বিলিয়নিয়াররা তাদের টাকা কোথায় রাখেন?

শত কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশি বিত্তের অধিকারীরা– বিলিয়নিয়ার হিসেবে খ্যাত। তারা এই সম্পদ শুধু অর্জনই করেননি, বরং অতিবাহিত সময়ের সাথে সাথে আরও বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। তার মানে–তাদের অধিকাংশই বিনিয়োগে সাফল্য পেয়েছেন বা এমনভাবে অর্থ রেখেছেন যাতে তা আরও বাড়ে।
অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাদের সম্পদ সরাসরি নিজরা ব্যবস্থাপনা করেন না, বিভিন্ন খাতে সম্পদ নিয়োজিত রাখতে তারা আর্থিক উপদেষ্টাদের সাহায্য নেন।
এভাবে অর্থবৃদ্ধির জন্য বিলিয়নিয়াররা সচরাচর যেসব বিনিয়োগ করেন- তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করেছে আর্থিক গণমাধ্যম- মার্কেটস টুডে। টিবিএসের পাঠকের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো–
১. নগদ অর্থ ও এর সমতুল্য মাধ্যমে
বিলিয়নিয়াররা নগদ অর্থ বা তার সমতুল্য (সহজে বিনিময়যোগ্য) মাধ্যমে সব সময়েই তাদের সম্পদের একটি অংশ সংরক্ষণ করেন। কারণ, নগদ হলো- তরল সম্পদ, অর্থাৎ প্রয়োজনে এটিকে কাজে লাগানো যায়। ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত কোনো জরুরি দরকারের সময়ে বা সংকটকালে- নগদ অর্থ তা ভালোভাবে সামলানোর সুযোগ করে দেয়।
তবে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে নগদে বেশি সম্পদ রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মূল্যস্ফীতিতে নগদ টাকার মান কমে যাচ্ছে, তাই শীর্ষ ধনীরাও এই মুহূর্তে নগদ অর্থ কম রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
২. পণ্য ও কাঁচামাল
কাঁচামাল, নিত্যপণ্য ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ– অতিধনীদের সম্পদ রক্ষার আরেকটি কৌশল। এতে সম্পদের ওপর মূল্যস্ফীতি ও অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতির ঝুঁকি অনেকটাই কমে। যেমন আর্থিক বাজার মূল্যস্ফীতির কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে; এসময় নিত্যপণ্যের দাম চড়া থাকে। আর তাই এখাতে বিনিয়োগ একটি চতুর কৌশল। তাছাড়া, নিত্যপণ্য ও কাঁচামালের ওপর সার্বিক অর্থনীতি ও জনসাধারণ নির্ভরশীল, তাই এসবের চাহিদা সহজে কমে না।
একারণেই নিজ এজেন্টদের মাধ্যমে শিল্পকাজে দরকারি মূল্যবান ধাতু, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং সয়াবিন, কফি এবং মাংসের মতো বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ কেনাবেচা করে থাকেন বিলিয়নিয়াররা।
৩. বৈদেশিক মুদ্রা
বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তাদের মুদ্রার মানও ওঠানামা করে। বিনিময় দরের এই ওঠানামা থেকে লাভ করতে চান বিলিয়নিয়ারর। ফলে তারা যেকোনো এক দেশের মুদ্রায় সম্পদ না রেখে, বিভিন্ন সম্ভাবনাময় দেশের মুদ্রা কিনে রাখেন। এছাড়া, অন্যান্য মুদ্রা-নির্ভর সম্পদেও (যেমন বন্ডে) বিনিয়োগ করেন তারা। এতে কোনো একটি বৈদেশিক মুদ্রার দাম কমলেও, অন্য মুদ্রার শক্তিশালী অবস্থান লোকসানের ঝুঁকি কমায়। এতে অনেকসময় সম্পদমূল্যও বাড়ে।
৪. সিকিউরিটিজ
এটি তাদের বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় খাত। আসলে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ হলো- আর্থিক বিনিয়োগের উপকরণ। এটি কেনাবেচা করেও লাভবান হওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজের মধ্যে রয়েছে বন্ড, পুঁজিবাজারে কেনা শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ ইত্যাদি।
বিনিয়োগ পোর্টফলিও'র অপরিহার্য অংশ- পুঁজিবাজার ও বিভিন্ন ফান্ডের বিনিয়োগকৃত অংশ। বিলিয়নিয়ারদের অর্থ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উৎস এটি। তারা এই বিনিয়োগ সাধারণত দীর্ঘদিন ধরে রাখেন এবং সঠিক মুহূর্তে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ, এটি তাদের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের খাত এবং আর্থিক বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি লাভেরও উৎস।