Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
August 15, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, AUGUST 15, 2025
'এক সাবানেই কাপড় কাচা সে সাবানেই গোসল,' বদলে যাওয়া সেই সময়

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
18 October, 2023, 03:05 pm
Last modified: 18 October, 2023, 04:53 pm

Related News

  • করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ
  • ১৯৩৭ গোল্লা সাবান যেভাবে চট্টগ্রামের সেরা!
  • হোটেলের ব্যবহৃত সাবান ও শ্যাম্পুগুলো যাচ্ছে কোথায়?
  • এক সাবানের দাম আড়াই লাখ টাকা, রয়েছে স্বর্ণ ও হীরার গুঁড়ো!

'এক সাবানেই কাপড় কাচা সে সাবানেই গোসল,' বদলে যাওয়া সেই সময়

১৭৯১ সালের আগ পর্যন্ত সাবান ছিল অভিজাত পরিবারের ব্যবহৃত পণ্য। এরপর ধীরে ধীরে এ সাবান সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠে। আগে পত্রিকার পাতায় নতুন সাবানের বিজ্ঞাপন দেখলে বাড়ির মেয়েরা হুড়মুড়িয়ে পড়তো, আবার টেলিভিশনের পর্দায় পাহাড়ি নীল ঝরনার জলে একটি সুগন্ধি সাবানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একা সুন্দরীর প্রীতি-ঘন স্নানের বিজ্ঞাপন দেখে নিজেরাই যেত কল্পনায় হারিয়ে। সাবান নিয়ে আজও অনেক বিজ্ঞাপন তৈরি হয়। তবে সাবান নিয়ে আজ আর হয়তো কেউ বায়না ধরেনা। সারামাস বসে থেকে মাসিক বাজারের সঙ্গে থাকে এক টুকরো সুগন্ধী সাবান।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
18 October, 2023, 03:05 pm
Last modified: 18 October, 2023, 04:53 pm

সাবান পেয়েছে আজ যুবতীরে স্নানঘরে, একা।
শাওয়ারে ঝরেছে বৃষ্টি, সিন্ধু হল মেঝে
সাবানের শুভ্রবাস খুলে
যুবতী খুলেছে তার নীল অন্তর্বাস
কে কার লাবন্য ছোঁবে কতখানি, খেলা
সাবান পেয়েছে আজ যুবতীর পিচ্ছিলতা, দেহ
যুবতী পেয়েছে প্রিয় যুবাটিকে ধবল সাবানে
হে মুগ্ধ গোপনতা- লোকে তার কতটুকু জানে!
                                            -বিকাশ গোয়েন

সেদিন ফেসবুকে সাবান নিয়ে এই কবিতা দেখে খুব হাসি পেয়েছিল। সামান্য সাবান নিয়েও যে কেউ এত সুন্দর রোমাঞ্চকর কবিতা বানাতে পারে তা জানা ছিল না। কারণ আমাদের কাছে তো সাবান মাত্রই 'সামান্য এক পরিস্কারক'। কিন্তু ঘরে ঘরে সাবানের এই সামান্য হয়ে ওঠার আগে সাবান ছিল বড়লোকদের বিলাসী পণ্য। সেটা অবশ্য একদম শুরুর কথা।     

উপরের কবিতাটির রচনাকাল জানা না গেলেও, এর ভাবপ্রকাশ দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, সেসময় মানুষের কাছে সাবান ছিল সৌন্দর্য্য আর আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সেসময় পত্রিকার পাতায় নতুন সাবানের বিজ্ঞাপন দেখলে বাড়ির মেয়েরা হুড়মুড়িয়ে পড়তো, আবার টেলিভিশনের পর্দায় পাহাড়ি নীল ঝরনার জলে একটি সুগন্ধি সাবানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একা সুন্দরীর প্রীতি-ঘন স্নানের বিজ্ঞাপন দেখে নিজেরাই যেত কল্পনায় হারিয়ে। সাবানের একেকটি বিজ্ঞাপন তখন তোলপাড় করে দিত ঘরের কিশোরি মেয়েটির মন। আর সেসব মন অপেক্ষা করতো, কবে বাজার থেকে সেই সাবানটি বাসায় আনা হব আর সেই সুগন্ধী সাবান গায়ে মেখে নিজেরাও হয়ে যাবে বিজ্ঞাপনের মডেলটির মতো সুন্দর  ও স্নিগ্ধ। শুধু মেয়েরা নয়, ঘরের গিন্নিও বায়না ধরতেন স্বামীর কাছে নতুন সুগন্ধী সাবানটি এনে দেওয়ার জন্য।  

