এবার প্রবৃদ্ধি বেশি হবে না, তবে ঘাবড়ে যাবেন না: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের নানামুখী পূর্বাভাসের মধ্যেই অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এ বছর প্রবৃদ্ধি বেশি হবে না।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত এক বই উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'এ বছর গ্রোথ [প্রবৃদ্ধি] বেশি হবে না, আগেই বলে দিলাম। তবে ঘাবড়ে যাবেন না।'
তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, 'ভাত-ডালের অভাব হবে না। জীবনধারণের জন্য মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে ব্যবস্থা সরকার করেছে। খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে দেশ।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা অনেক সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও খুব বেশি সংস্কার করে যেতে পারব না। তবে আমরা কিছু ফুটপ্রিন্ট রেখে যাব। বিশেষ করে এনবিআর-এর নীতিগত ও প্রশাসনিক পৃথকীকরণ করা হবে।'
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সময় দিচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে চলে যেতে হবে। ফলে এত বেশি সংস্কার করা যাবে না।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির বর্তমান সমস্যাগুলো উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। তবে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, যদিও অনেক কিছু দৃশ্যমান নয়।
তিনি দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'এখনো এক লাখ টাকার চেক দিলে কিছু ব্যাংক পরিশোধ করতে পারছে না। অথচ ব্যাংকগুলোকে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কর দিতে চান না। তাহলে কর বাড়াব কোথায়? গত সরকারের সময় কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মতো এত দ্রুত পৃথিবীর কোথাও ধনী হওয়া যায় না।'
তিনি জানান, এ বছর কর নীতি ও কর প্রশাসনকে পৃথক করা হবে। তবে এনবিআরের দুটি উইং এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে বিরোধে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
'তবে যাই হোক, এ বছর আইন করে এটি আলাদা করা হবে। একেবারে এবার আইন পাস করে কর নীতিকে আলাদা করে দিয়ে যাব। তারপর আমাকে গালি দেয় দিক,' বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও জানান, এনবিআর-এর নাম পরিবর্তন করার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এখনই এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।
বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলেও নীতির অভাব রয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন। 'কিন্তু তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। আমাদের এসব সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।'
এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের কৌশল হলো মসৃণ উত্তরণ।'
অর্থ পাচারকারীদের কঠোর বার্তা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'যারা অর্থ পাচার করেছে, তারা এখন বাসায় থাকতে পারেন না। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে। আমরা তাদের কঠোর বার্তা দিতে চাই।'
তিনি বলেন, 'হয়তো সব টাকা ফেরত আনা সম্ভব হবে না।'
এক আত্মীয়ের প্রসঙ্গ টেনে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমার এক আত্মীয় এখন জেলে আছেন। মেরুদণ্ড না-কি বাঁকা হয়ে গেছে।'
সংশোধিত বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই বাজেটে কিছু হবে না। তবে আগামী বাজেটে পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে বলে জানান উপদেষ্টা। কিন্তু কী পরিবর্তন আসছে, তা বিস্তারিত বলেননি তিনি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মসংস্থান খাতের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা ড. রিজওয়ানুল ইসলাম রচিত 'উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন: দৃশ্যপট আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ' বইয়ের উন্মোচন অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
এ সময় লেখক রিজওয়ানুল তার বইয়ের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ প্রি-ভালনারেবিলিটি সূচকে পিছিয়ে আছে। ভারত ও নেপালের তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকলেও ভঙ্গুরতার সূচকে পিছিয়ে পড়েছে।'
তিনি বলেন, 'শ্রেণিস্বার্থ বেশি গুরুত্ব পেলে ভুল নীতির আশঙ্কা থাকে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অভিজ্ঞতা থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে ২০২৫ সাল থেকে গড়ে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখলেও ১০ বছর সময় লাগবে। আর একই প্রবৃদ্ধি থাকলে উচ্চ আয়ের দেশে পৌঁছাতে ২০৫৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।'