Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

পুতুলনাটকের হারানো ঐতিহ্য যেভাবে প্রাণ পেল

গড়ন, আকৃতি এবং উপস্থাপনের ধরনে পুতুল ও পুতুলনাট্যকে শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলা হলেও এর দর্শক কিন্তু ছোট-বড় সবাই। সব বয়সী মানুষ পুতুল নাটক উপভোগ করেন।
পুতুলনাটকের হারানো ঐতিহ্য যেভাবে প্রাণ পেল

ফিচার

প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক
25 July, 2022, 08:45 pm
Last modified: 25 July, 2022, 08:58 pm

Related News

  • পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি: শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পুতুলনাটকের হারানো ঐতিহ্য যেভাবে প্রাণ পেল

গড়ন, আকৃতি এবং উপস্থাপনের ধরনে পুতুল ও পুতুলনাট্যকে শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলা হলেও এর দর্শক কিন্তু ছোট-বড় সবাই। সব বয়সী মানুষ পুতুল নাটক উপভোগ করেন।
প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক
25 July, 2022, 08:45 pm
Last modified: 25 July, 2022, 08:58 pm

ছয় বছরের ছোট্ট রাকিব, ইউটিউবে বসে কিছু একটা দেখতে দেখতে যেন হেসেই গড়িয়ে পড়ছিল। কী দেখছে এত আগ্রহ নিয়ে তা দেখতেই বসে গেলাম মোবাইলের সামনে। দেখি শিশুতোষ বেসরকারি টেলিভিশন দুরন্ত টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্যের ধাঁচে নির্মিত 'খাট্টা মিঠা'র একটি পর্ব। দুই পুতুল, একজনের নাম খাট্টা আরেকজনের নাম মিঠা। দুইজন দুই ধরনের মানুষ- তাদের নিয়েই এগিয়েছে কাহিনি। দেখতে বসে আমিও বেশ মজা পেলাম। রাকিবের আনন্দের কারণও স্পষ্ট হলো। মানতে হলো, কাহিনির সঙ্গে দারুণ জমেছে আকর্ষণীয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর পরিবেশনা।

রাকিব কীভাবে এই সিরিজে মজল সেই গল্প শুনলাম ওর বাবা-মার কাছে, মোবাইলে ছেলের জন্য জুতসই কনটেন্ট খুঁজতে গিয়ে এই সিরিজের খোঁজ পান রাকিবের বাবা-মা। ইউটিউবে খাট্টা মিঠা'র একটি পর্ব দেখে রাকিবের মা-বাবা নিশ্চিন্ত হন বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা এ অনুষ্ঠান ছেলেকে তারা নিশ্চিন্তে দেখতে দিতে পারেন। এদিকে ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাটক দেখার পর ছেলেও খুব খুশি।

এর আগে স্কুল থেকে ফেরার পর রাকিবের সকাল, দুপুর, এমনকি বিকেল কাটত টেলিভিশন আর মোবাইল নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। সেখান থেকে খাট্টা মিঠা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা হয়ে এল রাকিবের বাবা-মার কাছে। ছেলে তাদের খাট্টা মিঠা যেমন আনন্দ দিয়ে উপভোগ করছে, তেমনি এখান থেকে শিখছেও অনেক কিছু। দুটো চরিত্রের ব্যক্তিত্ব দুরকমের। খাট্টা খানিকটা দুষ্টু প্রকৃতির, নেতিবাচক চরিত্র। বিপরীতে মিঠা সহজ, বন্ধুসুলভ ও ইতিবাচক একজন। এ দুজনের গল্পের মধ্য দিয়েই জীবনের ভালোমন্দ, সততা, অনিষ্টকর প্রবণতা ইত্যাদি গল্পের ছলে জানতে পারছে শিশুরা।

