরা আত্মবিশ্বাসী। শেখার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে। তারা গান গায়, আবিষ্কার করে, খেলাধুলায় পাকাপোক্ত করেছে নিজেদের, স্থান করে নিয়েছে জাতীয় পর্যায়ে। সাইন্স ফেয়ার বা খেলাধুলায় সব স্কুলকে পেছনে ফেলে জিতে আসে সেরার পুরস্কার।

নিজেরাই আয় করে। তারা যে আর্ট-ক্রাফটের কাজ করে, সেগুলো বিক্রি হয় বাজারে। সে আয় দিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি চালায় পরিবারের খরচও। আবার পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে স্কুল থেকেই দেওয়া হয় ঋণ। কোনোপ্রকার সুদের ঝামেলা নাই এতে। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই ঋণ দেওয়া হয় তাদের বাবা-মাকে। তাদের মায়েদের জন্য রয়েছে সেলাই কাজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। স্কুলের ইউনিফর্ম তৈরি, বিভিন্ন ডিজাইনে কাপড় তৈরি, কাঁথা-কম্বল, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন তারা। এই কাজের জন্য তাদের মজুরি দেওয়া হয়। এতে করে কর্মহীন এইসব মায়েরাও আয় করতে শুরু করেন। অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া বা পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া, পরিবারের হাল ধরতে  আয় উপার্জনে জড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতেই এমন বন্দোবস্ত।

শিক্ষার্থীরা বানায় রোবট, শেখে কোডিং, আর্ট-ক্রাফটসহ নানানকিছু

এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনন্য তাদের কাজে। পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির শিশুরা বিজ্ঞান শুধু মৌখিকভাবে পড়ে তা নয়। তারা তৈরি করে স্বয়ংক্রিয় ডাস্টবিন, রোবট, অটোমেডেট অ্যালার্ম মেশিন (গাছে পানি না থাকলে শব্দ করবে)।

তাদের অবসর যাপনও অন্যদের চেয়ে আলাদা। সারাদিনের পড়াশোনা সামলে বাকি সময়ে তারা শেখে পাইথন কোডিং, কম্পিউটার টাইপিং, ভিডিও এডিটিং। খাতা নয়, ট্যাব ব্যবহার করেই কষে অঙ্ক। 

ইংলিশ স্পিকিং, পেইন্টিং, ফ্রেবিক্স অ্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্ক, ক্রাফটিংসহ অন্যান্য কাজেও দেখা মেলে দক্ষতার ছাপ। ইন্ডোর বা আউটডোর- সব খেলায় নিজেদের সেরাটা দিয়েই জয় করে নেয় মানুষের মন। দাবা খেলায় কেউ কেউ স্থান করে নিয়েছে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। স্বপ্ন তাদের আকাশ ছোঁয়ার। কেউ হতে চায় বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, আবার কেউ বিশ্বজয়ী খেলোয়াড়।  

দাবায় মেতেছে শিক্ষার্থীরা। ছবি-সৌজন্যে প্রাপ্ত

আরও উল্লেখযোগ্য দিক হলো- চারজন শিক্ষার্থীর জন্য থাকেন একজন পর্যবেক্ষক শিক্ষক। কোন শিক্ষার্থীর আগ্রহ কোথায়, তাদের শক্তিশালী দিক মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন তারা। পরে সেভাবে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়। তারপর সেসব বিষয়গুলোতেই আরও দক্ষ করে তোলা হয় তাদের। দেখা যায়, কেউ দাবায় ভালো, কেউ ছবি আঁকে নিখুঁতভাবে, কারো আবিষ্কারক মন-মানসিকতা, আবার কারো দক্ষতা ক্রাফটিংয়ে। কেউ বানায় রোবট, কারো দক্ষতা কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে। এভাবে করে তৈরি হয়েছে ১০-১২টি সেকশন।

