‘মৃত’ নন, ‘জীবিত’ মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে, ফিরতে চান রাজনীতিতে

ছয় বছর আগে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন লিবিয়ার প্রয়াত একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গাদ্দাফি। সবাই ধরে নিয়েছিল, তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেল তিনি বেঁচে আছেন এবং ফের রাজনীতিতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাইফ এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধের 'ওয়ান্টেড' তালিকায় আছেন। ২০১৫ সালে লিবিয়ার এক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তারপর থেকেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি।
কয়েক মাস আগে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির দক্ষিণ-পশ্চিমে নাফুশ অঞ্চলের জিনতান মালভূমি এলাকায় দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে সাক্ষাৎকার দেন সাইফ। সেখানে সাইফ জানান, তিনি লিবিয়াকে আবার ঐক্যবদ্ধ করতে চান।
আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিজে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়বেন কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য এড়িয়ে যান সাইফ।
তিনি বলেন, 'আমি দশ বছর ধরে লিবিয়ার জনগণ থেকে দূরে আছি। প্রত্যাবর্তন করতে হবে ধীরে ধীরে।' তিনি আরও বলেন, 'মানুষের মন নিয়ে নিয়ে একটু খেলতেও হবে।'
ক্ষমতায় থাকাকালীন বাবার কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন সাইফ। মুয়াম্মার গাদ্দাফির দমন-পীড়নের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করে সাইফ বলেন, বেশিরভাগ লিবিয়ানই এখন বুঝতে পারছে যে তৎকালীন সরকারের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, 'লিবিয়ায় যা হয়েছে, সেটাকে বিপ্লব বলা যায় না। একে আপনি গৃহযুদ্ধ বলতে পারেন।'
মুয়াম্মার গাদ্দাফির দ্বিতীয় ছেলে সাইফ ত্রিপোলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর ভিয়েনা থেকে এমবিএ করে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে পিএইচডি করেন।
গাদ্দাফির শাসনামলের শেষ সময়ে কিছুদিন তিনি উদারপন্থি হিসেবে কিছু সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় বাবার পক্ষ নেওয়ায় তার সেই সুনাম ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়।
পরে ওই বছরই গাদ্দাফি সরকারের পতন হলে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সাইফকে আটক করা হয়। জিনতান শহরে একটি মিলিশিয়া গ্রুপের হাতে বন্দি থাকেন তিনি।
বাবার মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য পরে জানানো হয় যে সাইফকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে বিদ্রোহীদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সাইফের চেহারায় বয়সের ছাপ দেখা গেছে। তার ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনী বিচ্ছিন্ন ছিল। তিনি জানান, ২০১১ সালে এক বিমান হামলায় এই দুই আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়। সাইফের পরনে ছিল আরব শেখদের মতো পোশাক। মাথায় ছিল পাগড়ি।
সাইফকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি বন্দি কিনা। জবাবে সাইফ বলেন, তিনি এখন মুক্ত এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পেতে কাজ করছেন। তিনি জানান, যে বিদ্রোহীদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তারাই এখন তার ভালো বন্ধু। তাকে গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর বিদ্রোহীরা হতাশ হয়ে পড়ে। একসময় তারা বুঝতে পারে, সাইফ তাদের শক্তিশালী মিত্র হতে পারেন।
২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আরব বসন্তের ঢেউয়ের সময় লিবিয়ার শাসক গাদ্দাফির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে 'লিবিয়ার নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য' নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট অ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ সেনারা লিবিয়ায় অভিযান চালায়। সেই অভিযানে গাদ্দাফির পতন ঘটে। দেশটির বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন তিনি।
গাদ্দাফির পতনের পর অনেকেই সাইফকে লিবিয়ার পরবর্তী শাসক ভাবলেও, তা আর হয়ে ওঠেনি। গাদ্দাফির সাত সন্তানের মধ্যে তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
সাইফ এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চাইলেও এ লড়াই তার জন্য কঠিন হবে। তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আছেন খলিফা হাফতার এবং ফাথি বাশাগা। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমর্থনপুষ্ট সেনা কর্মকর্তা খলিফা হাফতার। অন্যদিকে তুরস্কসহ অনেক পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী ফাথি বাশাগা।
গত অক্টোবরে সম্পাদিত অস্ত্রবিরতির কারণে লিবিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে এখন অনেকটাই বন্ধ আছে। কিন্তু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে পিষ্ট হচ্ছে দেশটি। তুরস্ক, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিদেশি সৈন্যে গিজগিজ করছে লিবিয়া।
লিবিয়ার বিরোধী দলগুলো আগামী ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজি হয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
- সূত্র: দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