নানা ও নাতি। ছবি: নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

স্বভাবতই খাট্টা মিঠার মতো চমৎকার একটি পুতুলনির্ভর নাটকের ধারণা কোত্থেকে এল বা এর পেছনে কারা রয়েছেন জানার কৌতূহল হলো। এর আগে ‍মুস্তাফা মনোয়ারের পাপেট শো আমরা বিটিভির সৌজন্যে দেখেছি। এখনও সিসিমপুর প্রচারিত হয় বিটিভিতে, শিশুদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ইকরি, হালুম, টুকটুকির মতো মিষ্টি পাপেটগুলো। বিভিন্ন মজার মজার সব কাণ্ডের মাধ্যমে সিসিমপুরে গল্পের ছলে শিশুদের শেখানো হয় অনেককিছু।

একটু অনুসন্ধানের পর জানা গেল খাট্টা মিঠার পেছনে আছে বাংলাদেশের পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এর ঠিকানা। আর এই কেন্দ্রটির নেপথ্য কারিগর হলেন পুতুলনাট্য গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রশীদ হারুন। খাট্টা মিঠার সুতা আসলে তার হাতেই, তিনিই নাড়ছেন এর কলকাঠি।

একদিন গিয়ে হাজির হলাম আলটপকা। গবেষণা কেন্দ্র বললে কেমন একটা কোনো গম্ভীর জায়গার কথা মনে হয় শুরুতেই। কিন্তু পুতুলনাট্য গবেষণা কেন্দ্র সেরকম কোনো গবেষণাকেন্দ্র নয়! কেন নয় সেটাও বিস্ময়ের।

মাঝারি আকৃতির একটি ঘর, ভেতরে বসে বসে কিছু একটা করছেন একজন লোক। নাম জানালেন আমিনুল ইসলাম, এই গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রেই কাজ করেন ভদ্রলোক। ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখি: কালো, শক্ত, রাবারের খণ্ড কেটে কেটে আমিনুল ইসলাম কি যেন বানাচ্ছেন! কী বানাচ্ছেন? বিস্ময়কর জবাব হলো: পুতুলের কান বানাচ্ছেন তিনি! সামনে এরই মধ্যে ২০ কি ২৫টি কান বানিয়ে ফেলেছেন। আরও বানাবেন। এতো কান দিয়ে কি হবে!

জিজ্ঞেস করতে জবাব মিলল, এখান থেকে সবচেয়ে নিখুঁত কানগুলোই শুধু ব্যবহার করা হবে পুতুলে। ঘরটিতে প্রায় ২০০টির মতো সুতার পুতুল রয়েছে। ওই সুতা দিয়েই পুতুলগুলোকে ওপর থেকে পরিচালনা করা হয়।

টুনটুনী ও নাককাটা রাজা। ছবি: নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সুতার তৈরি এই পুতুল বা পুতুলের খেলা দেখানো নতুন কিছু নয়। পুতুল নাচের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। বাংলাদেশে তিন-চার ধরনের পুতুলনাট্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এখন কেবল টিকে আছে সুতা পুতুলনাট্য। তবে এর সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে আধুনিক পাপেট। সুতা ছাড়াও এসব পাপেট লাঠি বা হাতে চালানো হয়। সুতা পুতুল তৈরিতে নানা উপদান ব্যবহার করা হয়। মাটি, কাঠ, শোলা (উলুখাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ), তুলা, কাগজ, কাগজের মণ্ড, কাপড়, থার্মকল, ফোম, অলংকার, পোশাক ইত্যাদি রয়েছে এ তালিকায়।

পুতুল চরিত্র অনুযায়ী প্রস্তুত হওয়ার পর সুতায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। ডানদিকে বেশ কয়েকটি শেলফে দেখা মিলল নানা চেহারার পুতুল, তবে এসব পুতুলের ভিড়ে অসম্পূর্ণ পুতুলও আছে। আমিনুলের কাছ থেকে জানা গেলম, এগুলোর কোনোটার নাক-মুখ-চোখ বসেনি, কিংবা অন্য কোনো কাজ বাকি।

