পাওনা ৩৮ কোটি টাকা উদ্ধারে পোশাক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পদ্মা ব্যাংকের মামলা

কৃষি খাতে কোনো ব্যবসা না থাকলেও পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংক থেকে ৩৮ কোটি টাকা কৃষি ঋণ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক। সেই টাকা ফেরত না পাওয়ায় অবশেষে মামলা দায়ের করেছে পদ্মা ব্যাংক।
ছয় বছর আগে সালে পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) থেকে ঋণ বেয় মিরেজ এগ্রো কমপ্লেক্স। প্রতিষ্ঠানটির কেবল কাগজে-কলমেই অস্তিত্ব আছে। ছয় বছরেও পাওনা টাকা উদ্ধার করতে না পেরে গত ২৯ আগস্ট অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করেছে পদ্মা ব্যাংক।
সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, মিরেজ এগ্রোর স্বত্বাধিকারী শেখ মোহাম্মদ ডানিয়্যাল। তিনি ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ২০১৫ সালে পদ্মা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। ডানিয়্যালের কোনো কৃষি ব্যবসা নেই। তার বাবা আব্দুল মতিন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকার ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। ফিনেস অ্যাপারেলস ট্রাউজার উৎপাদন ও রপ্তানি করে।
ঋণ নেওয়ার সময় মিরাজ এগ্রোর ব্যবসায়িক ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছিল ১৭০, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম। কিন্তু গতকাল সরেজমিনে সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় গিয়ে এই ঠিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঋণ নেওয়ার পর প্রথম দিকে কিছু কিস্তি শোধ করলেও ২০১৮ সালে ঋণটি রিশিডিউল করার পর থেকে ঋণের টাকা শোধ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে ২০১৯ সালে ঋণটি আবারও মন্দ ঋণ হয়ে পড়লে রিশিডিউলের আবেদন করে মিরাজ এগ্রো। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী ডাউন পেমেন্ট না দেওয়ায় তা রিশিডিউল হয়নি বলে জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ ঋণের টাকা উদ্ধারে গত রবিবার (২৯ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে পদ্মা ব্যাংক। আদালতে দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩২ টাকা পাওনা উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় মিরাজ এগ্রোর কর্ণধার শেখ মোহাম্মদ ডানিয়্যাল, মর্টগেজর ও গ্যারান্টর হিসেবে তার পিতা আব্দুল মতিন এবং গ্যারান্টর হিসেবে তাম স্ত্রী তাসনিয়া কামরুন আনিকাকে বিবাদী করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা ব্যাংক যখন ফারমার্স ব্যাংক ছিল তখন শুরুতেই ঋণ সুবিধা নিয়েছিল মিরাজ এগ্রো। 'পদ্মা ব্যাংক হওয়ার পর আমরা যখন দায়িত্বে আসি তখন মিরাজ এগ্রোতে গিয়ে এগ্রো বেজড কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো ব্যবসা দেখতে পাইনি।
'বরং ঋণগ্রহীতার পিতা পোশাক খাতে ব্যবসা করেন। মূলত ফারমার্স ব্যাংক থাকাকালীন এক পরিচালকের প্রভাবে কৃষি খাতে কোনো ব্যবসা না থাকার পরও তারা এই খাতে সহজে ঋণ পেয়েছে। এখন আমরা ঋণটি উদ্ধারে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি।'
মিরাজ এগ্রোর কর্ণধার শেখ মোহাম্মদ ডানিয়্যাল বলেন, আমরা ফুড গ্রেন নিয়ে কাজ করি। আমরা আলু রপ্তানি করেছি। এছাড়া শিপ ব্রেকিং খাতেও ব্যবসা করি। ব্যবসায় কিছু সমস্যা হওয়ায় ব্যাংক ঋণটা পরিশোধ করা হয়নি।
'তবে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা হচ্ছে। আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে এই টাকা সমন্বয় করবো।'
এদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের সূত্র থেকে জানা গেছে, ফিনেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের কাছে ব্যাংকটি ৮ কোটি টাকা পায়। প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিল। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির কিস্তি পরিশোধের অবস্থা ভালো নয়।