এই সেকশনের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে সবাইকে পেছনে ফেলে পুরস্কার জয় করে দক্ষতারও প্রমাণ দিয়েছে যথাযথভাবে। 'আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন' থেকে আয়োজিত বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে দুটিতে প্রথম স্থান একটিতে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। তাছাড়া 'লাইফ ইজ ফান' কর্তৃক আয়োজিত সাইন্স ফেয়ারে ২০২৩ সালে একই সাথে রানার আপ ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। অংশগ্রহণ করে ২০২২-২৩ সালে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশ আইকিউ অলিম্পিয়াডে'ও। 

খেলাধুলায় যেসব অর্জন, তা নজর কাড়বে যে কারো। ২০২৩ সালের অনুর্ধ্ব-১৪ 'ন্যাশনাল ইয়থ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ এবং  শেখ কামাল ন্যাশনাল ইয়থ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ- এ রানার আপ হয় এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়,  সুরাইয়া আক্তার(১৩০০-১৩৯৯)এবং জিন্নাত আকতার শাহনাজ(১৫০০-১৫৯৯) 'জয়া ইন্টারন্যাশনাল  স্ট্যান্ডার্ড রেটিং চেস টুর্নামেন্ট'-এ রেটিং ক্যাটাগরি পুরস্কারও পায়। এতে আন্তর্জাতিকভাবে স্থানও দখল করে নেয় তারা। ২০২৩ সালে জেসিআই আয়োজিত 'পথের বিশ্বকাপ'-এ অংশ নেয় এই স্কুলের আট শিক্ষার্থী।  তাদের সবাই জয় করে নেয় বিজয়ীর মেডেল।

এখানেই শেষ নয়।  'সুপার কিডস' আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথম এবং পঞ্চম পুরস্কারও নিজেদের করে নেয়। 

পথের বিশ্বকাপে অর্জন করা মেডেল। ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রতিবছর ২৫০ এর ও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আসে এই স্কুলে। এত শিক্ষার্থীর জন্য যে জায়গা এবং অর্থের দরকার সেটি নেই বলে দুঃখবোধ করেন মুঈনুল। সর্বোচ্চ ত্রিশ জন শিশুকে বাছাই করা হয় ভর্তির জন্য। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাদের অবস্থার দিকে। যারা একেবারেই অসহায়, বাবা-মা নেই— এমন বাচ্চাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

'ওয়ান চাইল্ড, ওয়ান স্পন্সর'

"এই স্কুল করার পিছনে প্রধান লক্ষ্য ছিল দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য যখন শীত বস্ত্র বিতরণ, বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ দেওয়ার কাজ করতাম। তখন মনে হতো অবস্থার পরিবর্তনে এইসব কোনো স্থায়ী পন্থা নয়। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এইসব না করে কিছু মানুষ তৈরি করবো," বলেন মুঈনুল।

এই লক্ষ্য সামনে রেখেই স্কুল করার চিন্তা মাথায় ভর করে। উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি। তার চিন্তা অনুসারে একজন মানুষই পারে আরেকজন মানুষের জীবন বদলে দিতে। সামর্থ্য আছে এমন কেউ যদি একটি করে শিশুর দায়িত্ব নেয়, তবে কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়। যেই ভাবনা, সেই কাজ। 'ওয়ান চাইল্ড, ওয়ান স্পন্সর'– এই স্লোগানকে কেন্দ্র করেই সূচনা হয় তার এই যাত্রার।

ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

অনেকেই উপহাস করলেও তার দ্বিগুণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি, নেতিবাচক কথা বলা অনেক মানুষই পরবর্তীতে এগিয়ে এসেছেন। মুঈনুলের মতে, 'কাজ যদি কাজের মতো হয়, তাহলে মানুষ এগিয়ে আসতে বাধ্য'। 

ইউনিফর্ম, জুতা, বই, ব্যাগ সব স্কুল থেকেই দেওয়া হয়। যত ধরনের সহায়তা দরকার, সব করা হয়। এমনকি, কোভিডের সময়ে প্রতি সপ্তাহে বাজার করে দেওয়া হতো তাদের। তিন মাস চলে এই কাজ। আর এই প্রতিটি কাজের জন্য যে টাকা ব্যয় হয়, তা আসে স্পন্সরদের কাছ থেকেই। 