এই আমিনুলের গবেষণাকেন্দ্রে জুটে যাওয়ার কাহিনিও আছে। এখানে তিনি এসেছিলেন মূলত খাট্টা মিঠার শুটিং দেখতে, সেই যে এলেন খাট্টা মিঠাকে ছেড়ে আর যাওয়া হলো না তার। কীভাবে যেন জড়িয়ে গেলেন এই কেন্দ্রর সঙ্গে, পুতুল বানানোর কাজের সঙ্গে। এখন পুতুল বানানো থেকে শুরু করে পুতুল চালানো, পুতুলের হয়ে গলা মেলানো- সবই করেন প্রয়োজনে।

আমিনুলের সঙ্গে আলাপ চললো বেশ কতক্ষণ। আরও কিছুক্ষণ পরে সাক্ষাৎ পাওয়া গেল ড. রশীদ হারুনের।

ড. হারুন রশীদ। ছবি: প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক

এই ঘরে থাকে কারা!

এই ঘর হলো বাঘ, হাতি, ঘোড়া, ভাল্লুকের। মানুষও আছে। তবে সবার নির্বিঘ্ন সহাবস্থান এখানে। মারামারি বাধানোর কোনো সুযোগ নেই এদের। চারদিকে ঘুরে দেখতে দেখতে এদের ভিড়ে আমি খুঁজে পেলাম কুঁজো বুড়ি, মস্ত বড় নাকওয়ালা বুড়ি, টুনটুনি, ব্যাঙ, ব্যাঙ খাওয়া রাজা ভূত, ডানাওয়ালা লাল-নীল পরী, পুলিশ, পেয়াদা। এর মধ্যে অপাংক্তেয়র মতো কজন স্কুলের বাচ্চাকেও পাওয়া গেল।

কিন্তু খাট্টা মিঠা কোথায়?

খাট্টা আর মিঠা না থাকলে কী করে হয়! আমার চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে তাদেরকে। কিন্তু কোথাও দেখা গেল না ওই দুইজনকে। ড. হারুনকে জানাতেই তিনি উদ্ধার করলেন এ রহস্য থেকে। পলিথিনে জড়ানো খাট্টা মিঠাকে বের করে আনলেন অন্য শেলফ থেকে।

কীভাবে তৈরি হয় সুতার পুতুল!

পুতুল বানানোর জন্য আলাদা করে কোনো উপকরণ নেই। মাটি, মণ্ড, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক, ককশিট এসব কিছুই পুতুল তৈরি উপকরণ। ড. হারুন জানালেন, কেউ চাইলে কেবল ফেলে দেওয়া কোনো বোতল দিয়েও চোখ, নাক, মুখ বানিয়ে পুতুল তৈরি হতে পারে।

ড. হারুন তার চারপাশ থেকে পুতুল তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করেন, 'রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ময়লার স্তুপ থেকেও আমি ফোম, ককশিট বেছে নিয়ে আসি। এমনকি ফ্রিজ, টিভি কেনার পর ফেলে দেওয়া কার্টনও কাজে লাগে পুতুল তৈরিতে।'

বিভিন্ন প্রকারের পুতুল। ছবি: নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

কোনো পুতুল তৈরি হয় দুই থেকে তিন দিনে, আবার কোনোটায় লাগে আট-দশদিন বা তারও বেশি। ঘরে সাজানো পুতু্লগুলোর মধ্যে হঠাৎ চোখ আটকে গেল কয়েকটি পুতুলের ওপর। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ড. হারুন বুঝতে পারলেন, তিনি এগিয়ে একটা পুতুল হাতে নিয়ে বললেন, 'বঙ্গবন্ধু। ছোটবেলা থেকে শুরু করে পূর্ণবয়স পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে বানাচ্ছি। কাজ শেষ হয় নাই। মহামারি করোনাভাইরাস আসার আগে শুরু করেছিলাম।'