ছবি- সংগৃহীত

সাবান নিয়ে আজও অনেক বিজ্ঞাপন তৈরি হয়। তবে সাবান নিয়ে আজ আর হয়তো কেউ বায়না ধরেনা, কবিতাও লিখতে বসেনা। সারামাস বসে থেকে মাসিক বাজারের সঙ্গে থাকে এক টুকরো সুগন্ধী সাবান। কিন্তু সে সাবান রেখে রেখে গন্ধ নেওয়ার সেই উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা এখন আর নেই। সাবান এখন এত বেশি নিত্যব্যবহার্য পণ্য হয়ে গেছে যে, নতুন সাবানের জন্য অপেক্ষাটুকু করার ফুসরত আর নেই। তার ওপর বাজারে আজ এতধরনের দেশি বিদেশি সাবান। কোনোটা হয়তো শুধু হাত ধোয়ার জন্য, কোনোটা মুখের জন্য, কোনোটা টয়লেট সোপ, কোনোটা গোসলের। ফলে স্নানঘরে আজ আর কোনো একক সাবান নয়, থাকে তিন থেকে চার ধরনের সাবানের উপস্থিতি। এই সাবানও আবার তার আকার বদলেছে। সাবান মানেই আর চারকোণা বা ডিম্বাকার সেসব পদার্থ নয়। বরং নিজেকে কোনো ধরাবাঁধা আকৃতিতে না রেখে তরলের রূপ নিয়েছে সে এখন। এতে করে তার ক্ষয়ও যেমন কমে এলো, তেমন জীবাণুমুক্তও থাকা গেলো। ফলে এখন তরল সাবান বা লিকুইড হ্যান্ড সোপ বা বডি ওয়াশ-শাওয়ার জেলের দিকেই ঝোঁক বেশি মানুষের।    

সাবান ছিল বিলাসী পণ্য

১৭৯১ সালের আগ পর্যন্ত সাবান ছিল অভিজাত পরিবারের ব্যবহৃত পণ্য। যা তাদের স্নানঘরে শোভা বাড়াতো। শুধু তাই নয়, সাবানের ওপর করও নাকি বসানো হয়েছিল একসময়! এরপর ধীরে ধীরে এ সাবান সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে সাবানের ব্যবহার খুব প্রাচীন নয়। লোকসংস্কৃতি–বিষয়ক গবেষক অনার্য তাপস 'সাবাননামা' শীর্ষক একটি প্রবন্ধে বলেছেন, মধ্যযুগের বিভিন্ন কাব্যের নায়িকাদের গলা জলে নেমে 'গাত্র মাঞ্জন' করার বর্ণনা থাকলেও সেখানে সাবানের কথা বলা নেই। তারা ক্ষার-খৈল দিয়ে 'গাত্র মাঞ্জন' করতেন। এই কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ ধরনের মাটি বা খৈল দিয়ে নারীরা তাদের দীঘল কালো চুল পরিষ্কার করতেন। কাপড় পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতেন ছাই ভেজানো ক্ষারীয় জল।'   

ছবি- সংগৃহীত

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ দেশের মানুষ গোসলের সময় শিকাকাই, বেসন, হলুদ-তুলসী বাটা, নিম বা চন্দনের প্রলেপ, পদ্মের পাপড়ি প্রভৃতি ব্যবহার করে আসছেন। সাবান আসার পরেও গ্রামেগঞ্জে একটা সময় পর্যন্ত এসব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দেখা যেত। যেমনটা রওশন আরা বেগম থেকে জানা যায়। ৭৭ বছর বয়সী রওশন আরা বেগম থাকেন রাজধানীর হাতিরপুলে বড় ছেলের সাথে। তিনি বলেন, 'একদম ছোটবেলায় স্কুলের ভর্তি হওয়ার আগে আমার মা মাথা ধুতেন রিঠা বা শিকাকাই ঘষে ঘষে। তখন তো সাবান ছিল। তাও আমার মা ওসব প্রাকৃতিক জিনিস দিয়েই পরিস্কার করতেন চুল। এতে নাকি চুল ভালো থাকে বেশি। আর এখন তো ছেলের এনে দেওয়া বিদেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করি। আর গায়ে মাখি বিদেশি শাওয়ার জেল নামের কী যেন একটা।'   