'লার্নিং বাই ডুয়িং' পদ্ধতিতে শেখে তারা 

এই শিশুদের শেখার পদ্ধতিও বেশ অন্যরকম। ক্লাসে বসে মুখস্থ করে না পাতার পর পাতা। ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনই মুখ্য এখানে। কোনো একটি বিষয় পড়িয়ে সেটির বাস্তব দিকও শেখানো হয় তাদের। যেমন– পরিবেশ দূষণ কী, কীভাবে হয়, কী কী কারণে হয়– এসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মাঠপর্যায়ে। সবকিছু দেখার পর তাদের লিখতে দেওয়া হয়। দেখা যায়, আরও গুছিয়ে লিখছে তারা। প্রশ্নের উত্তরও হয় সৃজনশীল। প্রায় সময় একাডেমিক বইয়ের চেয়েও বিস্তারিত বিষয় বর্ণনা করতে পারে সবাই। অঙ্কের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মৌলিক বিষয়গুলো আগে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় বাস্তবে প্রয়োগ করার ধাপ। 

রোবটিক্স ক্লাসে মনোযোগী শিক্ষার্থীরা। ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

মুঈনুল বলেন, "তাদের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বাজারে পাঠাই। সেখান থেকে জিনিস কিনে আনার পর কত খরচ হলো, কত ফেরত আসলো তার হিসেব করে দেখায় ট্যাবে। এভাবে তারা সহজেই অঙ্ক শেখে।"

সকাল-বিকাল দুই শিফটে চলে স্কুলের কাজকর্ম। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে কাজ। ছোটদের (প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি) ক্লাস হয় সকালে, বড়দের (চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি) বিকেলে। একাডেমিক পড়াশোনা, পরীক্ষা ইত্যাদি হয়ে থাকে সরকারি নিয়মানুযায়ী। 

এই শিশুদের পাঠদানের কাজ করেন ১৭ জন শিক্ষক। খুব বেশি মজুরি নয় তাদের। কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা নেই; বরং আনন্দের সাথেই করেন এই কাজ। তাদের সবাই যুক্ত ছিলেন সেবামূলক কাজে। তাদের সবাই এমন কাজের অংশই হতে চেয়েছিলেন সবসময়।

মুঈনুল বলেন, "যে মজুরি আমরা দেই, সেটাকে সম্মানী বলাটাই উত্তম। আন্তরিকতার সাথে যে পরিশ্রম তারা করেন, সেটা টাকা দিয়ে মূল্যায়ন করা বোকামী।"

শোকেস ভর্তি পুরস্কার। ছবি-আসমা সুলতানা প্রভা

জাপান দূতাবাসও বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত

কষ্টসাধ্য কাজ জেনেও ২০১১ সাল থেকে লেগে ছিলেন এই স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে। বাধা এসেছে পরিবার থেকেও, মেলেনি কোনো সমর্থন, নেতিবাচক কথার মুখে পড়তে হয়েছে বারবার। অর্থ সংকটেও ভুগেছেন অনেক সময়।  ফান্ড সংগ্রহের বেলায় কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। তবুও হাল ছাড়েননি মুঈনুল। নিজ স্বপ্নের পথে অবিচল থেকেছেন সদা। পরিসরে ছোট হলেও স্কুল চালু করে সবকিছু বাস্তব করে দেখিয়েছেনও। তাই অদম্য বলা ভুল হবে না নিশ্চয়।  

তবে মুঈনুলের এখনের স্বপ্ন আরও বড়। করতে চান নিজ স্কুলের নিজস্ব অবয়ব। এমন একটি ভবন হবে সেখানে এই শিশুরা প্রাণ খুলে কাজ করবে। স্কুলের সামনে থাকবে খেলার মাঠ। সেই মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে এই শিশুরা। 