'একটা পুতুল তৈরি মানে পুরো একটি কাঠামো-অবয়ব তৈরি করা। মানুষের ক্ষেত্রে ছবি আঁকার যে মাপ, যে গঠনগত অনুপাত, এখানেও সে অনুপাত অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ শরীরের কোন অংশটার কত মাপ হবে সেগুলো নিয়ে কাজ করি আমরা। আমাদের এই পুতুল বা পাপেটগুলো একেকটা ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চির কাছাকাছি। বেশি বড়ও না বেশি ছোটও না, অনেকটা দেড় থেকে আড়াই বছরের শিশুর মত,' ব্যাখ্যা করেন ড, হারুন।

পুতুল বানানোর সময় চোখ, নাক, মুখগুলো যেন মানুষ ভালোভাবে দেখতে পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় বলে জানালেন তিনি। নাক, কান, হাত-পাসহ শরীরের প্রত্যেকটি অংশই আলাদা আলাদা করে বানানো হয়, 'এরপর নাড়ানো যায়, সেভাবে জোড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় সুতার সঙ্গে যুক্ত হয়।'

পুতুলগুলো দেখতে যেমন

শিশুদের জন্য দোকান থেকে যেসব পুতুল কেনা হয়, সেগুলো দেখতে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মতো নয়। এদের নাকমুখ, সর্বোপরি চেহারা বিদেশি। প্রখ্যাত নাট্যকার সেলিম আল দীন ব্যাপারটা খেয়াল করে বলেছিলেন, আমাদের পুতুল হবে আমাদের মতো। পুতুলগুলো দেখেই যেন মনে হয়, এটা আমার বা আমাদের দেশের। পুতুল বানানোর সময় এ বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে পুতুলনাট্যের দর্শক। ছবি: নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ড. হারুন বললেন, 'আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ ও প্রাণীসমূহের নিজস্ব ধরন আছে। আমাদের শো দেখে, পুতুলগুলোর আদল দেখে যেন মনে হয় এগুলো আমাদের দেশের। তাই জোর থাকে পুতুলের চেহারা ও পোশাকের ওপর। এগুলো দেখে যেন বোঝা যায় এরা আমাদের বাংলাদেশের পুতুল।'

গল্প বাছাই

পুতুল নাটকের জন্য গল্প আসে চিরায়ত ঈশপ, পঞ্চতন্ত্র, বাঙ্গালীর হাসির গল্প, আরব্য রজনী কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত কোনো গল্প থেকেও। শুধু সাদামাটা কোনো কাহিনি নয়। গল্প বাছাইয়ে শিশুদের আনন্দের পাশাপাশি তারা যেন কিছু শিখতে পারে সেদিকটাও মাথায় রাখা হয়।

এ কারণে মুহুর্মুহু করতালি আর উপচে পড়া দর্শকদের হাসিমুখ পুতুলনাট্যে স্বাভাবিক বিষয়। হাস্যরসাত্মকভাবে সমাজের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরা যেন পুতুলনাট্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আকর্ষণীয় পোশাক ও প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় সেই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির মন জয় করে নিয়েছে এ ঐতিহ্যবাহী সুতাপুতুল।

গড়ন, আকৃতি এবং উপস্থাপনের ধরনে পুতুল ও পুতুলনাট্যকে শিশুদের জন্য উপযোগী করে তোলা হলেও এর দর্শক কিন্তু ছোট-বড় সবাই। সব বয়সী মানুষ পুতুল নাটক উপভোগ করেন।

ড. হারুন দর্শকদের কথা বলতে গিয়ে মজার কথা বললেন, 'শিশুখাদ্য বড়রাও খেতে পারে, কিন্তু শিশুরা সবসময় বড়দের খাবার খেতে পারে না। পুতুলনাটক শিশুদের বলা হলেও, শিশুরা অভিভাবক ছাড়া কোথাও একা যেতে পারে না, তাই শিশু ও অভিভাবক সবাই আমাদের দর্শক। অভিভাবক যদি নিজেই মজা না পায় তাহলে তো তার সন্তানকে আনতে আগ্রহী হবে না। এ ব্যাপারটি সবসময় মাথায় থাকে।'