২০১৯ সালে প্রকাশিত 'হিস্টরি অব সোপ ইন ইন্ডিয়া' শীর্ষক একটি গবেষণায় আদিম, মধ্য ও আধুনিক এই তিনটি যুগেই ত্বক পরিস্কারের ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে। আদিম যুগে মানুষ ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবহার করতো কাদামাটি, গাছ-গাছড়া ও ছাই। মধ্যযুগে পানি এবং গাছগাছরার সমন্বয়ে গোসলের কাজ সারত মানুষ। তারা বিশ্বাস করতো, পানি একাই সবকিছু পরিষ্কার করতে পারেনা। তাই এর সাথে গাছ গাছরা থাকলে তা জীবাণুমুক্তের কাজও করে থাকে।

ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে লিভার ব্রাদার্স প্রথম সাবান পরিচিত করে তোলে ১৮৯৭ সালের দিকে। এরপর জামশেদ ভাই টাটা ১৯১৮ সালের দিকে কেরালায় নিজেদের সাবান কারখানা নির্মাণ করেন এবং এটিই প্রথম ভারতের স্থানীয় সাবান কারখানা। ১৯৩০ সালের প্রথম দিকে এই কারখানার নিজস্ব ব্র্যান্ডের সাবান বাজারে আসে।

এক সাবানেই কাপড় কাঁচা সে সাবানেই গোসল

জনপ্রিয় কসকো সাবানের একটি পুরাতন বিজ্ঞাপন/ ১৯৬৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক পূর্বদেশে বিজ্ঞাপনটি

বাংলাদেশ হওয়ার পর অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাজারে আসতে শুরু করে 'কসকো' সাবান। এটি ছিল গ্লিসারিনযুক্ত সাবান। এর আগে বাংলাদেশের আর কোনো গ্লিসারিন সাবান ছিলনা। ফলে ক্রমেই এই সাবানের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সত্তর, আশি দশকের পর থেকে এই সাবান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে এ নিয়ে মুখে মুখে ছড়ার চলন শুরু হয়...

বড় আপুর বিয়ে,
কী কী দিয়ে
'কসকো' সাবান দিয়ে...  (সৌন্দর্যচর্চায় দেশীয় পণ্য কিনে হই ধন্য, শেখ সাইফুর রহমান)

যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন, আকিকা, বিয়ে, গায়েহলুদ এসব অনুষ্ঠানে মানুষ এ সাবান ব্যবহার করত। অনেক সময় এই সাবানকে নিয়ে কবিতা পর্যন্ত আবৃত্তি করা হতো। নব্বইয়ের দশকে তারিন-পল্লবের টিভি বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয় জিঙ্গেল ছিল-

আমি কবি তুমি কবিতা
তুমি প্রথম প্রেম, প্রথম প্রেম ওগো সুস্মিতা
ত্বকের সৌন্দর্যে কসকো…

এর কয়েকবছর পর এলো তিব্বত সাবান। কাপড় বেশি পরিষ্কার, উজ্জ্বল, ধবধবে করার প্রত্যাশায় একে অন্যান্য সাবানের চেয়ে সস্তা বলা হয়েছিল এর বিজ্ঞাপনে, যা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এ দিয়ে যেমন কাপড় ধোয়া হতো, তেমনি ছেলে-মেয়েদের চুলও ধোয়া চলতো।

১৯৩৭ গোল্লা সাবান, ছবি- সংগৃহীত

৬৩ বছর বয়সী শাহানা রহমান থাকেন চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকায়। একসময় দীঘল কালো মসৃণ চুল ছিল তার। তিনিও জানান একই কথা। যে সাবানে চুল ধুতেন, সে সাবানেই শরীর আর সে সাবানেই কাপড় ধুতেন তার মা। তিনি বলেন, 'ছোটোবেলায় আমি মোটামোটি দু ধরনের সাবানের সাথে পরিচিত ছিলাম। একটা ১৯৩৭ গোল্লা সাবান, যা দিয়ে আমার চুল, গোসল আবার কাপড়ও ধোয়া হতো। আরেকটা ছিল কস্কো সাবান। যেটা একটু বড় হওয়ার পর ব্যবহার করি।'