কিন্তু অর্থের সীমাবদ্ধতা থাকায় সেটি আর সেভাবে হয়ে ওঠেনি। তাই বলে লড়াই চালিয়ে যাওয়া থামিয়ে দেননি তিনি।  চেষ্টা করে গেছেন কীভাবে এই স্কুলের একটি  নিজস্ব ভবন দাঁড় করানো যায়। 

এই চেষ্টায়ও সফল হয়েছেন মুঈনুল। সম্প্রতি জাপান দূতাবাস এই স্কুলের জন্য দোতলা ভবন করার ফান্ড প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে স্বপ্নের পূরণের পথে অনেকটা এগিয়ে  গেছেন তিনি। 

জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে মুঈনুল। ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

চোখে এখন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার স্বপ্ন

অনেক চড়াই-উতরাই পার করেই প্রতিষ্ঠিত আজকের 'সুইচ বিদ্যানিকেতন'। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি চুকিয়ে সবাই যখন ক্যারিয়ারমুখী, নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, মুঈনুল তখন কাজ করছিলেন এই শিশুদের জীবন  গড়ায়। সে উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে জয় করেন নেন 'জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড'। একই বছর 'শেখ হাসিনা ওআইসি (দ্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো অপারেশন) ইয়ুথ ক্যাপিটাল অ্যাওয়ার্ড'ও পান তিনি।

স্বপ্ন এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। যা হবে প্রযুক্তি নির্ভর। সবাই হবে 'স্কিলড'। চাকরির জন্য কারো দ্বারে যাবেনা তারা। চাকরিই তাদের খুঁজে নেবে। সে দক্ষতার সাথেই তৈরি করতে চান তাদের। তাদের বিজয়েই যেন আসে দ্বিগুণ হাসি। 

ছবি- সৌজন্যে প্রাপ্ত

"সবচেয়ে খুশি লাগে যখন আমাদের কোনো ছেলে বা মেয়ে পুরস্কার জিতে আসে। নিজে পুরস্কার পেয়েছি। এত ভালো লাগেনি, যতটা তারা জিতে আসলে লাগে," বলছিলেন মুঈনুল। 

Related Topics

টপ নিউজ

পথশিশু / স্কুল / ভিন্নধর্মী শিক্ষা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন বিশেষ ভাতা ১,৫০০ টাকা ও পেনশনের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করল সরকার
  • মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক
  • হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিল ইরান
  • গঙ্গা চুক্তি পুনঃআলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ভারত
  • ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা: ইউরেনিয়াম স্থানান্তরের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় ইসরায়েল
  • বাজেটে সম্পত্তি হস্তান্তরে কর হার কমাল সরকার

Related News

  • অস্ট্রিয়ায় স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে স্কুলশিক্ষার্থীসহ নিহত ১০
  • ২০২৪ সালে জলবায়ু সংকটে দেশের ৩.৩ কোটি শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে: ইউনিসেফ
  • খুদে শিক্ষার্থীদের মানবিক উদ্যোগ: বিনামূল্যে সবজি বিতরণ
  • ইরানে উকুন আতঙ্ক: স্কুল বন্ধের গুজব!
  • অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েও পাস করেছিলেন স্কুল, এবার সেই স্কুলের বিরুদ্ধেই ঠুকে দিলেন মামলা

Most Read

1
অর্থনীতি

কর্মচারীদের জন্য সর্বনিম্ন বিশেষ ভাতা ১,৫০০ টাকা ও পেনশনের জন্য ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করল সরকার

2
আন্তর্জাতিক

মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক

3
আন্তর্জাতিক

হরমুজ প্রণালী বন্ধের অনুমোদন দিল ইরান

4
বাংলাদেশ

গঙ্গা চুক্তি পুনঃআলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ভারত

5
আন্তর্জাতিক

ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা: ইউরেনিয়াম স্থানান্তরের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় ইসরায়েল

6
অর্থনীতি

বাজেটে সম্পত্তি হস্তান্তরে কর হার কমাল সরকার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net