খাট্টা মিঠার নেপথ্যে ছিলেন ড. হারুন। ছবি: প্রত্যাশা প্রমিতি সিদ্দিক

তিনি আরও জানান, 'এ কারণে গল্পের বিষয়ের মধ্যে একটা উদ্দেশ্য তো থাকেই; কখনও নৈতিক, কখনও সামাজিক, কখনও পরিবেশ সচেতনতা, কখনও শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য নানারকম কৌশল করি। এরসঙ্গে পরিবেশনার সময় পুতুলের অঙ্গভঙ্গি দেখেই শিশুরা মজা পায়। কিন্তু মূল বিষয়টি অভিভাবকদের থলিতে যায় বলে আমি মনে করি। নৈতিকভাবে ওই বিষয়টা যদি অভিভাবকের কাছে না যায়, তাহলে তিনি তার সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে না। আমরা এক্ষেত্রে একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করি।'

পুতুলনাট্যের দর্শক যে ছোট-বড় সবাই এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দেওয়া যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে দেখানো এক পুতুলনাট্যের অনুষ্ঠানের কথা। ২০১৫ সালে ওই অনুষ্ঠানে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার দর্শক মুক্তমঞ্চে বসে পুতুলনাট্য দেখেছিলেন। পুতুলদের কাণ্ডকারখানায় দর্শক কখনও হাসিতে ফেটে পড়ছেন, কখনওবা তাদের চোখ হয়েছিল ছলছল। দর্শকদের এই একাত্ম হওয়া আয়োজকদের জন্য ছিল দারুণ উৎসাহব্যঞ্জক। সেদিনের কথা স্মরণ করে ড. হারুন বলেন, 'দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া দেখেছি, তা আমাদের আরও বেশি কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।'

পুতুলনাট্য গবেষণা কেন্দ্র

ড. হারুনের পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশে পুতুলনাচ বিষয়াঙ্গিক। সেটা ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের কথা। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন মূলত এ বিষয়ে তাকে আগ্রহী করে তোলেন। গবেষণায় নেমে তিনি দেখতে পান, দেশে ৫০টির মতো পুতুল নাচের দল আছে সাকুল্যে। দলগুলোর নাম সংগ্রহ করা হলো। ৫০টির মধ্যে তখন সচল ছিল বা নিয়মিত অনুষ্ঠান করত এরকম দল ১০-১২টির বেশি না।

তবে এদের অবস্থাও খুবই তথৈবচ। তাদের নিজেদের কোনো গল্প নেই। বেশিরভাগ দলই তখন চলা বিভিন্ন সিনেমা থেকে গল্প, গান নিয়ে পুতুল নাচায়। তবে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে ড. হারুন যেন রত্ন খুঁজে পেলেন। ভানুমতির বিয়ে, ধানকাটা, কৃষক লাঙল দিতে যাচ্ছে, মাছ ধরার মতো ছোট ছোট চমৎকার স্ক্রিপ্ট খুঁজে পাওয়া গেল এ অঞ্চলে। এদের কারও কারও গল্পে পাওয়া গেল পৌরাণিক কাহিনীর উপাদানও।

পরে ২০০৭ সালে ঢাকায় আরেকটি ঘটনা ঘটল। শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগে তখন কর্মরত ছিলেন গোলাম সারোয়ার। তাঁর সহযোগিতায় ড. হারুন প্রায় ১০টি দল নিয়ে ঢাকায় প্রথমবারের মতো তিনদিনের একটি উৎসবের আয়োজন করলেন। পরে শিল্পকলার তত্বাবধানে ১০টি দলের ৩৫ সদস্যকে নিয়ে আরেকটি কর্মশালার আয়েজন করা হয়। কর্মশালায় এসেছিলেন ভারতের সুদীপ গুপ্ত।