১৯৩৭ গোল্লা সাবান একসময় চট্টগ্রামে খুব বিখ্যাত ছিল। বিশাল ভারী গোল সাবানটিকে দোকানদাররা চার ভাগ করে কেটে বিক্রি করতো। অনেকের কাছেই ছোটোবেলায় তা চাঁদের মতো মনে হতো।   

'তবে এই সাবানের সাথে সাথে তখন এক ধরনের পাতার রসও দিতাম মাথায় শ্যাম্পু হিসেবে। মায়েদের ধারণা ছিল, শ্যাম্পু দিলে চুল ঝরে যাবে,' যোগ করেন শাহানা।

এরপর ১৯৯৩ সালে বাজারে এলো অ্যারোমেটিক সাবান। সাবানটি পার্শ্ববর্তী ভারতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বাংলাদেশে তখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল লাক্স। সুগন্ধীযুক্ত এ সাবান মানুষ গোসলের সময় ব্যবহার করতো। যা একপ্রকার বিলাসীপণ্যই ছিল বলা চলে। ১৯৯৬ সালে বাজারে এলো সুগন্ধীযুক্ত কেয়া সাবান। গায়ে মাখা সুগন্ধী সাবানই তখন এক ধরনের বিলাসী পণ্য ছিল কিছু শ্রেণীর মানুষের জন্য। সেখানে কাপড় কাচা সুগন্ধী সাবান তো কল্পনাই করা যায়না।

ছবি- সংগৃহীত

সেসময় একক আধিপত্য বিস্তার করে ছিল আলমের পচা সহ কিছু গোল বল সাবান। যাতে কোনো গন্ধ থাকতো না, কেজি হিসেবে বা অর্ধেক কেটে বিক্রি করা হতো। তাই কেয়া বল সাবানের স্লোগান হলো, 'এক সাবানেই কাপড় কাচা, সেই সাবানেই গোসল'। বিজ্ঞাপন দিয়ে বোঝানো হলো, কাপড় কাচার সাবান হলেও এতে সুগন্ধ আছে, এটায় ক্ষার কম তাই গায়ে মাখা যাবে। অর্থাৎ এ সাবান কাপড়েরও ক্ষতি করবে না। পেশায় শিক্ষক ইলোরা রওশন জানান, ছোটোবেলায় তিনিও চুল আর শরীরে কসকো সাবান ব্যবহার করতেন। এখন মুখের জন্য ফেসওয়াশ, শরীরের জন্য সাবান আর চুলের জন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করেন।  

করোনা এসে সাবানের ব্যবহার বেড়ে গেছে দ্বিগুণ

আশির দশকে কসকো এলো সৌন্দর্য্যের প্রতীক হিসেবে। এরপর এলো লাইফবয়, গ্যাকোটাচ, যা মূলত সৌন্দর্য্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্যের কথা বলত। যেমন শরীরে চুলকানি কমবে গ্যাকোটাচ সাবানে। নব্বই দশকে ত্বক সুরক্ষার জন্য এলো ডেটল ও স্যাভলন সাবান। শরীর জীবাণুমুক্ত রাখবে, এই স্লোগান নিয়ে তারা এখনও ভালোভাবেই বাজারে আছে।

তবে করোনার পর বাজার পুরোপুরি দখল করে নেয় লিকুইড সাবান। সৌন্দর্য্যের ধারণা থেকে বেরিয়ে সাবান আবার পরিস্কারক দ্রব্য হিসেবেই ব্যবহৃত হতে থাকলো করোনাকালে। এমনকি পানি ব্যবহার না করে শুধু স্যানিটাইজার কখনোই জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু করোনার পর শুরু হয় স্যানিটাইজার, লিকুইড বা তরল সাবানের ব্যবহার। লাক্স, তিব্বত, কিউট, ডেটল, লাইফবয় এই সাবানগুলোর পাশাপাশি হাত জীবাণুমক্ত রাখতে লিকুইড সাবান এখন ঘরে ঘরেই জায়গা করে নিয়েছে।

এদেশের মানুষের হাত ধোয়ার প্রবণতা নিয়ে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে একটি জরিপ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ৬৪ হাজার ৪০০ নমুনা নিয়ে করা এ জরিপে দেখা যায়, ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তাদের সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস রয়েছে। ২০১২-১৩–তে এই হার ছিল ৫৯ শতাংশ।

