চীনের ১৬ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি কি সম্পূর্ণ উত্তরণ অর্জন করেছে?

২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিস্ময়ে নাড়া দেওয়ার মতো- ১৮.৩ শতাংশ! হারে স্ফীত হয়েছে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), যার সুবাদে কোভিড প্রভাবিত প্রথম দেশ হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে তার প্রভাব মুক্ত হওয়া প্রথম অর্থনীতির স্থান দখল করে চীন।
স্থানীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করে গেল বছর প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কিন্তু, তারপরও প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি কি সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত হতে পেরেছে? প্রশ্নটির উত্তর জানতে বেশকিছু বিষয় আগে জেনে রাখা দরকার।
প্রথম প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত বড় ছিল?
গেল বছরের জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় এই বছরের একই মেয়াদে চীনের জিডিপি ৪.২৮ লাখ কোটি ইউয়ান বা সাড়ে ৬৫ হাজার কোটি ডলার সম্প্রসারিত হয়েছে। স্ফীতিটি ছিল ২০২০ সালে পোল্যান্ডের সামগ্রিক জিডিপির সমান, এমনকি তা ফরাসি বিলাসপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মন্ট হেনেসি লুই ভিটোর সমস্ত শেয়ারের মূল্যের চাইতেও দ্বিগুণ।
এই অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের চালিকাশক্তি কী?
গত বছর থেকেই চীনের ১৬ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির উত্তরণের মূল শক্তিকেন্দ্র হয়েছে উঠেছে দেশটির সুবিশাল শিল্পখাত। কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন দেশের উৎপাদন খাত যখন স্থবির- ঠিক তখনই ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে ঘরে বসে অফিস করতে দরকারি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়েছে চীন।
সঙ্কটের মেঘ কেটে যাওয়ায় চলতি বছর চীনা ভোক্তারাও তাদের নিঃসঙ্কোচ ব্যয় শুরু করেছেন। যেকারণে, এই মার্চে আগের বছরের তুলনায় খুচরা পণ্য বিক্রি ৩৪.২ শতাংশ বাড়ে। এমনকি এটা ছিল মহামারি দেখা দেওয়ার আগের বছর ২০১৯ সালের মার্চের তুলনাতেও ১২.৯ শতাংশ বেশি।
তাহলে চীনা অর্থনীতি কী কোভিড-১৯ থেকে সম্পূর্ণ উত্তরণ লাভ করেছে?
অর্থনীতির প্রধান সূচকসমূহে যেমন; শিল্পোৎপাদন, বাণিজ্য, খুচরা বিক্রিবাট্টা এবং বিনিয়োগ ইঙ্গিত দেয় যে, চীনের অর্থনীতি কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে মহামারি পূর্ব অবস্থায় ফিরেছে।
তবে তড়িঘড়ি করে সম্পূর্ণ উত্তরণ ঘোষণা করতে চায় না বেইজিং, এনিয়ে নীতি-নির্ধারকদের অবস্থান বেশ সতর্ক। তারা বলছেন, উত্তরণের ভিত্তি এখনও যথেষ্ট দৃঢ় নয়।
এরমধ্যেই স্থবিরতার কিছু লক্ষণের উদয় হয়েছে। প্রান্তিকওয়ারি হিসেব, জানুয়ারি-মার্চ মেয়াদে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের প্রান্তিকের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কম হয়। সেই তুলনায় গেল বছরের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর- ডিসেম্বর) সংশোধিত ফলাফলে ৩.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা জানানো হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশিত আরও ১.৫ শতাংশ সম্প্রসারণের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।
চীনের জিডিপি কি মার্কিন অর্থনীতিকে ছাড়িয়েছে?
১৯৪৬ সালের পর সবচেয়ে বড় সঙ্কোচন হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে, তারপরও ২১ লাখ কোটি ডলারের আকার নিয়ে এটিই বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতি যোগ করলে আকারটা আর একটু বেশিই হয়।
কিন্তু, তবুও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব বেশকিছু ক্ষেত্রে ফুটে উঠছে।
যেমন; বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোটরকার কেনে চীন, ইলেকট্রনিক যানবাহনেরও এটি প্রধান বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে শুরু করে বিলাসপণ্য বিক্রেতা বিশ্বের অধিকাংশ রিটেইলার ব্র্যান্ডের জন্য চীনই হচ্ছে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। করোনাভাইরাসে যখন বৈশ্বিক খুচরা বিক্রিতে ধস নামে তখন করোনামুক্ত চীনই হয়ে উঠেছে তাদের নির্ভরতার উৎস। আন্তর্জাতিক বিনোদন কন্টেন্টও বিকোয় দেদারছে, চীনের কারণেই হলিউডে ফ্লপ অনেক ফিল্ম দিনশেষে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।
ব্রিটিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড রিসার্চের আভাস অনুসারে, ২০২৮ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আসন দখল করবে চীন। এমন অর্জন নিয়ে ইতোপূর্বে যা অনুমান করা হয়েছিল এই সময়সীমা তার চাইতেও পাঁচ বছর কম।
- সূত্র: ইকোনমিক টাইমস/ রয়টার্স