ছবি: নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুতুলই যখন ভরসা

পুতুলনাট্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ড. হারুন শুরুতে কোনো পুতুল পাননি। তার একমাত্র পুতুলের যোগানদাতা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি নাট্যদল। সে কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, 'আমাদের কোনো পুতুল ছিল না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাট্যদলের কিছু পুতুল ছিল, ৬০-৭০ বছরের পুরোনো পুতুল। সেগুলোই প্রতিবছর রং দিয়ে, উজ্জ্বল পোশাক পরিয়ে পরিবেশনা করতো তারা। এগুলো স্বাধীনতার আগে-পরে দেশত্যাগ করা পুতুল নাটক দেখাত এমন দলের কাছ থেকে এখানকার সহকারীরা রেখে দিয়েছিলেন। এসব পুতুল নতুন করে রং করে দেশীয় পোশাক, দেশীয় চরিত্রের আদলে নতুন রূপ দেওয়া হয়।'

তখুনি ড. হারুন তার কুঁজোবুড়ি গল্পটিকে পুতুলনাট্যে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালান। সেখানে চরিত্র হিসেবে বাঘ-ভালুক আনেন।  তাদের বানান। এরপর কাজ হয়েছে অনেক। ২০১২ সালে 'টেলস অব বাংলাদেশ' বা 'বাংলাদেশের গল্প' এই শিরোনামে ইন্দোনেশিয়ার পাপেট শোতে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া হয়। ৪৬টি দেশের ৬৩টি দল ওই আয়োজনে অংশ নেয়। বাংলাদেশ দলে ছিলেন ১২ জন, প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় দল। পরিবেশনার সময় সামনে বাদক, গায়ক আর পর্দার আড়াল থেকে পুতুল চালানো হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধাঁচে। সেবার 'বেস্ট ট্র্যাডিশনাল মিউজিক্যাল পাপেট থিয়েটার' হিসেবে পুরস্কৃত হয় বাংলাদেশের দলটি।

এরপর মুনীর চৌধুরীর 'কুপোকাত এবং টুনটুনি' ও 'নাক কাটার গল্প' ২০১৫ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হয়।

এ পর্যন্ত দেশে-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র ৯২টি প্রদর্শনী করেছে। এরমধ্যে রয়েছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠান, বঙ্গবিদ্যা সম্মেলন, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ওয়ার্ড, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রদর্শনী। পুঠিয়ায় লোক নাট্যোৎসবে ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত প্রদর্শনী করে পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র।

পুতুল নাটক নিয়ে গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে মহিলা সমিতিতে প্রায় নিয়মিত কর্মশালা হয়। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২-এ প্রাক-প্রাথমিক স্কুল ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে আনন্দময় ও অংশগ্রহণমূলক করতে গান-কবিতা, গণিত, বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রেও পুতুলের ব্যবহার শুরু হচ্ছে।

তবে খাট্টা মিঠা দিয়ে পুতুলনাট্য শিশুদের কাছে পৌঁছাতে পারলেও, নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেছে খাট্টা মিঠা অনুষ্ঠানটি।

Related Topics

টপ নিউজ

পুতুলনাট্য / সুতার পুতুল / পুতুল / পুতুলনাচ / খাট্টা মিঠা / নাটক ও নাট্যতত্ত্ব

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল
  • পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক
  • ‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 
  • ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান
  • ২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক
  • কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

Related News

  • পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি: শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

Most Read

1
অর্থনীতি

২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

2
বাংলাদেশ

পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক

3
বাংলাদেশ

‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 

4
বাংলাদেশ

ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান

5
অর্থনীতি

২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক

6
বাংলাদেশ

কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab