রুটিনের পুরো উল্টো চলছে: জাহানারা

সবখানেই স্থবিরতা, আগের মতো কিছুই চলছে না। করোনাভাইরাসের প্রকোপে পুরো বিশ্বই যেন এখন হোম কোয়ারেন্টিন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বের প্রায় সব দেশই লকডাউন। সঙ্কটময় এই অবস্থায় সবখানে কেবল একটি বিষয়ে মিল, ঘরবন্দি অবস্থা।
অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। অফিস-আদালতের কাজও সীমিত করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। সব জায়গার মতো খেলার মাঠেও এখন শুনশান নিরবতা।
দেশের সব ধরনের ক্রিকেট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আছে। বাধ্যতামূলক এই ছুটিতে বিশেষ কিছু করারও নেই ক্রিকেটারদের। পরিবারের সঙ্গে শুয়ে-বসে সময় কাটছে তাদের। পাশাপাশি ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন তারা। ঘরবন্দি অবস্থায় সবার জীবন যাত্রাতেই পরিবর্তন এসেছে। কোনো ক্রিকেটারেরই আগের রুটিন নেই। সব ওলট-পালট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের তারকা পেসার জাহানারা আলমের রুটিন তো পুরোপুরি উল্টে গেছে। ডানহাতি এই পেসার জানালেন, রুটিনের পুরো উল্টোভাবে সময় কাটছে তার। তবু পেশাদার ক্রিকেটার বলে ফিটনেসে নজর রাখতেই হচ্ছে। এর পাশাপাশি জাহানারা কিছু কাজ করছেন, যা আগে করার সময় পাননি।
হোম কোয়ারেন্টিনে উল্টো রুটিনে কীভাবে সময় কাটছে, সেসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়েছে জাহানারার। বাংলাদেশের হয়ে ৩৭টি ওয়ানডে ও ৭১ টি টি-টোয়েন্টি খেলা জাহানারার মুখেই শোনা যাক তার করোনাদিনের জীবন যাপনের কথা-
সত্যি বলতে কিছুই আর আগের মতো নেই। রুটিনের পুরো উল্টো চলছে। আমি সব সময়ই রুটিন বা নিয়ম মেনে চলতে পছন্দ করি। কিন্তু সেটার সম্পূর্ণ উল্টো চলছে। রুটিনমাফিক কেবল নামাজ পড়া হচ্ছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছি, এটা খুব ভালোভাবে চলছে। কোনো ওয়াক্ত বাদ যাচ্ছে না।
খেলাধুলার সময় বাদ যেত, অনুশীলনের সময় নামাজ বাদ যেত। এখন তো অনেক সময়, আর বাসায় থাকার কারণে বাদ যাচ্ছে না। আগে কোরআন পড়া বা তেলোয়াত করাটা নিয়মিত হতো না। সময় হলে মাঝেমধ্যে কোরআন তেলোয়াত করতাম। ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত করতে পারতাম না। তো কোরআন তেলোয়াত এখন রুটিনমাফিক চলছে।
পাশাপাশি পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ফিটনেসে নজর রাখতেই হচ্ছে। ফিটনেস নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। একদিন পর একদিন স্টেয়ার্স ওয়ার্ক (সিড়ির ব্যায়াম) করছি নিয়মিত। একদিন পরপর এটা করতেই হবে। কারণ আমার বাসায় জিম করার সুবিধা নেই। তো আমি চেষ্টা করছি ট্রেডমিলে দৌড়ানো এবং স্টেয়ার্স ওয়ার্ক করতে। এটা যদি আমি করতে পারি, তাহলে আমার অনেকটা কাজে দেবে।
এর বাইরে ক্রিকেটারদের অত্যাবশ্যকীয় কিছু ব্যয়াম, বোলিং ড্রিল; এসব যতুটুকু রুমের মধ্যে করা যায়, করে যাচ্ছি। এসব কিছুটা করছি যেন ফিটনেসটা নষ্ট না হয়ে যায়। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে যে ফিটনেস বাড়বে, তা নয়। এসবে কখনও ফিটনেস বাড়ে না। তবে এসব করলে ফিটনেস নষ্ট হবে না। একটা পর্যায়ে থাকবে।
ফিটনেসের কথা ভেবে এসব করার চেষ্টা করছি। কারণ বন্দি এই অবস্থায় তো আর বেশি কিছু করার নেই। বাইরে গিয়ে যে অনুশীলন করব, সেটা সুযোগ নেই। কিন্তু একটা সময় আসবে, যখন আমরা এই ভাইরাস মোকাবিলা করে সবাই নিজের পেশায় ফিরতে পারব। তখন যেন পুরনো ছন্দে ফিরতে খুব বেশি কষ্ট করতে না হয়, এ জন্য ফিটনেসের এসব কাজ করতে হচ্ছে।
আমরা যেহেতু ক্রিকেটার, ফিটনেসই সব। ফিটনেস ছাড়া দক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। আনফিট খেলোয়াড় খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলোয়াড়রা হয়তো টিকে যায় কিছুদিন। কিন্তু ফিটনেস ঠিক না রেখে লম্বা সময় টিকে থাকা খুব কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও। এ কারণে এখন আমার মূল লক্ষ্য ফিটনেসটা ধরে রাখা।
ফিটনেসের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার সম্পর্ক আছে। তাই পরিমাণ মতো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছি। এটাকে ডায়েটও বলে না, আবার বেশি খাওয়াও নয়। মাঝামাঝি একটা অবস্থা বলা যায়। যেন অসুস্থ হয়ে না পড়ি বা শক্তিহীন না থাকি, এর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।
এটা একটা ব্যাপার। আবার যদি পরিমাণের বেশি খাবার খেয়ে ফেলি, তাহলে ওই তুলনায় আমি এখন শারীরিক পরিশ্রম আমি করতে পারব না। তখন সেটা খারাপ প্রভাব ফেলবে। কারণ ফিটনেসের কাজ ওইভাবে হচ্ছে না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিমাণ মতো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছি। বেশি পানি পান করছি।
এর সঙ্গে সচেতন থাকতে হচ্ছে। এটা খুবই জরুরি। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে একদমই যাচ্ছি না। দেড় মাস হতে চললো, পুরোপুরি লকডাউন। আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পরপরই তো লকডাউন অবস্থা। দুই-একদিন হয়তো অনুশীলন করেছিলাম আমি। এরপর যখন ক্রীড়ামন্ত্রীসহ বিসিবির সভাপতি স্যার ঘোষণা করলেন যে, খেলাধুলা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, তার পরের দিন থেকে পুরোপুরি বাসায় লকডাউন।
আমার ধারণা বাসার যেসব খেলা আছে, সেসব সবাই খেলছে। আমিও ওসব খেলা খেলছি। বাসায় লুডু খেলা হয়, ক্যারম খেলা হয়। এসব বাসায় আছে। তবে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে ক্যারমের গুটি নষ্ট হয়ে গেছে, এখন ক্যারম খেলা বন্ধ। লুডু খেলা হচ্ছে। ক্রিকেট বল নিয়ে কিছু গেম আছে, আমার কাজিনের সঙ্গে ওসব খেলছি। সব মিলিয়ে এভাবেই যাচ্ছে সময়।