ঝিনাইদহের সেই ইসলামের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় ২৭ অক্টোবর

দেড় যুগ পর স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়া ঝিনাইদহের সেই ইসলাম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পাবেন কি না সে বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় জানা যাবে আগামী ২৭ অক্টোবর।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ইসলামের রিভিউ আবেদনটির শুনানিি শেষে রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
১ আগস্ট রিভিউ শুনানিতে ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এর আগে ৩১ জুলাই কারাগারে থাকা অবস্থায় মালাকে আবার বিয়ে করে স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি দেন ইসলাম। আজ শুনানিশেষে কারাগারে তাদের আবার বিয়ের বৈধতা দিয়েছেন আপিল বিভাগ ।
ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। আপিল বিভাগকে তিনি বলেন, “মালা ইসলামেরই স্ত্রী। আর মিলন যে ইসলামের সন্তান সেটা হাইকোর্টের আদেশের পর ডিএনএ রিপোর্টেও প্রমাণিত। এরই মধ্যে কারাগারে ইসলাম ও মালার বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। তাই মালা ও মিলনকে ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে ইসলামকে কারামুক্তি দেওয়া হোক।”
ঘটনার পূর্বাপর
ইসলাম মৃধা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ মৃধার ছেলে। ২০০০ সালের দিকে একই গ্রামের মেয়ে মালার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গোপনে দুজন তখন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন।। স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিয়েও করেন তারা। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি মালা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় মিলন।
সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবি নিয়ে মালা ইসলামের বাড়ি গেলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। মালার পরিবার ও স্থানীয়রা ইসলামকে বলেন যােতে তিনি মালাকে আইনগতভাবে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ইসলাম তখনও মৌলভী ডেকে দুজনের বিয়ে হওয়ার বিষয়টিসহ মিলনের পিতৃত্বওঅস্বীকার করেন।
মালার সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতি আদায় করতে ও মালাকে আইনগতভাবে স্ত্রীকে গ্রহণ করতে মিলনকে রাজি করাতে মালার পিতা ইসলামের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।আদালতেও ইসলাম মালা ও তার সন্তানকে অস্বীকার করেন। এ সময় মালার আবেদনের প্রেক্ষিতে পুত্র মিলনের ডিএনএ টেস্ট করা হলে তার পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হয়। আদালত ওই মামলায় ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আদেশ দেন।
রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে হাইকোর্টেও নিম্ন আদালতের সাজা বহাল থাকে। ইসলামের পরিবার এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগও সাজার রায় বহাল রাখেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন যাবজ্জীন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইসলাম। সেখানে শুনানি শেষে ইসলামের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে ইসলামের স্ত্রী ও সন্তান হিসেবে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি তখন বলেন, “বর্তমানে ইসলাম মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে সে নিজ বাড়িতে তুলে নিতে চায়।”
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এক আদেশে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে কারাভ্যন্তরে ইসলাম ও মালার আবারও বিয়ে পড়ানো ও কাবিন করানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে ২৯ আগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
৩১ জুলাই উচ্চ আদালতের দেওয়া শর্ত মোতাবেক ও ঝিনাইদহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কারাগারে ইসলাম ও মালার বিয়ের আয়োজন হয়। তাদের বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেওয়ার পরই ১ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। ঝিনাইদহ কারাগারে ইসলামের জামিন আদেশ পৌঁছালে সেখান থেকে তাকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়।
৯ আগস্ট যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কারাবিধি অনুযায়ী ভালো কাজের কারণে প্রাপ্ত রেয়াতসহ ১৯ বছর ১৭ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান ইসলাম মৃধা।
১ আগস্টের আদেশ মোতাবেক এ বিষয়ে অগ্রগতি জানার জন্য ২৯ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ। এ দিন শুনানি শেষে আগামী ২৭ অক্টোবর আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।