একটি বহুজাতিক কোম্পানির ২০১৯ সালের জুন মাসের বাজার জরিপ অনুযায়ী, দেশে সাবান ও সমজাতীয় পণ্যের বাজারের আকার ৭৭ হাজার ৩৮২ টন, যা টাকার অঙ্কে ২ হাজার ৬৭১ কোটি। বার্ষিক বিক্রির প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশের মতো। মার্চের হিসাবে, বিক্রির পরিমাণ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি (প্রথম আলো, ২০২০)।

বাংলাদেশে বিউটিসোপের বাজার এক দশকের মধ্যে চারগুণ বেড়েছে এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি সাবান দেশীয় চাহিদার ৮০ শতাংশেরও বেশি মেটাতে সক্ষম। বাকি ২০ শতাংশের চাহিদা মেটাচ্ছে আমদানিকৃত সাবান। ২০২১ সালের একটি দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোসল এবং কাপড় ধোয়া উভয় কাজেই বাংলাদেশের সাবানের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০,০০০ মেট্রিক টন এবং মাত্র সাতটি কোম্পানি বিউটি সোপের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।  

ফ্যামিলি সোপ

আগেরদিনের মানুষরা সাবান ব্যবহার সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না। বিশেষ করে গরিব এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরা কখনোই কসকো বা লাক্সের মতো সাবান ব্যবহার করার কথা চিন্তাও করতে পারত না। সাবানও তখন এত ভুরিভুরি ছিল না। পরিবারের সবার জন্য থাকতো একটিমাত্র সাবান। তখন একটা সাবানেই একটা গোটা পরিবারের অন্তত পনেরো দিন চলে যেত। কোন সাবান কতটা সাশ্রয়ী, সেই মাপকাঠি মেনে চলত প্রত্যেকটা মধ্যবিত্ত পরিবার। কোনো নতুন সাবান আসলেই সেই সাবানের ব্র্যান্ড আর বিজ্ঞাপন নিয়ে লেগে যেত মাতামাতি। সে সাবান কবে বাজার থেকে বাসায় আসবে, কে আগে গায়ে মাখবে সে নিয়ে চলতো ভাইবোনদের মাঝে কাড়াকাড়ি।

সাবানের বদলে এখন জায়গা করে নিয়েছে বাজারের নামীদামী বিভিন্ন বিদেশী বডি ওয়াশ, ছবি- সংগৃহীত

ঈদ উপলক্ষে নতুন সুগন্ধী সাবানের মোড়ক খোলা হতো। স্নানঘর ভরে যেত সুগন্ধে। সেই ছোট্ট এক টুকরা নতুন সাবান দিয়ে গোসল করে বাড়ির ছেলেরা যেত নামাজ পড়তে। সে কি আনন্দ! নতুন সাবান দিয়ে ঈদের সকালে গোসল করার এই রেওয়াজ এখনও আছে একেবারে গ্রামাঞ্চলে।

সাবান নিয়ে স্বয়ং কবি শামসুর রাহমানও লিখেছেন কবিতা-

পাড়ার দোকান থেকে একটি সাবান কিনে এনে
রেখে দিল নিজের দেরাজে,
মোড়োকের ভাঁজ খুলে প্রায়শই ঘ্রাণ নেয়,
আবার গচ্ছিত রাখে স্মিত হেসে যথাস্থানে,
সেই ঘ্রাণ তাকে ন্যালাক্ষ্যাপা করে বারংবার,
নিয়ে যায় সময়ের অন্য পাড়ে।
কার গায়ে এরকম ঘ্রাণ ছিল?

এত এত জিনিস ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা আদৌ কি আছে?

সাবান নিয়ে এই অধীরতা আজ আর নেই। এককালে যা বাঙ্গালী নরনারীর কাছে সৌন্দর্য্য আর সুগন্ধীর বার্তা নিয়ে এসেছিল, আজ তা কেবলই নিত্যপ্রয়োজনীয় এক পণ্য। তার ওপর বেড়েছে চাহিদা। আগে যে প্রজন্ম এক সাবান দিয়েই গোসল আর কাপড় ধোয়া সারত, তার পরের প্রজন্মের কাছেই রূপকথার গল্পের মতো। কারণ এখন চুল, মুখ, হাত পা সবকিছুর জন্য আলাদা ফেসওয়াশ, বডিশাওয়ার বা শাওয়ার জেল আছে। আবার চুলের জন্য আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার মাস্ক কত কি...

রাজধানীর হলিক্রস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন নিজের মেয়েকে দিতে আসেন সাবরিনা সুলতানা। প্রায় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বয়সেও হাঁটুসমান লম্বা কালো ঘন চুলের জন্য প্রায়ই মানুষের প্রশংসা কুড়ান তিনি। চুলের যত্ন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের মা তো আমাদের বোনদের মাথায় কখনো শ্যাম্পু দিত না। হুইল সাবান ঘষতো। এখন তো কত কি দেয়, তাও চুল পাতলা, লম্বা হতে চায়না।'  

সাবরিনার মতো আগের প্রজন্মের অনেককেই বলতে শোনা যায়, এই যে বাজারে এত এত জিনিস, এক চুলের জন্যই কত কি, মুখের জন্য, হাত পায়ের জন্য সবকিছুর জন্য আলাদা আলাদা জিনিস আছে। আদৌ কি প্রয়োজনীয়তা আছে এত এত জিনিস ব্যবহারের?

এ নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগবিশেষজ্ঞ সিল্ভিয়া চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, আমাদের শরীরের সবচেয়ে পাতলা এবং সংবেদনশীল অঙ্গ হলো মুখ। আমরা যে সাবান দিয়ে থালাবাসন বা কাপড় ধুই সে সাবান দিয়ে তো মুখ বা শরীর ধুতে পারব না। মুখের জন্য আবার যে সাবান ইউজ করছি, সেটি শরীরের জন্য পুরোপুরি ঠিক হবেনা। কারণ মুখের জন্য মাইল্ড সোপটি হয়তো শরীরের জন্য কাজ করবেনা। যেমন, আমরা এখনও অনেককেই কসকো সাবান ব্যবহার করতে বলি একজিমার সমস্যার জন্য। কিন্তু মুখের জন্য বলিনা।'

'তাছাড়া এখন গবেষণা বাড়ছে, মানুষ জানতে পারছে কোথায় কোন জিনিস ব্যবহার করতে হবে। আগে মানুষ এত সচেতন ছিল না, এত গবেষণাও ছিল না, ফলে একটি জিনিস দিয়েই চালাত। তাছাড়া নিত্যনতুন আইটেম বেরোচ্ছে, আজ যেটা ভালো বের হচ্ছে, কাল তার চেয়েও ভালো গবেষণালব্ধ কোনো প্রডাক্ট বেরোচ্ছে। সুতরাং যৌক্তিকতা আছেই।'

তবে তিনি এ-ও জানান, এতসব পণ্য থাকায় মানুষ না বুঝেশুনেই এসব পণ্য ব্যবহার করছে। ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী ইন্টারনেট ঘেঁটে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পণ্য বাছাই করলে এ ধরনের সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।  

 

 

Related Topics

টপ নিউজ

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সাবান / সাবান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জোরপূর্বক অপুকে দিয়ে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির ভিডিও বানিয়েছেন ইশরাক, সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর
  • রাস্তায় হাঁটছিলেন নরওয়ের অর্থমন্ত্রী, আচমকা ফোন করে নোবেল ‘দাবি করে বসেন’ ট্রাম্প
  • সেপ্টেম্বর নয়, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি
  • রোনালদো-জর্জিনার বাগদান ঘিরে সৌদি আরবে সমালোচনা-হাসিঠাট্টা, কেন?
  • সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ

Related News

  • করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ
  • ১৯৩৭ গোল্লা সাবান যেভাবে চট্টগ্রামের সেরা!
  • হোটেলের ব্যবহৃত সাবান ও শ্যাম্পুগুলো যাচ্ছে কোথায়?
  • এক সাবানের দাম আড়াই লাখ টাকা, রয়েছে স্বর্ণ ও হীরার গুঁড়ো!

Most Read

1
বাংলাদেশ

জোরপূর্বক অপুকে দিয়ে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির ভিডিও বানিয়েছেন ইশরাক, সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

2
আন্তর্জাতিক

রাস্তায় হাঁটছিলেন নরওয়ের অর্থমন্ত্রী, আচমকা ফোন করে নোবেল ‘দাবি করে বসেন’ ট্রাম্প

3
বাংলাদেশ

সেপ্টেম্বর নয়, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি

4
খেলা

রোনালদো-জর্জিনার বাগদান ঘিরে সৌদি আরবে সমালোচনা-হাসিঠাট্টা, কেন?

5
বাংলাদেশ

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা বেড়ে দ্বিগুণ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net